সিলেটে কোরবানির পশুর বাজার সরগরম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুন ২০২৩, ৮:০৬:০৬ অপরাহ্ন
আজ থেকে বিক্রয় বৃদ্ধি ও দাম কমার আশা
সিএম ইউনুস
হঠাৎ পিছন থেকে সতর্ক বার্তা, দ্রুত রাস্তা ছাড়–ন। পা টিপে টিপে চলছিলেন, পিছন থেকে নির্দেশ হতেই পা কোথায় পড়েছে দেখার জো নেই, লাফ দিয়ে রাস্তার পাশে সরে পড়েছেন। পায়ের দিকে না তাকিয়ে পিছন থেকে গরু নিয়ে ছুটে আসা লোকদের জিজ্ঞেস করছেন কত হয়েছে। ঘরের জন্য ক্রয় করা গরু সামলাতে গিয়ে গলদঘর্ম কিশোর আনন্দের সাথেই জানিয়ে দিচ্ছে দাম। ট্রাক-পিকআপে দূর-দূরান্ত থেকে নিয়ে আসা গরু নামিয়ে বাজারের দিকে ছুটছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার সিলেট নগরীর কাজিরবাজার ঘুরে এমন দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে ছিল নির্লিপ্ত ভাব। আজ মঙ্গলবার থেকে বিক্রি বাড়বে বলে আশা বিক্রেতাদের। বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে ক্রেতারা জানান, দাম অনেক বেশি আজ থেকে কমবে বলে আশা তাদের।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ২২৫টি গবাদি পশুর হাট বসেছে। এ বছর সিলেট বিভাগে কোরবানির পশুর চাহিদা ৩ লক্ষ ৯৩ হাজার ২৯৩টি। তবে সিলেটে কোরবানি যোগ্য মোট পশু মজুদ আছে ৪ লক্ষ ১০ হাজার ২২৫টি। চাহিদার তুলনায় এ সংখ্যা ১৬ হাজার ২৩২টি বেশি। এর মধ্যে কোরবানি যোগ্য মোট গরু আছে ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪৮টি, মহিষ ৬ হাজার ৩৯৩, ছাগল ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৫টি. ভেড়া ১ লক্ষ ৮ হাজার ৬১৭ এবং অন্যান্য প্রাণি আছে ৮৬টি। সিলেটে কোরবানি যোগ্য মোট গরুর চাহিদা ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৮৯৭টি, মৌলভীবাজারে ৯৮ হাজার ৪০২টি, হবিগঞ্জে ৯০ হাজার ৬৩২টি এবং সুনামগঞ্জে ৫৪ হাজার ৩৬২টি।
আলাপ করে জানা গেছে, এরই মধ্যে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতারা ভিড় করতে শুরু করেছেন। ক্রেতারা গরু দাম দর করছেন। পছন্দ হলে ক্রয় করছেন। তবে অধিকাংশ ক্রেতাই জানিয়েছেন, দাম অনেক বেশি। বিক্রেতারা এখনো দাম ছাড়ছেন না। বাজার ঘুরে দেখছেন, আজ থেকে দাম কমবে বলে আশা করছেন তারা। বাজারে আসা একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, দাম দেখে গরু ক্রয় করতে সাহস হচ্ছে না। দাম কমার অপেক্ষায় আছেন। এ সময় এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, গতবারের ভয়ে এবার আগেই গরু ক্রয় করতে এসেছেন। কিন্তু বিক্রেতারা দাম ছাড়ছেন না বলে ক্রয় করতে পারছেন না। বিক্রেতারা জানান, সব কিছুর দাম বেড়েছে। গরু পালনের খরচও অত্যধিক বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গরুর দাম একটু বাড়তি। গত বারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি না রাখলে গরু বিক্রি করে তারা কিছুই পাবেন না বলে জানান।
ঝিনাইদহ থেকে ৮০টি গরু নিয়ে আসা একজন ব্যবসায়ী জানান, বাজারে এখনো ব্যাপকভাবে বিক্রি শুরু হয়নি। ক্রেতারা দামদর করছেন। আজ থেকে বিক্রি শুরু হবে বলে জানান তিনি। সিলেটের বিভিন্ন হাটে কিশোরগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে আসা শাহ আলম জানান, মাঝারি আকারের একটি গরু তিনি ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। দাম চেয়েছিলেন ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। এ সময় একজন ক্রেতা দুইটি মাঝারি সাইজের গরু দাম করলে চাওয়া হয় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। অপর এক বিক্রেতার নিকট একজন মহিলা দুইটি মাঝারি সাইজের গরু পছন্দ করলে দাম চাওয়া হয় আড়াই লাখ টাকা।
কাজিরবাজার প্রবেশের মুখেই নিজের খামারের দুটি বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছেন বিশ্বনাথ উপজেলার রকিব আহমেদ। বিশাল আকারের কালো রংয়ের (২৭ মণ ওজন) গরুটির দাম চেয়েছেন ১৩ লক্ষ টাকা । সাড়ে ৮ মনের অফহোয়াইট রংয়ের ষাঁড়ের দাম চেয়েছেন সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা। নিজ হাতে পালন করা ঘরের দু’তিনটি গরু প্রতি ঈদেই তিনি বাজারে আনেন বলে জানান তিনি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট গরু দাম চাওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। মাঝারি গরু ১ লক্ষ ১০ থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। বড় গরু আকর ভেদে ২ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাম চাওয়া হচ্ছে। ছাগল আকার ভেদে ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাম চেয়েছেন বিক্রেতারা।
সিলেটের বিভিন্ন হাটে কোরবানির পশু বিক্রি করছে ইব্রাহিম অর্গানিক ফার্ম। ফার্মের পরিচালক আরাফাত ইসমাইল জানান, বাজারে ছোট গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাজার এখনো জমে উঠেনি। তবে আজকের মধ্যেই বাজার জমে উঠবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাদের ফার্মের ৮০টি গরু রয়েছে, ঈদে সব গুলোই বিক্রি হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
কাজিরবাজারের ম্যানেজার শাহাদত হোসেন লিলন জানান, কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা রাস্তায় কোন প্রতিবন্ধকতায় না পড়লে আজ পুরো বাজার ভরে উঠবে। এখনো বিকিকিনি তেমনভাবে শুরু হয়নি। ক্রেতারা দাম বেশি বলছেন, তবে গরু পরিবহনের গাড়িগুলো বিনা বাধায় হাটে আসতে পারলে দাম কমবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। গরুর গাড়িসমূহ নির্বিঘেœ আসতে না পারলে ব্যবসায়ীরা সিলেট রেখে অন্যদিকে বাজার খুঁজে নেবে।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মোঃ সেলিম জানান, কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোষাকে পুলিশের বিভিন্ন টিম কাজ করছে। কোথাও কোন সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, বাজারে সুস্থ পশু ক্রয় বিক্রয় নিশ্চিত করতে তাদের ১০০টি ভেটেরেনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এরমধ্যে সিলেটে ৪৩, মৌলভীবাজার ২০টি, হবিগঞ্জ ১৯টি এবং সুনামগঞ্জে ১৭টি টিম কাজ করছে। এছাড়া, কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় অফিসে একটি করে মোট ৫টি কট্রোল রুম রয়েছে বলে জানান সিলেট বিভাগীয় অফিসের উপ পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম। সিলেটে পর্যাপ্ত সংখ্যক কোরবানির পশু রয়েছে জানিয়ে তিনি আজ মঙ্গলবার থেকে বিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।