আজ পবিত্র হজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুন ২০২৩, ৮:১৭:৪০ অপরাহ্ন
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’
ধ্বনিতে মুখর হবে আরাফাত ময়দান
ডাক ডেস্ক : আজ মঙ্গলবার পবিত্র হজ। আরাফাত ময়দানে ফজরের পরই শুরু হবে চলতি বছরের হজের কার্যক্রম। এর আগে মক্কার অদূরে মিনায় স্থাপিত তাঁবুতে অবস্থানের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে কাবা চত্বর। বিশ্বের ১৬০টি দেশের ২০ লাখ মুসলমান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে উপস্থিত হয়েছেন মক্কায়। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে ১২ জিলহজ (৩০ জুন) শেষ হবে এবারের হজ।
হজ অফিস জানিয়েছে, গতকাল সোমবার হজযাত্রীদের মিনায় যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সারা বিশ্ব থেকে আগত হজযাত্রীরা পবিত্র হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে গতকাল বাদ আসর মক্কা থেকে মিনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছেন।
এদিকে, বাংলাদেশ হজ অফিস ও হজ আইটি দলের সমন্বিত অগ্রবর্তী একটি দল মিনায় পৌঁছেছেন এবং তাঁবুতে অফিস স্থাপন করে নিজ নিজ কার্যক্রম শুরু করেছেন।
এবার বাংলাদেশ থেকে হজ করতে গেছেন এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন হজযাত্রী। তাদের সৌদিতে পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমান, সৌদি আরবের এয়ারলাইন্স সৌদিয়া এবং ফ্লাইনাস এয়ার।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত শনিবার দিবাগত রাতে ফ্লাইনাস এয়ারের শেষ ফ্লাইট সৌদির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এর মাধ্যমে চলতি বছরে পবিত্র হজে যাওয়ার ফ্লাইট শেষ হলো। আগামী ২ জুলাই ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে। চলতি বছর ৩২৫টি ফ্লাইট হজযাত্রী নিয়ে সৌদি আরব গেছে।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত তিন বছর নানা শর্তে সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ পালনের সুযোগ দেয়া হলেও এবার তা বড় আয়োজনে হবে।
সৌদির পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর ৯ লাখ ২৬ হাজারেরও বেশি লোক হজ পালন করেছেন। এর আগের বছর ২০২১ সালে প্রায় ৫৯ হাজার জন হজ পালন করেন। আর ২০২০ সালে শুধুমাত্র সৌদিতে অবস্থানরত ১০ হাজার মুসলিম হজের সুযোগ পেয়েছিলেন। অথচ করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে ২০ লাখেরও বেশি লোক হজ পালন করেন। এবার কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে এবং বয়সের সীমা বাতিল করা হয়েছে। তাই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এবার ২০ লাখের বেশি মুসলিম পবিত্র হজ পালন করবেন বলে আশা করছে দেশটি। এরইমধ্যে প্রায় সব হজযাত্রী সৌদিতে পৌঁছেছেন।
এদিকে পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় শুরু থেকেই নেয়া হয়েছে ব্যাপক ব্যবস্থা। সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের লক্ষাধিক কর্মী দায়িত্ব পালনে রয়েছেন হজের নির্ধারিত স্থানগুলোতে।
তাঁবুর শহর মিনা সজ্জিত হয়েছে নতুনরূপে, আগের চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে মুসল্লিদের জন্য। মিনার বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক হাজার অটো ইলেকট্রিক গাড়ি সেবা দেবে হাজিদের। এছাড়া আরাফাতের নির্ধারিত স্থানে সৌদি সেনা সদস্যদের কয়েক প্লাটুন মোতায়েন রয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।
এর আগে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রী ডা. তৌফিক আল রাবিয়া বলেন, বিশ্বের লাখো মুসলিমের লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হবে মক্কা। এ বছর ৩২ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী হজযাত্রীদের সেবা দেবেন। হজ পালনে আল্লাহর অতিথিদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে সরকার ও সৌদির জনগণ অংশ নেবে।
অপরদিকে, হজযাত্রীদের দিকনির্দেশনা দিতে এবারো বেশ কিছু রোবট মোতায়েন করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। পবিত্র কাবাঘরের আঙিনায় কিং আব্দুল আজিজ কমপ্লেক্সের সামনেও দেখা গেছে এমনই একটি রোবট।
কিসওয়া (বিশেষ কালো কাপড় যা দিয়ে কাবাঘর আচ্ছাদিত করা হয়) গায়ে রোবটটি হজযাত্রীদের স্বাগত জানাচ্ছে। এছাড়া হজযাত্রীদের বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনাও দিচ্ছে।
গাল্ফ নিউজের এক প্রতিবেদন মতে, রোবটটি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আরবিতে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এটি বিশ্বের ১১টি ভাষায় যোগাযোগ করতে পারে। ভাষাগুলো হলো: আরবি, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, রুশ, ফার্সি, তার্কিশ, চাইনিজ, বাংলা ও হাউসা ইত্যাদি।
সূত্রমতে, রোববার মক্কার হোটেল থেকে সবাই এহরামের কাপড় পরে ৬ কিলোমিটার দূরে তাঁবুর শহর হিসেবে খ্যাত মিনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানে পৌঁছে নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নেন হজযাত্রীরা। গতকাল সোমবার জোহরের আগেই সব হজযাত্রী মিনায় পৌঁছান। সেখানে সারা দিন তাঁবুতে অবস্থান করে নামাজ ও অন্যান্য নফল ইবাদত করে কাটান তারা।
আজ মঙ্গলবার ৯ জিলহজ সকাল থেকেই ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে অস্থায়ী তাঁবুতে এবং অনেকে খোলা জায়গায় অবস্থান নেবেন। এ সময় হজযাত্রীদের মুখে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে আরাফাতের ময়দান। দুপুরে মসজিদে নামিরাহ থেকে প্রচারিত হবে পবিত্র হজের খুতবা। হাজীরা এই খুতবা শুনবেন।
সূত্রমতে, এ বছর হজের খুৎবা প্রদান করবেন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সদস্য (সদস্য হাইয়্যাতুল কিবারুল ওলামা) ফজিলাতুশ শাইখ ডক্টর ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ।
এদিকে, ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শেষে সন্ধ্যায় মুজদালিফায় গিয়ে রাতযাপন করবেন হাজীরা। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন শেষে ১০ জিলহজ সেখান থেকে ছোট ছোট কঙ্কর সংগ্রহ করে পুনরায় মিনায় গিয়ে বড় শয়তানকে (জামারায়ে উকবা) কঙ্কর নিক্ষেপ করে কোরবানি শেষে মাথা মুন্ডন করে হালাল (ইহরাম খুলবেন) হবেন তারা।
এর পর মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত (তাওয়াফ ও সায়ি) শেষে আবার মিনায় গিয়ে (ছোট, মধ্যম ও বড়) শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে হাজীদের। এভাবে ১২ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ পর্বের মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
জানা গেছে, পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গিয়ে এখন পর্যন্ত ২৬ বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ মৃত ব্যক্তির নাম মনোয়ারা বেগম (৭২)। তার পাসপোর্ট নম্বর ইপি ০০৬৮৮৩৫।
মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ ও চারজন নারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে মক্কায় মারা গেছেন ২২ জন এবং মদিনায় চারজন।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে আগামীকাল বুধবার। এর পরের দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে।