জলাতঙ্ক রোগ থেকে সাবধান
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুন ২০২৩, ৬:৩০:৪২ অপরাহ্ন
লোকমান হেকিম
জলাতঙ্ক রোগ যা কিনা ১০০ ভাগ মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ। র্যাবিস ভাইরাস জনিত একটি মারাত্মক রোগ, যার জন্য দায়ী এই রোগে আক্রান্ত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর, ইঁদুর ও গরু-ছাগল। তবে এমন ব্যাধি সৃষ্টির পূর্বশর্ত হলো এসব আক্রান্ত প্রাণীর লালায় র্যাবিস জীবাণুর উপস্থিতি, যা রোগাক্রান্ত প্রাণীর কামড়ে; এমনকি সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে জন্ম দিতে পারে এমন মারণব্যাধি। আর তাই এসব আক্রান্ত প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ে রক্তপাত হোক বা না হোক নির্দিষ্ট মেয়াদে র্যাবিস-বিরোধী ভ্যাকসিন বা ইনজেকশন প্রয়োগ শুরু করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জলাতঙ্ক বোঝার উপায়- আক্রান্ত প্রাণী উন্মাদের মতো সবাইকে এবং সব কিছু কামড়ানোর প্রবণতা, উদ্দেশ্যহীনভাবে ছোটাছুটি করা, মুখ থেকে অত্যধিক লালা নিঃসৃত হওয়া, ঘন ঘন ঘেউ ঘেউ বা বিড় বিড় শব্দ করা। একপর্যায়ে গলার মাংসপেশিতে পক্ষাঘাত হওয়ায় ঘেউ ঘেউ করতে না পারা, হাঁপ টেনে টেনে শ্বাস নেয়া। ক্ষেত্রবিশেষে এমন রোগের আক্রান্ত প্রাণীর মধ্যে উত্তেজনা ভাব প্রকাশ না পেয়ে চুপচাপ থাকতে পারে এবং গৃহের এক কোণে ঘুমায় অনেক দিনের আক্রান্ত হলে। রোগটি সুপ্তাবস্থায় মানুষের শরীরে থাকে এক মাস থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত। এতে আক্রান্ত মানুষ অন্য আক্রান্ত প্রাণীর মতো অন্য মানুষকে কামড়াতে চায়, পানি দেখলে ভয় পায়, পানি পান করতে পারে না এবং শ্বাসকষ্ট হয়, মুখ থেকে লালা পড়ে।
ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়ার নিয়ম- আগের মতো এখন আর নাভির চার পাশে ১৪টি টিকা বা ইনজেকশন দিতে হয় না। মাত্র পাঁচটি বেদনাহীন ইনজেকশন নিলেই চলে। ১ মিলি র্যাবিস ইনজেকশন (র্যাবিপুর) ০, ৩, ৭, ১৪, ২৮ এই পাঁচ দিনে মাংসপেশিতে নিতে হয়। তবে ৯০ দিনে আরো একটি অতিরিক্ত ডোজ (বোস্টার) দিতে বলা হয়, যা রোগটির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে। আক্রান্ত প্রাণীর লালা, কামড়, আঁচড় স্পর্শে এলেই টিকা (ভ্যাকসিন) দিতে হবে। কেননা মনে রাখতে হবে এই রোগে ১০০% মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি উন্নত বিশ্বেও এই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ১০০ ভাগ।
ভ্যাকসিন বা টিকা-বিষয়ক সতর্কতা- বাহুর ডেলটোয়েড মাংসপেশিতে ইনজেকশন দিতে হবে। দুই বছরের নিচে ছোট শিশুদের ঊরুর মাংসপেশিতে সামনের দিকে ডান পাশে দেয়া হয়। ইনজেকশন একই হাতে বা পায়ে না দিয়ে পরিবর্তন করে দিতে হবে। পাছা অর্থাৎ গ্লোটিয়াল মাংসপেশিতে কখনো এই টিকা প্রয়োগ করা যাবে না। কেননা এই স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে চর্বি থাকায় টিকার উপাদান শোষণে বাধাগ্রস্ত হয়। তবে টিস্যু কালচার র্যাবিস ভ্যাকসিনের মাত্রা সব বয়সের জন্যই সমান, এমনকি নবজাত শিশুর ক্ষেত্রেও। দংশনের দিনই ভ্যাকসিন বা টিকা শুরু করা ভালো। যদিও ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়। উল্লেখ্য, কামড়, আঁচড় বা লালা স্পর্শ স্থানটি কামড়ানোর সাথে সাথে ভালোভাবে সাবান ও পর্যাপ্ত পানি দিয়ে প্রায় ১০ মিনিট ঘসে ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিষ্কার করার পর ক্ষতস্থানটি অ্যালকোহল বা পভিডন আয়োডিন দিয়ে ভালোভাবে ভেজানো উচিত, যাতে অবশিষ্ট ক্ষতিকর ভাইরাস সেখানে উপস্থিত থাকলে তা নষ্ট হয়ে যায়। ভ্যাকসিন শুরুর পর করণীয়- প্রাণীটিকে সম্ভব হলে বেঁধে রাখা অথবা ১০ দিন পর্যন্ত খেয়াল রাখা যে, তার মধ্যে এই রোগের কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় কি না। যদিও পাঁচ দিন পর্যন্ত প্রাণীটি সুস্থ থাকে তাহলে ধরে নেয়া যায়, তার লালায় জীবাণু নেই এবং সে ক্ষেত্রে বাকি টিকা বা ইনজেকশন দেয়ার প্রয়োজন নেই। ১০ দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক উপসর্গ প্রাণীর লালায় ভাইরাসের উপস্থিতি প্রমাণ করে। এমন হলে প্রাণীটিকে মেরে ফেলতে হবে, যদিও সে নিজে এমনিতেই মরে যাবে। র্যাবিস একটি মারাত্মক রোগ, এর জন্য মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা আনা প্রয়োজন। এই কাজের জন্য এগিয়ে আসতে হবে সরকারের সিটি করপোরেশন এবং জন-উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের সাথে জড়িত কোনো সংস্থা। পোস্টারিং করে মানুষের মধ্যে রোগ সম্পর্কে জানান এবং আক্রান্ত কুকুর নিধন বা মেরে ফেলা। তবেই এই মারাত্মক রোগ থেকে আমরা ও আমাদের ছোট্ট সোনামণিরা রক্ষা পাবে। জানেনতো, রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। রোগ হলে রোগীর কষ্ট, চিকিৎসা, ওষুধ ইত্যাদিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
লেখক : কলামিস্ট।