বাড়ছে জন্মহার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুন ২০২৩, ২:০৫:২০ অপরাহ্ন
একজন আহত ব্যক্তি তার যন্ত্রনা যতো সহজে ভুলে যায়, একজন অপমানিত ব্যক্তি ততো সহজে অপমান ভুলে না। -জর্জ লিললো
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর কিংবা সরকার এব্যাপারে খুব একটা তৎপর নয়। যে কারণে দেশে জন্মহার বেড়েই চলছে। প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে গত এক বছরে ১৯ দশমিক তিনটি শিশু জন্ম নিয়েছে। যা ২০২১ সালের তুলনায় কিছুটা বেশি। ওই বছর দেশে স্থুল জন্মহার ছিল ১৮ দশমিক আটজন। ২০২২ সালে স্থুল জন্মহার বেড়ে ১৯ দশমিক তিনজন হয়েছে। অথচ গত বছর কয়েক আগেও দেশে জন্মহার ছিলো কমতির দিকে।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮) পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে এক নম্বর অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। তখন থেকে শুরু হয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। ক্রমান্বয়ে এতে সফলতা আসতে শুরু করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নেমে আসে এক দশমিক ৩১ শতাংশে। জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রি ব্যবহারকারির সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২ দশমিক চার ভাগ। নারীপ্রতি গড় সন্তান সংখ্যা বা টিএফআর দুই দশমিক ০৫। মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ১৭২ জন। অর্থাৎ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে বাংলাদেশ এক পর্যায়ে বিশ্বে রোল মডেল হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে স্তবিরতা নেমে আসে। ফলে দেশে জন্মহারে এখন উর্ধগতি। সম্প্রতি সরকারি জরিপে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য। জরিপে জন্মহার বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়। যেমন- কোভিড মহামারিকালে সবার ঘরবন্দি থাকা এবং এসময় প্রচুর প্রবাসির দেশে ফেরা। জরিপে বলা হয়, ২০২২ সালে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার প্রতি হাজারে এক দশমিক ৩৫ জন। তার আগের বছর ২০২১ সালে এই হার ছিলো এক দশমিক ৩০ জন। গত বছর প্রতি হাজার প্রজননক্ষম নারীর বিপরীতে প্রজনন হার ছিল ৬৮ জন। ২০২১ সালে এই হার ছিল ৬৬ জন। তাছাড়া, ২০২২ সালে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রি ব্যবহারও কিছুটা কমে ৬৩ দশমিক আট শতাংশে নেমে আসে। আগের বছর এ হার ছিল ৬৫ দশমিক ছয় শতাংশ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে দেশে বাড়ছে জন্মহার। তার মানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও বাড়ছে। তার সঙ্গে বেড়ে চলেছে নানা ধরণের সমস্যা।
বিশ্বের অনেক দেশে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। অফিস আদালত কল কারখানায় দেখা দিচ্ছে জনবল সংকট। এ ব্যাপারে তারা বেশ উদ্বিগ্ন। কিন্তু বেশিরভাগ দেশেই জনসংখ্যা বুদ্ধি রীতিমতো জনবিস্ফোরণে পরিণত হয়েছে। আর এই জনবিস্ফোরণের কবলে আমরাও। সার্বিক প্রেক্ষাপটে এদেশে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়ে একদিন সুষম জনসংখ্যার মার্জিন থেকে নিচে চলে যাবে, এমন চিত্র কল্পনাই করা যাবে না। সুতরাং জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে টেকসই পর্যায়ে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।