বিশ্ব শরণারার্থী দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০২৩, ৩:০৭:৫৪ অপরাহ্ন
সবার সাথে তাল মিলিয়ে যে কথা বলে সে ব্যাক্তিত্বহীন। -মার্ক টোয়াইন
দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শরণারার্থী দিবস। জাতিসংঘ ঘোষিত দিবসটি যখন পালিত হচ্ছে, তখন সারা বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা সোয়া আট কেটির মতো। বিশেষ করে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। এমনই একটি স্পর্শকাতর প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে শরণার্থী দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।
ইতিহাসের আলোকে জানা যায়, ২০০০ সাল পর্যন্ত আজকের দিনটিকে আফ্রিকান শরণার্থী দিবস নামে বিভিন্ন দেশে পালিত হতো। ২০০০ সালের চৌঠা ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২০০১ সালের জুনের ২০ তারিখ প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়-১৯৫১ সালে শরণার্থীদের অবস্থান নির্ণয়-বিষয়ক একটি কনভেনশনের ৫০ বছর পূর্তি হয় ২০০১ সালে। সেই ঘটনাকে স্মরণ করেই ২০ শে জুনকে বিশ্ব শরণার্থী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে একটি বৃহৎ সমস্যা হচ্ছে শরণার্থী। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, পৃথিবীতে এখন শরণার্থীর সংখ্যা আট কোটি ২০ লাখের ওপরে। সে হিসেবে বিশ্বের প্রতি ৯৫ জন নাগরিকের বিপরীতে একজন মানুষ শরণার্থী। বিগত করোনামহামারির ক্রান্তিকালে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক কোটির বেশি মানুষ। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করছে, অচিরেই বিশ্বের শরণার্থী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে এই বিশাল শরণার্থী জনগোষ্ঠির অর্ধেকই শিশু। তবে উন্নত দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া মানুষের সংখ্যা কম।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ শরণার্থীর আশ্রয় মিলেছে উন্নয়নশীল দেশে। এর মধ্যে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করা যায়। এখানে আশ্রিত আছে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লাখের বেশি শরণার্থী। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংস হামলার শিকার হয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। যাদের গ্রামগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এছাড়া এর আগে থেকেই আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। বর্তমানে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিয়ে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা নিয়ে তারা আদৌ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে কি না, তা বলা মুশকিল। জাতিসংঘের সাথে মিয়ানমারের চুক্তির পরও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিয়ে শংকিত রোহিঙ্গারা।
বিশ্বের প্রত্যেক শরণার্থীর জন্য নিজেদের স্থায়ি আবাসন নিশ্চিত হোক। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরই মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের যে উদ্যোগে নেয়া হয়েছিলো, তা স্থিমিত হয়ে আছে। রোহিঙ্গাদের বক্তব্য হচ্ছে- তাদের জাতিগত স্বীকৃতি, নাগরিকত্ব প্রদান, নিজ ভিটে-মাটি ফেরত দেয়ার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ দিলে তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে। তাদের এই দাবি বাস্তবায়নের সব প্রতিবন্ধকতা দূর হোক। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।