সিলেটে বন্যার আশঙ্কা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুন ২০২৩, ৮:১৫:০২ অপরাহ্ন
কানাইঘাটে সুরমার পানি বিপদসীমার উপরে ॥ বৃদ্ধি পাচ্ছে সব পয়েন্টে
স্টাফ রিপোর্টার: অবিরাম বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। গতকাল শনিবার বিকেলে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় এ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। অন্যসব পয়েন্টেও পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। দিন ভর আবহওয়া ছিলো বৈরী। নগরীতে অন্যদিনের তুলনায় লোক সমাগমও ছিলো কম।
বাংলাাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ কন্ট্রোল রুম থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জানানো হয়, বিকেল ৩টার দিকে কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেট পয়েন্টেও সুরমা নদীর পানি বাড়তির দিকে। গতকাল সকাল ৬টায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ৬টায় পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ৯০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। এছাড়া, কুশিয়ারা নদীর পানি আমলসীদ, শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং শেরপুর পয়েন্টেও বাড়ছে। এছাড়া, কানাইঘাটের লোভাছড়া, জৈন্তাপুরের সারিঘাট এবং কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর পানিও বাড়তির দিকে। পাউবো’র দিনের রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতি ৩ ঘণ্টা পরের পর্যবেক্ষণে সবকটা পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে বৃষ্টিপাতও অব্যাহত রয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে গতকাল বিকেল ৩টার দিকে বিপদসীমা অতিক্রম করে।
পাউবো’র বুলেটিনে বলা হয়, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এছাড়া, সিলেটে সুরমা পয়েন্টে ১০৯ মিলিমিটার, কুশিয়ারার শেওলা পয়েন্টে ১৩০ মিলিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আগামী ৪৮ ঘণ্টা সিলেটে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সমূহ আশঙ্কা রয়েছে পাহাড়ি ঢলের ।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১১৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর এদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮৮ মিলিমিটার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকালও বৈরী আবহাওয়া বিদ্যামান ছিলো সিলেটে। সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিলো। বৃষ্টি বহুল আবহাওয়ার কারণে রাস্তা-ঘাটে মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। জলাবদ্ধতায় নগরীর কয়েকটি স্থানেও লোকজনের দুর্ভোগ পোহানোর খবর পাওয়া গেছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘সিলেটে গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পূর্বাভাস রয়েছে আগামী ১৫ দিন সিলেটজুড়ে অতিবৃষ্টি হবে। এই কদিনে ১৪শ’ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই। এই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার জেলার সকল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছি। সকলের কাছ থেকে নিজ নিজ উপজেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, নদীবেষ্টিত উপজেলাগুলোর নদীতে গত কয়েকদিনে বেশ পানি বেড়েছে। কানাইঘাটে সুরমা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। জেলা প্রশাসনে পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ মজুদ রয়েছে। চাহিদামতো উপজেলাগুলোতে পাঠানো হবে। এছাড়া, বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অবস্থা বিবেচনায় দ্রুত সরিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকার জন্য সব উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।