সিলেটে প্যাকিং হাউজ নির্মিত হবে কবে?
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০২৩, ৪:৩৯:৫৯ অপরাহ্ন
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম
সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মিত হলেও প্যাকিং হাউজের অভাবে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিলেটের রপ্তানিকারকরা। এখানকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সিলেটে প্যাকিং হাউজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও দেড় বছরেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এ অবস্থায় এখান থেকে
ইউরোপীয় ইউনিয়নে কোন পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বিমানবন্দরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে বছরখানেক আগে। এর আওতায় এ কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস), ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন ও এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু, বিমানবন্দরে এখনো প্যাকিং হাউজ, কোল্ড স্টোরেজ ও প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইনের সুবিধা চালু হয়নি এখনো।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জিএম (কার্গো) মো: হারুন জানান, এক্সপোর্ট কার্গো নির্মাণের পর এ বিমানবন্দর থেকে দুটি শিপম্যান্ট হয়েছে। এর মাধ্যমে মার্ক স্পেনসারের ২১০০ কেজির একটি শিপম্যান্ট যুক্তরাজ্যে গেছে। তিনি বলেন, ওসমানী বিমানবন্দরে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য রপ্তানির সার্টিফিকেশন রয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ জানিয়েছেন, এ বিমানবন্দর থেকে দুটি শিপম্যান্ট যুক্তরাজ্যে গেছে। পণ্য রফতানির জন্য কার্গো কমপ্লেক্স প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) বাদল চন্দ্র বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে জানান, সিলেটে প্যাকিং হাউজ নির্মাণ প্রকল্পটি আলোচনার পর্যায়ে আছে। সরকারিভাবে এই মুহূর্তে প্যাকিং হাউজ নির্মাণের চিন্তা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেসরকারি কোন উদ্যোক্তা প্যাকিং হাউজ করতে চাইলে তারা সব ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবেন। একজন প্রবাসী ও একজন বাংলাদেশি এ নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন। তারা নিজেরাই উদ্যোক্তা এবং এক্সপোর্টের বিষয়ে তাদের বেশ জানাশোনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের বিষয়ে আমাদের পজিটিভ চিন্তা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কৃষি বিভাগের পার্টনার নামে একটি নতুন প্রকল্প পাসের পর্যায়ে আছে। এই প্রকল্পে প্যাকিং হাউজ অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুলতান আহমদ জানান, এ বিমানবন্দরের অবকাঠামো ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পণ্য রপ্তানি করা যাবে। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য প্যাকিং হাউজ বাধ্যতামূলক। এটি স্থাপনের বিষয়ে সরকারি এবং বেসরকারি দুটি উপায় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, সিলেটে প্যাকিং হাউজ স্থাপনের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রণালয়ের সাথে তারা দীর্ঘদিন ধরে চিঠি চালাচালি করে আসছেন। খোদ কৃষিমন্ত্রীকে নিয়ে তারা সিলেটে মতবিনিময় করেছেন। এরপরও তাদের দাবি পূরণ হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক, রপ্তানিকারক হিজকিল গুলজার জানান, সিলেটে ইউরো স্ট্যান্ডার্ডের প্যাকিং হাউজ স্থাপনের জন্য তারা দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন। কৃষিমন্ত্রীও তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে প্যাকিং হাউজ স্থাপন করতে হলে আগে মার্কেটিং চেইন ঠিক করতে হবে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি। সিলেটে উৎপাদিত কাগজি ও জারা লেবু, নাগামরিচ, গোয়ালগাদ্দা শিমের চাহিদা লন্ডন, ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যাপক। সিলেটে প্যাকিং হাউজ না থাকায় রাজধানীর শ্যামপুরস্থ প্যাকিং হাউজের মাধ্যমে তাদেরকে পণ্য রফতানি করতে হয় বলে জানান তিনি।
সিলেটে প্যাকিং হাউজ নির্মিত না হওয়ায় সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ওসমানী বিমানবন্দরে ওয়ার হাউজ নির্মিত হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখান থেকে সরাসরি শাক সবজি যাচ্ছে না। ঢাকায় জিনিস পাঠাতে হয়। ওখান থেকে বিদেশ যায়। এটা হওয়ার কথা নয় বলে তার মন্তব্য।