থাকছে চার স্তরের নিরাপত্তা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুন ২০২৩, ৬:৫৯:৩৮ অপরাহ্ন
৪২ নির্বাহী, ১৪ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ প্লাটুন বিজিবি মাঠে থাকছে
কাউসার চৌধুরী :
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনকে ঘিরে পুরো নগরীকে গড়ে তোলা হচ্ছে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়। আগামীকাল সোমবার থেকে মাঠে নামছেন ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। মাঠে নিয়োজিত থাকবেন ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও। ভোটের আগের দিন থেকেই নামানো হচ্ছে ১০ প্লাটুন বিজিবি। এছাড়াও, র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল টিম এবং স্ট্রাইকিং ফোর্সও মাঠে দায়িত্ব পালন করবে ।
সিসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার ফয়সাল কাদের এ বিষয়ে সিলেটের ডাককে বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে যাতে অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা ঘটতে না পারে-এজন্যে নগরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এই লক্ষ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। র্যাব ও পুলিশের নিজস্ব মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। যদি কোনো কেন্দ্রে বা কেন্দ্রের বাইরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়-তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃংখলা বাহিনী শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে। নির্বাচনী অপরাধ কেউ করলে তাৎক্ষণিক বিচারের জন্যে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে থাকবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতায় একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। তিনি ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্যে আহবান জানান।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সিসিকের ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪২টি মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে। প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্যে থাকবে পুলিশের ১৪টি স্পেশাল স্ট্রাইকিং ফোর্স। ৪২টি ওয়ার্ডের জন্যে থাকবে র্যাবের ২২টি মোবাইল টিম। এছাড়াও র্যাব-পুলিশের সাদা পোষাকের পৃথক পৃথক বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক মাঠে মোতায়েন থাকবে। একটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ৫ জন সশস্ত্র পুলিশ ও ১২ জন আনসারসহ মোট ১৭ জন দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ভোট কেন্দ্র বিবেচনায় পুলিশ আলাদাভাবে নিরাপত্তা গ্রহণ করবে বলে রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন।
নির্বাচনে আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণে ভোট গ্রহণের আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকেই মাঠে নামছে ১০ প্লাটুন বা ৫০০ বিজিবি সদস্য। ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে বিজিবি সদস্যরা সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ৪২ ওয়ার্ডের জন্যে থাকবেন ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও নির্বাচনী অপরাধসমূহ আমলে নিয়ে তা সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার সম্পন্নের লক্ষ্যে বিচার বিভাগের ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আগামীকাল সোমবার থেকেই মাঠে নামছেন। নির্বাচনকালীন আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টানা ৫ দিন মাঠে থাকবেন তারা।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, সিসিকের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের জন্যে সিলেটের অতিরিক্ত চীফ মেট্রাপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমেন, ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের জন্যে সিলেটের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন কান্তি দাস, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের জন্যে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূইয়া, ১০ ১১ ও ১২নং ওয়ার্ডের জন্যে সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল ওয়াহাব, ১৩, ১৪ ও ১৫নং ওয়ার্ডের জন্যে সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হোসেন, ১৬, ১৭ ও ১৮নং ওয়ার্ডে সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আসমা জাহান, ১৯, ২০ ও ২১নং ওয়ার্ডের জন্যে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো জাকির হোসাইন, ২২, ২৩ ও ২৪ নং ওয়ার্ডের জন্যে হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল আলীম, ২৫, ২৬ ও ২৭নং ওয়ার্ডের জন্যে হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল ইসলাম, ২৮, ২৯ ও ৩০নং ওয়ার্ডের জন্যে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার, ৩১, ৩২ ও ৩৩ নং ওয়ার্ডের জন্যে মৌলভীবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দাউদ হাসান, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নং ওয়ার্ডের জন্যে মৌলভীবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম মিজবাহ উর রহমান; ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নং ওয়ার্ডের জন্যে সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহা হেলাল উদ্দিন এবং ৪০, ৪১ ও ৪২ নং ওয়ার্ডের জন্যে সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হালিম নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনী অপরাধ সমূহ আমলে নিয়ে তা সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার সম্পন্নের জন্যে উপরোক্ত ১৪ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ৫ দিনের জন্য প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ইসি। ভোটের আগের দুই দিন ও ভোট গ্রহণের পরের দুই দিনসহ মোট ৫ দিন নির্বাচনী কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে এর বিচার কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে করবেন তারা। কোনো অপরাধ বিচারার্থে আমলে
নিলে তৎমর্মে প্রতিবেদন ইসিতে ছক অনুযায়ী প্রেরণ করতে হবে।
এবারের সিসিক নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯০টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা ১৩৬৭টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯৫টি। এবার মোট ভোটার হলেন ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩ জন ও ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন হলেন নারী ভোটার। ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩৬৭ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮৬ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন।