সিলেটে এবারো পানির দামে বিক্রি হয়েছে চামড়া ॥ হতাশ ব্যবসায়ীরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুলাই ২০২৩, ৮:৫৯:০৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে এবারও চামড়ার ন্যায্য মূল্য পাননি খুচরা বিক্রেতারা। একেবারেই কম মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। আর ফুট হিসেবে নয়, চামড়া গোটা হিসেবে বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ হতাশ। তাদের দাবি প্রতিবছরের মতো সিন্ডিকেট তৈরি করে এবারো চামড়া হাতিয়ে নিয়েছে চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাঝারি কিংবা বড় গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার মধ্যে। একইভাবে কম দামে বিক্রি হয়েছে ছাগল ও অন্যান্য পশুর চামড়া। ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০-২০ টাকায়।
আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলেন, লবণের দাম বেড়ে যাওয়া, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। এসব কারণেই নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে চামরা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
যদিও ঈদের আগে সরকারিভাবে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪৭-৫২ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা ও বকড়ির চামড়া ১২-১৪ টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৭ টাকা এবং খাসির চামড়া ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত দামে সিলেটে চামড়ার বেচাকেনা হয়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে সিলেটের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর টাকা আটকে আছে। এর ফলে চামড়া ব্যবসায়ে অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে গত দুই মৌসুম থেকে ট্যানারি মালিকেরা অল্প করে পাওনা টাকা পরিশোধ করেছেন। অনেক ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করেছেন।
ব্যবসায়ীদের হিসাবে, ঈদের দিন বৃহস্পতিবার ও পরদিন শুক্রবার মিলিয়ে সিলেটে প্রায় ৮০ হাজারটি চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট নগরে চামড়া কিছুটা বেশি দামে ও গ্রামাঞ্চলের চামড়া কম দামে কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। এসব চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। লবণ দিয়ে গুদামে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১২-১৫ দিনের মধ্যে সেগুলো ট্যানারি মালিকদের কাছে দেওয়া হবে।
সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, এবার ১ লাখ ১০ হাজার টাকার গরু কোরবানি দিয়েছিলেন। ওই গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ২৫০ টাকায়। তিনি আরো বলেন, ৯-১০ বছর আগে যে চামড়া ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা যেত, এখন সেটি ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ছাগলের চামড়া ব্যবসায়ীরা নিতেই চান না। সেগুলো বিনামূল্যে দিয়ে দিতে হয়।
নূরুল ইসলাম, হাজী ফারুক আহমদ, ফজলু মিয়া নামের কয়েকজন ব্যক্তি জানান, তাদের চামড়া মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন। তারা কত টাকায় বিক্রি করেছেন জানা নেই।
মাওলানা আমিন উদ্দিন নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষক জানান, তার মাদ্রাসার ছাত্ররা ২শ’ চামড়া সংগ্রহ করে। বিকেলে মনে হয়েছে চামড়াগুলো উল্টো বোঝায় পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পানির দামে নিতে চান। পরে কোন রকমে গড়ে ১৫০ টাকা করে চামড়াগুলো বিক্রি করেছেন। অনেকেই আবার চামড়া ফেলে দিয়েছেন।
সিলেটের শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ শামীম আহমদ বলেন, সমিতির ৫০ জন সদস্য রয়েছেন। এর বাইরে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ীও রয়েছেন। এবার সিলেটে মোটামুটি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। সিলেটে গোটা হিসেবে চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা চামড়াগুলোর দাম কিছুটা কম থাকে। গ্রামাঞ্চলে কোরবানি দেওয়া গরুগুলোর আকার কিছুটা ছোট থাকে। শহরাঞ্চলে বড় গরু কোরবানি দেওয়া হয় বলে দামও কিছুটা বেশি। আকারভেদে ৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত চামড়া কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। ছাগলের চামড়া কেনা হয়েছে ১০-২০ টাকায়।
শেখ শামীম আহমদ বলেন, চামড়াগুলো প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। সেখানেও খরচ বেড়েছে, চামড়ার দাম কম হওয়ার পেছনে সেটিও একটি কারণ। তবে যারা সরাসরি চামড়া সংগ্রহ করেন, তারা আরও কম দামে কিনে নিয়ে আসেন। তবে, এ বছর চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।