চামড়াশিল্প কি উপেক্ষিতই থাকবে?
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৩, ১:০৯:১২ অপরাহ্ন
আলী আহসান
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বড় দুটি উৎসবের একটি হচ্ছে ঈদুল আজহা। বলা বাহুল্য, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তথা জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে ঈদুল আজহার। এ ঈদে প্রতি বছর বিভিন্ন গৃহপালিত পশু যেমন গরু, ছাগল, উট, দুম্বা ইত্যাদি পশু কুরবানি করা হয়। ধর্মীয় নীতি অনুসারে মানুষ এই ত্যাগ স্বীকার করে থাকে এবং কুরবানির পশুর মাংস সমাজের পিছিয়ে পড়া গরিব-দুস্থ মানুষের মাঝে বণ্টন করা হয়। এতে করে একদিকে যেমন সমাজের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সুষম খাদ্য তালিকার ঘাটতি সাময়িক সময়ের জন্য হলেও কিছুটা পূরণ হয়, পাশাপাশি আমাদের অর্থনৈতিক খাতে কুরবানিকৃত পশুর চামড়া অর্থ উপার্জনে রাখে বিশেষ ভূমিকা।
বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হলো ‘চামড়াশিল্প’। চামড়া দিয়ে বিভিন্ন পণ্য দ্রব্য তৈরি করা হয়। এসব পণ্য যেমন দেশের বাজারে বহুল প্রচলিত, তেমনি বিদেশে চামড়াজাত পণ্যের বেশ খ্যাতি রয়েছে। ব্যাগ, জুতা ও বিভিন্ন পরিধেয় সামগ্রী তৈরিতে চামড়ার কোনো বিকল্প নেই। চামড়ার তৈরি জিনিসপত্র বেশ চড়া দামেই বিক্রয় হয় দেশ-বিদেশে। এই অবস্থায় কুরবানির সময়ে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ চামড়া জাতীয় অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু হতাশার খবর এই যে, প্রতি বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ চামড়ার যোগান থাকলেও চামড়া বিক্রয়কারীরা ন্যায্য মূল্য পান না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রয় করতে হয়।
আমাদের দেশে কুরবানির ঈদ আসলেই খবরের শিরোনামে সিন্ডিকেট শব্দটি বার বার উঠে আসে। এই সময় কুরবানিদাতারা চান কাঁচা চামড়া দ্রুত ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে গরিব-অসহায়দের মাঝে অর্থ বণ্টন করতে। কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু কুরবানিদাতারা ন্যায্য মূল্যে চামড়া বিক্রয় করতে পারেন না, ফলে স্বভাবতই বঞ্চিত হন সমাজের গরিব ও অসহায় মানুষ। এতে করে দেশও হারায় বিপুল পরিমাণ অর্থ! একদিকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কুরবানিদাতাদের কাছে থেকে বেশি দামে চামড়া কিনতে রাজি হয় না, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও ট্যানারি মালিকরা বেশি দামে চামড়া ক্রয় করতে নানা টালবাহানা করে থাকেন। এসবের মাঝখানে তৈরি হয় ‘সিন্ডিকেট’। এটা অনেকটা শুভঙ্করের ফাঁকির মতোই, কেননা যেই চামড়ার দাম নিয়ে এত অবহেলা চলতি মৌসুমি সেই চামড়ার জিনিসের দাম কিন্তু কম নয়!
সম্ভাবনাময় এই চামড়া শিল্পের এরূপ দামের উঠানামার জন্য এই শিল্প আজ অনেকটাই স্তিমিত হয় গেছে। এ দেশে চামড়া খাতের যাত্রা শুরু হয় বিগত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে। ১৯৪০ সালে ব্যবসায়ী রণদা প্রসাদ সাহা (আরপি সাহা) নারায়ণগঞ্জের কাছে সর্বপ্রথম একটি ট্যানারি প্রতিষ্ঠা করেন। যাহোক, অতীতে চামড়াশিল্প বেশ সমৃদ্ধ ছিল, বলা যায়। সর্বশেষ গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা। সুতরাং, চামড়াশিল্প ঘিরে বৃহৎ পরিসরে কাজ শুরু করা দরকার।
চামড়া শিল্পের বর্জ্য পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বটে। কাজেই এই শিল্পের উন্নতির জন্য বিজ্ঞানসম্মত পরিবেশবান্ধব অবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। এই শিল্পের জন্য আলাদা ‘শিল্প এলাকা’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়েছি আমরা। এখর দরকার শুধু বড় পরিসরে কাজ শুরু করা। এছাড়া এই শিল্পের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসনিক তদারকি বাড়ানো বিশেষভাবে জরুরি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, চামড়া শিল্পে আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক শ্রেণি গড়ে তুলতে পাড়ি, চামড়ার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি, তবে চামড়াশিল্প পোশাক শিল্পের মতোই বৃহৎ রপ্তানিমুখী শিল্প হয়ে উঠবে।
লেখক : শিক্ষার্থী।