দিরাইয়ে হাওরপারের মানুষের যত সমস্যা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৩, ৯:৫০:৪৪ অপরাহ্ন
দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে সংবাদদাতা : হাওর পাড়ের মানুষেরা প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি গড়ে যুগ যুগ ধরে তাদের জীবন পরিচালনা করে আসছেন। হাওর বললেই চোখে ভেসে ওঠে বিস্তীর্ণ জলরাশির এক সীমাহীন প্রান্তরের ছবি। বর্ষায় পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে হাওর। কান পাতলেই শোনা যায় বিশাল ঢেউয়ের গর্জন। বিশাল এ ঢেউ অনেক সময় মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বেশিরভাগ সময় বিশাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে মানুষের বসতভিটা ভেঙে পানিতে বিলীন হয়ে যায়। ঢেউ থেকে ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য বছরের পর বছর লড়াই করতে হয় হাওরবাসীকে। ভাঙন প্রতিরোধে ইট বস্তা, কচুরিপনা দিয়ে বাড়ির চারপাশে নির্মাণ করতে হয় শক্ত বাধ। ঢেউয়ের তালে বাড়তে থাকে মানুষের হাহাকার আর তীব্র আর্তনাদ। দিন যতই যায়, হাওরের মানুষের সংকট ততই গভীর হয়। হাওর অঞ্চলের মানুষের সমস্যার শেষ নেই। প্রকৃতির সঙ্গে রীতিমত সংগ্রাম করে তাদের বেঁচে থাকতে হয়।
হাওরের প্রধান সমস্যা হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। বর্ষায় নৌকা ও ট্রলার ছাড়া যোগাযোগের আর কোন মাধ্যম থাকে না। হেমন্তে পায়ে হাঁটা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। হাওরবাসীর পশ্চাৎপদতার পেছনে মূলতঃ প্রাচীন যোগাযোগ ব্যবস্থাই দায়ী। হাওর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রবাদ আছে বর্ষায় নাও, হেমন্তে পাও।
হাওর এলাকার বেশিরভাগ মানুষ গরীব। তাদের অধিকাংশই মূলত কৃষিকাজ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের আয়-রোজগার খুবই সীমিত। এই সীমিত আয় দিয়ে খুব কষ্ট করে সংসার চালাতে হয় তাদের। দিরাই উপজেলার করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা সিলেট জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক সিরাজুল আমীন চৌধুরী জানান, এক সময় হাওরের জমি, জল ফসল ও মাছের মালিকানা হাওরবাসীর কাছে থাকলেও কালের পরিক্রমায় ইজারাদাররা পরে মাছের মালিকানা পেয়ে যান। তিনি দাবি করে বলেন, মাছের মালিকানা যদি সাধারণ জেলেদের হাতে দেয়া যেত, তাহলে এলাকার গরীব অসহায়দের দুঃখ-কষ্ট অনেকটাই কমে আসত।
হাওরাঞ্চলের চিকিৎসা সংকট বড়ই নাজুক। উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সুবিধা থাকলেও সেখানে ভালো ডাক্তার, পর্যাপ্ত লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাছাড়া প্রাচীন যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে জরুরি মুহূর্তে কোন রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ফলে অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অন্যদিকে, প্রসুতি মা ও শিশু মৃত্যুর হার এখানে অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি। এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে এসব কথা ব্যক্ত করেন দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার রফিনগরের সামন্ত দাশ। জাগো দিরাই নামের সামাজিক সংগঠনের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী জানান, শিক্ষা-দীক্ষায় হাওরাঞ্চল এখনও অন্যান্য উপজেলা থেকে অনেক পিছিয়ে। বছরের অধিকাংশ সময় হাওরাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত থাকায় শিশুরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। তাছাড়া পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণে হাওরাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। অধিকাংশ এলাকাতে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় শিক্ষকরাও হাওরাঞ্চলে পড়াতে আগ্রহী হন না, বরং তারা অন্যত্র বদলি হয়ে যান।