কমছেনা বজ্রপাত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১:০১:১২ অপরাহ্ন
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার আশঙ্কানিজের চিন্তা, মতামত এবং কাজকর্মকে সর্বাপেক্ষা উত্তম মনে করা এবং অন্যের সবকিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করার নামই আত্মপ্রশস্তি এবং ইহা একটি মারাত্মক চারিত্রিক দোষ। -ইমাম গাজ্জালি
বজ্রপাতে দেশে এখন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে বজ্রপাতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। এখানে বজ্রপাতে সপ্তাহে গড়ে চারজন মারা যাচ্ছে। জানা যায়, গত কয়েক বছরে দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা ও এতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। এবারের বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। একই সঙ্গে বজ্রপাতে মৃত্যুর হারও বেড়েছে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায়।
বর্ষা মওসুমের শুরু ও শেষের দিকে সাধারণত বজ্রপাতের প্রবণতা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে-জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ, তাল গাছের মতো লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ ও মেঘে মেঘে ঘর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, যত্রতত্র মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসানো, কলকারখানা ও মোটরগাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, কৃষিকাজে ভারি যন্ত্রের ব্যবহারসহ নানা কারণে বজ্রপাতের হার বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, অতিরিক্ত শকড বা ধাক্কার কারণে মানুষ হার্ট অ্যাটাক করে এবং মারা যায়। সাধারণত বিদ্যুৎ প্রবাহ মানুষের শরীর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অনেকটা ইলেকট্রিক শকের মতো। বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে মানুষ যেভাবে সঙ্গে সঙ্গে শকড হয়, ঠিক একইভাবে বজ্রপাতেও মানুষ শকড হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। আর ইদানিং মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে বা ঘন কালো মেঘের ওপরে ও নিচের অংশ দুটি পুল হিসেবে প্রবাহিত হয়। এ কারণে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কালো মেঘের ঘনত্ব বেড়ে গেছে। হঠাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, বজ্রপাত সারা বছরই কমবেশি হয়। তবে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বজ্রপাতের হার বেড়ে যায়। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে পাঁচটি এলাকা সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতপ্রবণ। এগুলো হচ্ছে-শ্রীমঙ্গল, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর এবং সৈয়দপুর। এই পাঁচটি এলাকায় বছরে গড়ে ৩২৪, ৩২৪, ২০৬, ১৯৫ এবং ১৭৯টি বজ্রপাত ঘটে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানো যায় না; তবে সতর্কতা অবলম্বন করলে এর হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়। যখনই মাথার ওপর গভীর কালো মেঘ দেখা যাবে তখনই বুঝতে হবে যে এখানে বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। আর খোলা জায়গায় কোথাও আশ্রয় না থাকলে নিজেকে গুটিয়ে বসতে হবে। বজ্রবৃষ্টি শুরু হলে তা ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থাীয় হয়। এ সময়ে মানুষকে ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে যেতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। টিনের চালা এড়িয়ে উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার, ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্র নিরোধক দ- স্থাপন বাধ্যতামূলক করতে হবে। হাওর ও উন্মুক্ত এলাকায় মানুষের চুলই সতর্কবার্তা দিতে পারে। বজ্রপাতের আগে মানুষের মাথার চুল খাঁড়া হয়ে যায়। এটা একটা সতর্কবার্তা। তখনই দ্রুত সাবধান হতে হবে।