ঘাসিটুলায় সোহাগ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৩ জনের ফাঁসি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০২৩, ৩:৫২:৫২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : নগরীতে সোহাগ মিয়া নামের এক কিশোরকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে লাশ ফেলে দেয়ার ঘটনায় তিন আসামিকে ফাঁসির দন্ড দিয়েছেন আদালত।
সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক নুরে আলম ভূইয়া গতকাল সোমবার দুপুরে এই আদেশ দেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছে, নগরের ঘাসিটুলা সবুজসেনার (বাসা নং-৭০/ব্লক-বি) মইন উদ্দিন মিয়ার পুত্র শাকিল আহমদ (২০), ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া বাবুল চেয়ারম্যানের বাড়ির (বর্তমানে ১৫৬- ঘাসিটুলা) ফয়েজ আহমেদর পুত্র জয় আহমদ দিপু (২০) ও ঘাসিটুলা সবুজসেনার (বাসা নং-৭৫/ব্লক-বি) মিনহাজ মিয়ার পুত্র সাইয়ুম আহমদ (২০)। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট জুবায়ের বখত জুবের সিলেটের ডাককে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সাক্ষ্য-প্রমাণে উপস্থাপন করতে পেরেছি। নিহতের পরিবার ও রাষ্ট্রপক্ষ রায়ে সন্তুষ্ট।
জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার আলিয়া বাজার ঝোপগারি (পূর্বপাড়া) এলাকার আশরাফ আলীর স্ত্রী মোছা ফুলবানু সন্তানদেরকে নিয়ে নগরের মজুমদার পাড়ার একটি কলোনিতে বসবাস করতেন। তিনি ঝি’র কাজ করতেন ও তার পুত্র কিশোর সোহাগ মিয়া (১৭) নগরের কাজিরবাজারের একটি মাছের আড়তে মাছ বিক্রি করত। ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল রাতে দুর্বৃত্তরা সোহাগকে বাসা থেকে ডেকে বের করে নেয়। এরপর ওই রাতে আর সে বাসায় ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান না পেয়ে পরিবারের লোকজন হতাশ হয়ে পড়েন। ঘটনার ৬ দিন পর ১৬ এপ্রিল সকালে নবাব রোডের এলজিইডি ভবনের পেছনের গাভীয়ার খালে বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে সোহাগের হতভাগ্য মা ফুলবানু ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি পুত্র সোহাগের লাশ শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। সুরতহাল রিপোর্টে সোহাগের শরীরে অসংখ্য ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ও হাত-পায়ের রগ কাটা পাওয়া যায়। এঘটনায় নিহতের মা ফুলবানু বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-৩৯।
এরপর পুলিশ প্রথমে নিহত সোহাগের বন্ধু শাকিলকে গ্রেফতার করে। শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদে সে সোহাগ হত্যার বর্ণনা দিয়ে পুলিশের নিকট হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে। পরে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয় শাকিল। শাকিলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পরবর্তীতে জয় আহমদ দিপু ও সাইয়ুম আহমদকে পুলিশ গ্রেফতার করে। জয় ও সাইয়ুমও আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
তদন্তে মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে আসামিরা ঘাসিটুলা এলজিইডির বালুর মাঠে সোহাগকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
তদন্ত শেষে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন ভূইয়া ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর শাকিল আহমদ, জয় আহমদ দিপু, সাইয়ুম আহমদ, হাবিবুর রহমান শ্যামল, আব্দুল মুক্তাদির মন্টি ও রুহেল ওরফে রুমেল নামের ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৩ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মামলার মোট ১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে আাদালতে ১১ জন সাক্ষী দেন। এরপর যুক্তিতর্কসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষে গতকাল দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক নুরে আলম ভূইয়া এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় আসামি শাকিল আহমদ, জয় আহমদ দিপু ও সাইয়ুম আহমদকে ফাঁসির আদেশ দেন। পাশাপাশি তাদের তিন জনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদ-, উপরোক্ত তিন আসামিকে দন্ডবিধির ২০১/৩৪ ধারায় ৭ বছর করে সশ্রম কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের সশ্রম কারাদ- দেন আদালত। রায়ে অপর আসামি হাবিবুর রহমান ও রুহেল ওরফে রুমেলকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। মামলার আরেক আসামি আব্দুল মুক্তাদির মন্টি বয়সে শিশু হওয়ায় শিশু আদালতে তার বিচার কার্যক্রম চলছে। রায় ঘোষণার পর ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে কড়া পুলিশি প্রহরায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট জুবায়ের বখত জুবের।
আসামিপক্ষে ছিলেন এডভোকেট এ কে এম সামিউল আলম, এডভোকেট মো আব্দুল লতিফ, এডভোকেট দিদার আহমদ ও এডভোকেট সাদিয়া রিফাত।