১৩২ ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২৩, ৯:১২:০১ অপরাহ্ন
কাউসার চৌধুরী :
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ১৯০ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২ কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। তাদের ভাষায়, এসব কেন্দ্রকে বলা হয় ‘অতিগুরুত্বপূর্ণ’ ভোট কেন্দ্র। আর বাকী ৫৮ ভোট কেন্দ্রকে সাধারণ ভোট কেন্দ্র বা ঝুঁকিহীন কেন্দ্র হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ঝুকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রসহ সিসিকের ভোট গ্রহণ কার্যক্রমসহ সার্বিক পরিস্থিতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সরাসরি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হবে। আইনশৃংখলা বাহিনী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র (অতিরিক্ত উপকমিশনার) সুদীপ দাস গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, নানান দিক বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়। এরপরেই গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়। এছাড়া সকল কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। অবাধ, সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের স্বার্থে কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক তৎপর থাকবেন। পোষাকের সাথে সাথে সাদা পোষাকেও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে। ভোট গ্রহণের দিন গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্র অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তাবেষ্টনী না থাকা, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কা, যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে একটু দূরবর্তী ভোট কেন্দ্র, কেন্দ্র এলাকায় চিহ্নিত অপরাধীর আনাগোনা, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার শঙ্কাসহ নানা দিক বিবেচনা করেই একটি ভোট কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়।
সূত্র জানায়, সিসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রের একটি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের মদন মোহন কলেজ ভোট কেন্দ্রের একটি কেন্দ্রও ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আম্বরখানা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ ভোট কেন্দ্র, আম্বরখানা কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খাসদবীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, শাইনি স্টেপস (ইলেকট্রনিক সাপ্লাই রোড) ভোট কেন্দ্র, জামেয়া মদিনাতুল উলুম দারুসসালাম খাসদবীর ভোট কেন্দ্র, হাজারীভাগ এভারগ্রীণ একাডেমি ও গ্রীণ ফেয়ার কিন্ডারগার্টেন ভোট কেন্দ্র, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহ.) স্কুল এন্ড কলেজ ইলাশকান্দি ভোট কেন্দ্র, শাহপরান (রহ.) প্রি ক্যাডেট একাডেমী (চৌকিদেখী) ভোট কেন্দ্র, আনোয়ারা মতিন স্কুল এন্ড কলেজ ভোট কেন্দ্র, দি হলি চাইল্ড স্কুল এন্ড কলেজ ভোট কেন্দ্র, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পরীক্ষণ পিটি আই সংলগ্ন বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, একাডেমি ভবন প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট পিটিআই ভোট কেন্দ্র, হলি সিটি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ভোট কেন্দ্র, আব্দুল গফুর ইসলামী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ভোট কেন্দ্র, গৌছ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র ও গৌছুল উলুম জামেয়া ইসলামিয়া ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্র, সিটি মডেল স্কুল নোয়াপাড়া, বীরেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও মদন মোহন কলেজ কমার্স ফ্যাকালটি ভোট কেন্দ্র, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গাকুমার পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া স্কুল এন্ড কলেজ ভোট কেন্দ্র, কিশোরী মোহন (বালক) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
২২ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজালাল উপশহর হাইস্কুল ভোট কেন্দ্র, শাহজালাল আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, শাহজালাল উপশহর একাডেমি ভোট কেন্দ্র ও বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল ভোট কেন্দ্র, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের উমরশাহ তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, গাজী সৈয়দ বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হাদীস শাহ গাজী বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্র, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কায়েস্থরাইল উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, কায়েস্থরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, মোমিনখলা মৌর বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, খোজারখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র ও সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ভোট কেন্দ্রও ঝুঁকিপূর্ণ।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সুরমা নছিবা খাতুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, ঝালোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র ও সিলেট রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সাধুরবাজার) ভোট কেন্দ্র, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ মকন হাইস্কুল ও কলেজ ভোট কেন্দ্র, বরইকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, বরইকান্দি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্র, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের লাউয়াই ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্র, লাউয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, হাজী ইসরাইল আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র ও ধরাধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের জালালিয়া (১) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র গালিমপুর, চান্দাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, মহালক্ষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র জৈনপুর এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র ও মুক্তিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের বালুচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, সৈয়দ আরজুমন্দ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র উত্তর বালুচর, কিক ইউসেপ সোলায়মান চৌধুরী বালুচর, টেকনিক্যাল স্কুল ভোট কেন্দ্র উত্তর বালুচর ও সিলেট সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ভোট কেন্দ্রও ঝুঁকিপূর্ণ।
৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের শেখপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, রাশিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্র ও শাহ খুররম ডিগ্রি কলেজ ভোট কেন্দ্র, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আব্দুস সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র টুকেরবাজার, টুকেরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র,শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া হেলিমিয়া সুন্নিয়া (দাখিল মাদ্রাসা) ভোট কেন্দ্র তালুকদারপাড়া ও মইয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, সৈয়দা নুরুন নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, সিরাজ উদ্দিন আহমদ একাডেমি ভোট কেন্দ্র শ্রীরামপুর এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের জামেয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্র বরায়া ও শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপরোক্ত ভোট কেন্দ্রের বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের তালিকায় আরও কেন্দ্র আছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে ২ জন কর্মকর্তা ও ৪ জন কনস্টেবলসহ ৬ পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। সাধারণ কেন্দ্রে থাকবেন এক কর্মকর্তা ও ৪ কনস্টেবলসহ ৫ জন পুলিশ সদস্য। পুলিশের সাথে প্রতিটি কেন্দ্রে ১২ জন করে আনসার থাকবেন বলে রিটার্ণিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
এবারের সিসিক নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯০ টি। ভোট কক্ষ বা বুথের সংখ্যা ১ হাজার ৩৬৭ টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯৫ টি। এবার মোট ভোটার হলেন ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬০ জন ও ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন হলেন নারী ভোটার। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮৬ জন প্রার্থী সিসিকের পঞ্চম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।