ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১০:০০:১২ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি
স্টাফ রিপোর্টার : বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের চাপ কমায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, চলতি, যাদুকাটা, কালনী, রক্তি, পাটলাইসহ আরো একাধিক নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। সেই সাথে কমেছে হাওরের পানি। বন্যার আতঙ্ক কমলেও হাওরবাসীর ভোগান্তি বেড়েছে।
এদিকে, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নি¤œাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
কমলগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কমলগঞ্জে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার নি¤œাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে, কমলগঞ্জ পৌরসভার নতুন নির্মিত নালার মুখ ধলাই নদীর সাথে যুক্ত করার কারণে নালা দিয়ে পানি প্রবেশ করে কমলগঞ্জ পৌরসভার ২, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ঢলের পানি প্রবেশ করছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে ৩টি ওয়ার্ডে প্রায় শতাধিক পরিবার ও ১০টি দোকানপাট। তাদের বসত ঘর ও দোকানে ইতোমধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পরিবারের মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে আবারও ভারি বর্ষণ শুরু হয়েছে।
কমলগঞ্জ পৌরসভা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভারি বর্ষণের কারণে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। পৌরসভার ভেতর ধলাই নদীর পুরাতন সেতু সংলগ্ন এলাকার নালা দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ করে পৌর এলাকার চন্ডিপুর, উত্তর আলেপুর, পানিশালা, দক্ষিণ কুমড়াকাপন গ্রামের সড়ক, কমলগঞ্জ থানা, ডাকঘর, কমলগঞ্জ কালিবাড়ি, কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও আশপাশের বাড়ি ঘর নিমজ্জিত রয়েছে। এছাড়া, ভারি বর্ষণে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নি¤œাঞ্চলের পতনউষার, আলীনগর, আদমপুর ও মাধবপুর এলাকার আউশ ফসলিজমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানিবন্দি এলাকার মানুষ জানান, সম্প্রতি পৌরসভার ভেতর দিয়ে নালা করা হয়েছে। নালা নির্মাণের সময় একটি স্লুইসগেট তৈরির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নালার মুখ উন্মুক্ত রাখায় আজ এ দুর্ভোগে পড়তে হলো। এই নালা দিয়ে ধলাই নদীর পানি প্রবেশ করে আমরা পানিবন্দী হয়ে পড়েছি। নালার মধ্যে স্লুইস গেইট না দিলে নদীর পানি বাড়লেই আমরা পানিবন্দি হয়ে যাবো।
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ বলেন, ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ডে পানি প্রবেশ করে বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলে প্রাথমিকভাবে নালা দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা পানিবন্দি মানুষের পৌরসভার পক্ষ থেকে শুকনা খাবার বিতরণ করছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পর্যবেক্ষক সাকিব হোসেন ধলাই নদের পানি বৃদ্ধির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বৃষ্টি না হলে রাত থেকে নদীর পানি কমে আসবে। তবে উজানে ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি না কমলে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া, ভানুগাছ রেলসেতু এলাকায় ধলাই নদীর পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে উজানে ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি না কমলে ধলাই নদীর পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা যায়।
ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে আসা পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, বন্যা পুনর্বাসন ও সতর্কীকরণ বিষয়ক তথ্য অনুযায়ী উজানে ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনায় কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রিজুওয়ান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, দোয়ারাবাজারের উজানে পানি হ্রাস পেলেও নিম্নাঞ্চলে বাড়ছে। ফলে, ভারত সীমান্তঘেঁষা লক্ষ্মীপুর, বগুলাবাজার, সুরমা, বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়নসহ উজানের পানি ধীরগতিতে হ্রাস পাওয়ায় জনদুর্ভোগ কমছে না। অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল বিরত থাকলে নিম্নাঞ্চলের পানি হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জের পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে অব্যাহত ভারি বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে জেলার উপরিভাগের উপজেলাগুলো হতে পানি দ্রুত হ্রাস পাবে।