নাজিরবাজারে দুর্ঘটনায় নিহত ১৫ জনের পরিবার পেলো শেইড ট্রাস্টের আর্থিক সহায়তা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০২৩, ৪:১৭:৫৮ অপরাহ্ন
নিহতদের স্বজনদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের আশ্বাস
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নাজিরবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৫ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল সিলেট হেলথ ডেভেলপম্যান্ট এন্ড এডুকেশন ট্রাস্ট (শেইড ট্রাস্ট)। গতকাল শনিবার নগরীর হাওয়াপাড়ায় ট্রাস্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিহত ১৫ জনের স্বজনদের হাতে সহায়তার এ অর্থ তুলে দেয়া হয়। এ সময় দেয়া প্রতিক্রিয়ায় সহায়তাপ্রাপ্তরা জানান, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছেন। এ সহায়তা পেয়ে তারা খুশি।
শেইড ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি মুহাম্মদ দিলওয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন-ট্রাস্টি মাওলানা নেহাল আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ট্রাস্টি মুহিবুর রহমান ও হেলাল আহমদ, সিলেট ঢালাই শ্রমিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেলু মিয়া ও দুর্ঘটনায় নিহত আওলাদ হোসেনের ভাই মকবুল হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন-শেইড ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী ডা: উমামা বিনতে সালেহ।
মকবুল হোসেন জানান, তার ভাইয়ের স্ত্রী ৬ মাস আগে মারা যান। এক ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে ছিল তার ভাইয়ের সংসার। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলেও এক মেয়ে এবং এক ছেলে তার পরিবারের সাথে এক সাথে বসবাস করছে। মা-বাবার অবর্তমানে তাদের ভরণ-পোষণ তিনি ও তার স্বজনরা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিলেট ঢালাই শ্রমিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেলু মিয়া বলেন, পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে পরিবারগুলো খুবই অসহায়। বর্তমানে বিভিন্নজনের সহযোগিতায় এসব পরিবার চলছে। পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পেলে পরিবারগুলোর দুর্দশা কিছুটা হলেও ঘুচবে বলে জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে শেইড ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি মুহাম্মদ দিলওয়ার হোসাইন জানান, শেইড ট্রাস্ট ২০২০ সাল থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করে চলেছে। ২০২২ সালের বন্যায় তারা দুর্গতদের নানাভাবে সহযোগিতা করেন। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, নিহতদের স্বজনদের যোগ্যতা অনুযায়ী ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রয়োজনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পিকআপ ভ্যানে চলাচলের ক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্টদের আরো সচেতন হবার পরামর্শ দেন।
পরে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, সিলেটের গরিব-দুঃখি-অসহায়, দুর্দশাগ্রস্ত লোকজনকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে ২০২০ সালে কার্যক্রম শুরু করে সিলেট হেলথ ডেভেলপম্যান্ট এন্ড এডুকেশন ট্রাস্ট (শেইড)। ২০২০ সালে অতিমারি করোনার ভয়াবহতা ব্যাপক আকার ধারণ করলে ওই বছরের ৫ মে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাড়ায় চালিত গাড়িতে করে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদান শুরু করে এই ট্রাস্ট। পরবর্তীতে ট্রাস্টটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে যাত্রা শুরু করে। ট্রাস্টে যুক্ত হয় নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সও। ট্রাস্টের অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ৫ শতাধিক কোভিড রোগী বিনামূল্যে পরিবহন করা হয়েছে। করোনাকালে ১৫০ জনকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদানের পাশাপাশি সহ¯্রাধিক পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ এবং ট্রাস্টের স্বনির্ভর প্রজেক্টের আওতায় সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় ১০টি পরিবারের মাঝে ছাগল ও সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট অঞ্চলের অনেক মানুষ বাড়ি-ঘরে আটকা পড়েন। এ অবস্থায় বন্যায় আটকেপড়া লোকজনকে নৌকা দিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে শেইড ট্রাস্টের স্বেচ্ছাসেবকরা। ট্রাস্টের দুটি অ্যাম্বুলেন্সযোগেও উদ্ধার করা হয় বন্যার্ত লোকজনকে। পাশাপাশি বন্যার্তদের শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ঔষধ, খাদ্যসামগ্রী, কাপড়-চোপড় ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। সবমিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া, মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার লোককে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। বন্যার পর অসহায় লোকজনকে পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে বেশ কয়েকটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। ঘর নির্মাণের পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সহায়তার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে স্বনির্ভর প্রজেক্ট।