মাদক বিরোধি দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২৩, ৮:৫৯:০১ অপরাহ্ন
সব দুঃখের মূল এই দুনিয়ার প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ। -হযরত আলী রা.
আজ দেশে পালিত হচ্ছে মাদকবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। মাদকাসক্তি একটি নীরব ঘাতক। এটি মানুষকে ধীনে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংস হয় পরিবার, সমাজ ও দেশ। যেসব দ্রব্য গ্রহণে আসক্তি জন্মে তার নাম মাদকদ্রব্য। বিভিন্ন নামে পরিচিত এই মাদকদ্রব্য। মাদক গ্রহণের ফলে আসক্তদের স্বাস্থ্যহানি ঘটে, জীবনী শক্তি কমতে থাকে, শরীরের ইন্দ্রিয়গুলো নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কমে যায় কর্মক্ষমতা; হতাশা অবসাদে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে মানুষ।
মূলত জাতিসংঘের আহ্বানে গত ৩৫ বছর ধরে মাদক বিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ২৬ জুনকে মাদকবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপি দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। সত্যি বলতে কি, দেশে মাদক পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের উদ্বেগজনক একটি চিত্র বেরিয়ে এসেছে। জাতিসংঘের জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে কমপক্ষে ৬৫ লাখ মানুষ সরাসরি মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে ৮৭ ভাগ পুরুষ, ১৩ ভাগ নারী। এক লাখেরও বেশি মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী এবং শিশু-কিশোররাও জড়িত মাদক ব্যবসার সঙ্গে। এছাড়া, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৪৬ লাখ। আসক্তদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ। অধিদপ্তরের জরিপে বলা হয়, আসক্তদের শতকরা ৯১ ভাগ কিশোর ও তরুণ। মাদকাসক্তদের শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার এবং ৬৫ ভাগ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট।
একটি বেসরকারি সংস্থা আরেকটি আশংকাজনক খবর দিয়েছে। তাদের মতে, দেশে সুই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদকসেবির সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এই মাদকাসক্তরা শিরায় মাদক গ্রহণ করায় এইচআইভি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর এটা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই যে, দেশে অবৈধ পথে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আসছে বিভিন্ন দেশ থেকে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য আমদানি হচ্ছে বিদেশ থেকে। এর মধ্যে ভারত থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ’ ৩৪৭ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য দেশে আসে। এর মধ্যে শুধু ফেন্সিডিলই আসে ২২০ কোটি টাকার। আর প্রতি বছর যে পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য দেশে ঢুকছে তার মাত্র শতকরা ১০ ভাগ উদ্ধার সম্ভব হয়। আমাদের দেশে শতকরা ৬০ ভাগ মাদকাসক্ত মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে। তাছাড়া, মাদক সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতেও রয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। দেশে বর্তমানে প্রায় অর্ধ লক্ষ মাদক সংক্রান্ত মামলা ঝুলে আছে।
বিগত সময়ে বৈশ্বিক মহামারি করোনায় যখন বিপর্যস্ত সারা বিশ্বের মানুষ, তখনও মাদকের চোরাচালান থামে নি; বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, অনেক সময় আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানকারিরা বাংলাদেশকে মাদক পাচারের ট্রানজিট ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করছে। মাদকদ্রব্য আসছে সীমান্ত পথের পাঁচ শ’ ১২ টি পয়েন্ট দিয়ে। তাই সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। সেই সঙ্গে ধ্বংস করতে হবে দেশের অভ্যন্তরে মাদকের উৎপাদন।