গ্রীণ-ক্লিন-স্মার্ট সিলেট স্বপ্নপূরণে ‘আমরার সিলেট’ শিরোনামে
২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুন ২০২৩, ৬:৫১:১০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : গ্রীণ-ক্লিন-স্মার্ট সিলেট স্বপ্নপূরণে ‘আমরার সিলেট’-শিরোনামে ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। গতকাল শনিবার সিলেট নগরীর নির্ভানা ইন হোটেলে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। নিজে প্রবাসী হলেও নির্বাচিত হলে বাকি জীবন এখানে কাটাবেন বলে জানান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি নারী বান্ধব এবং বন্যা ও জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। স্মার্ট বাংলাদেশের প্রথম স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে তার পরিকল্পনার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব সিলেট গঠন
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি নির্মাণ এবং নগর পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সবুজ সিলেট গড়ে তুলতে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন করা হবে। নগর পরিকল্পনায় পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। নগরায়ন হবে পরিবেশবান্ধব। বায়ু ও শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া হবে। পাহাড়, টিলা ও জলাশয় রক্ষাসহ অকাল বন্যা থেকে সিলেট নগরকে রক্ষাকল্পে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে সিলেট নগরকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব নগরে রূপান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।
জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ
শহরকে অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ ও সুরমা নদী খননে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। শহরের অভ্যন্তরীন মালনিছড়া, যোগিনীছড়া, গোয়ালীছড়া, কালীবাড়ী ছড়া, মঙ্গলীছড়া, হলদিছড়া, ভুবিছড়া, ধোপাছড়া ও গাভীয়ার খাল নামের নয়টি ছড়া নগর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিলিত হয়েছে সুরমা নদীতে। ছড়াগুলো উদ্ধার করে নদী পর্যন্ত এর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। সিলেট শহরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য ফ্লাডওয়াল নির্মাণ, নতুন রেগুলেটর স্থাপন, ড্রেনেজ আউটলেট নির্মাণ করা হবে বলে জানান।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এলাকাভিত্তিক ময়লা সংরক্ষণ (ডাম্প) কেন্দ্র গড়ে তোলা, কাউন্সিলরদের মাধ্যমে গৃহস্থালি বর্জ্য সংগ্রহ, বর্জ্য রিসাইকেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও সারের মতো সম্পদ সৃষ্টি, আচ্ছাদিত পদ্ধতিতে বর্জ্য, যান্ত্রিক ভ্যাকুয়াম ট্রাক ক্রয় ও ব্যবহার, লোকালয় থেকে দূরে উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য সংরক্ষণের স্থান নির্ধারণ, ভোরের আগেই নগরীর বর্জ্য পরিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পিত নগরায়ন
গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু ও যানজট নিরসন, অপ্রয়োজনীয় ডিভাইডার অপসারণ, নগরের যানজট নিরসন কল্পে প্রয়োজন মতো রাস্তা প্রশস্তকরণ, আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা গঠন, ট্রাফিক মনিটরিংয়ের জন্য জনবল বৃদ্ধি, যান চলাচলের জন্য লেন বিভাজন ও পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা, রিং রোড ও ফ্লাইওভার তৈরির মাধ্যমে যানজট নিরসনের স্থায়ী সমাধানে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান তিনি।
নারী বান্ধব সিলেট নগরী
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটে নারীরা যাতে নির্বিঘেœও স্বাচ্ছ্যন্দে চলাফেরা করতে পারে-সেই লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে। নারীরা যাতে সিটি কর্পোরেশন থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা পান তার জন্য বিশেষ সেল তৈরি করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক বা একাধিক বিশেষায়িত মার্কেট নির্মাণ করা হবে। কর্মজীবী মায়েদের সুবিধার্থে আধুনিক ডে-কেয়ার সেন্টার কাম প্রি-স্কুল নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নির্বাচনী ইশতেহারে স্মার্ট নগরভবন, নিরাপদ স্বাস্থ্যকর সিলেট, দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা বিশেষ ভূমিকম্প মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবান্ধব সিলেট, ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরী, পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা, সচল সিলেট, মানবিক উন্নয়ন, প্রবাসী কল্যাণ, সম্প্রীতির সিলেট, পর্যটনের বিকাশ, সামাজিক অপরাধ নির্মূল, অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত সিলেট, নাগরিকদের মৌলিক সেবা নিশ্চিত করা, তারুণ্যের সিলেট এবং প্রযুক্তির সিলেট গঠনে তার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
সিলেটের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা রয়েছে জানিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এটাকে কাজে লাগিয়ে ‘সমৃদ্ধ সিলেট’ গড়তে চাই। প্রচলিত কসমেটিক উন্নয়ন নয় দীর্ঘমেয়াদি দূরদর্শী পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রাণের সিলেটকে পরিণত করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তার বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ শহীদ, সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকা-ে শাহাদাত বরণকারী শহীদ ও ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারের অন্ধকারে নৃশংসভাবে নিহত চার জাতীয় নেতাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সিলেট অঞ্চলের আওয়ামী রাজনীতির প্রবাদপুরুষ প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, দেওয়ান ফরিদ গাজী, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, শাহ এস এম কিবরিয়া, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সৈয়দ আবু নছর এডভোকেট, আ.ন.ম শফিকুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার হোসেন শামীম, আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, এডভোকেট লুৎফুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইনামুল হক চৌধুরী বীরপ্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আজিজুর রহমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক মায়নসহ প্রয়াত নেতাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। সিসিকের
আয়তন ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটারে উন্নীত করায় তিনি সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পার হলেও, প্রাচীন শহর সিলেটকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নজর দেয়া হয়নি। জনগণ যদি আমাকে নির্বাচিত করে, তবে প্রথমেই সিলেট নগরীর উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করব। এলক্ষ্যে সমাজের সকল পেশাজীবী ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নগরের মানুষের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যার উদ্দেশ্য হবে ‘গ্রীন-ক্লিন-স্মার্ট সিলেট’ প্রতিষ্ঠা করা।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ,১৪ দল, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ, স্বেচ্ছা- সেবকলীগ, সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।