বিশ্ব বাবা দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুন ২০২৩, ৭:২৮:২৭ অপরাহ্ন
![বিশ্ব বাবা দিবস বিশ্ব বাবা দিবস](https://sylheterdak.com.bd/wp-content/uploads/2023/05/editorial-768x512-2-300x200-1.jpg)
অসৎ লোক কাউকে সৎ মনে করে না, সকলকেই সে নিজের মত ভাবে। -হজরত আলী রা.
‘কাটেনা সময় যখন আর কিছুতে/বন্ধুর টেলিফোনে মন বসেনা/জানলার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা/মনে হয় বাবা যেন ডাকছে আমায়/আয় খুকু আয়’ একটি জনপ্রিয় গানের এই পংক্তিগুলোতে পরিস্ফুট হয়েছে প্রতিটি সন্তানের মনের আকুতি। ‘বাবা’ প্রতিটি সন্তানের কাছে অতি প্রিয় একটি শব্দ। সন্তানের অতি আপনজন তার বাবা। জন্মদাতা পিতা। সন্তানের সুখ দুঃখে পাশে থাকেন বাবা। কষ্ট পেলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন বাবা। বাবা-ই হচ্ছেন প্রতিটি ছেলেমেয়ের জীবন পথের পথ প্রদর্শক। বাবা একটি বটবৃক্ষ; যে সন্তানকে আগলে রাখেন গভীর মায়া মমতায়। জীবনের সকল দুর্যোগ দুর্বিপাকে ঢাল হয়ে সামনে থাকেন বাবাই। একজন আদর্শ মা’র আঁচলের ছায়াতলে যেমন একটি সন্তান আদর্শ সন্তান হয়ে গড়ে উঠতে পারে, তেমনি সন্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বাবার আদর্শই ছায়ার মতো অবস্থান করে সন্তানের সামনে। সেই বাবাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাবা দিবস।
বাবাদের জন্য একটি দিবস পালনের ইতিহাস অনেক পুরনো। জানা গেছে, বিংশ শতাব্দির প্রথমদিকে পিতৃ দিবস পালন শুরু হয়। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও পিতৃ দিবসের ধারনা আসে ১৯০৯ সালে। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯শে জুন, ১৯১০ সাল থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন। প্রথমদিকে ব্যাপকভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাবা দিবসটি পালিত হতোনা। মা দিবস নিয়ে মানুষ যতোটা উৎসাহ দেখাতো, পিতৃ দিবসে মোটেও তেমনটা দেখাতো না। বরং বাবা দিবসের বিষয়টি তাদের কাছে অনেকটা হাস্যকরই ছিলো। অবশ্য ধীরে ধীরে অবস্থা পাল্টায়। ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে পিতৃ দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন পিতৃ দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পিতৃ দিবস বা বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়। আজকের এই বাবা দিবসে দেখা দরকার বাবা-সন্তানের যে নিবিড় সম্পর্ক তা আমাদের সমাজে কতোটুকু বিদ্যমান? বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক সন্তান তাদের পিতাকে ভাবে দুর্জন। পিতার বুকফাটা তীব্র যন্ত্রনার আর্তনাদ না শোনার মত সন্তানও এই সমাজে আছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পিতা মাতা সন্তানদের মানুষ করেন। আবার সেই সন্তানরাই অনেক সময় পিতা মাতাকে অবজ্ঞা অবহেলায় ফেলে রাখেন।
অমাদের চিরাচরিত সমাজ ব্যবস্থায় বাবা-সন্তনের মধ্যে যে মমতার সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে, সেটা এক পর্যায়ে নির্মমতার কালিমা লিপ্ত হয়। এর জ্বাজ্জল্য উদাহরণ ‘বৃদ্ধাশ্রম’। কঠিন বাস্তবতার নিগঢ়ে বন্দি যখন সন্তানের বিবেক-দায়িত্ববোধ, তখনই সে নিজের স্ট্যাটাস বজায় রাখতে গিয়ে বাবাকে দিয়ে আসে বৃদ্ধাশ্রমে। আবার যে সন্তানেরা বৃদ্ধ বাবা মা কে গ্রামের বাড়িতে একাকি রেখে নিজেরা অন্যত্র বসবাস করছে, সেই বাবাদেরও কষ্ট কম নয়। বাঙ্গালীর চিরায়ত একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবারে বৃদ্ধ বাবাদের এমন করুণ ভাগ্যবিড়ম্বনার কথা চিন্তাই করা যায় না। অথচ আমরা সেই ঐতিহ্য থেকে সরে আসছি। নিজেদের বিবেককে জাগ্রত করে বাবাদের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে বাবাদের দেখানো সুশৃংখল পথটি ধরেই সন্তানেরা এগিয়ে যাক।