বরফ গলছে হিমালয়ের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১০:২৩:২৬ অপরাহ্ন
কৃতজ্ঞ কুকুর অকৃতজ্ঞ মানুষের চেয়ে শ্রেয়। -শেখ সাদি
বরফ গলছে হিমালয়ের। বৈষ্ণিক উষ্ণায়নের প্রভাবে হু হু করে গলছে হিমালয়ের বরফখ-। এশিয়ার অন্যতম পানির উৎস হিমালয়। গত দশকের তুলনায় হিমালয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে প্রায় ৬৫ শতাংশ হিমবাহ। আর তাই অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে ১২ নদীর ভবিষ্যৎ। এই আশংকা বিজ্ঞানিদের।
উষ্ণায়ন মানবজাতির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ন সমস্যা। এটি কেবলমাত্র পরিবেশগত সমস্যা নয়, মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে চলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে বায়ুমন্ডলীয় তাপমাত্রার ক্রমান্বয় বৃদ্ধি তথা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাকেই বোঝায়। গবেষণার তথ্য হচ্ছে, গত ১৫০ বছর ধরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক শ বছর পূর্বে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বর্তমানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়েছে এক দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। গবেষণায় দেখা গেছে, গত ১৫০ বছর ধরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ১৯১০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে। আবার ১৯৪০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাসও পেয়েছে। কিন্তু ১৮৫০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে তাপমাত্রার তেমন কোন পরিবর্তন দেখা যায় নি। বিগত কয়েক দশক ধরে তাপমাত্রা প্রতি দশকে প্রায় দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পৃথিবীর উষ্ণতম বছরগুলো ছিলো এই সময়ের মধ্যেই। কিন্তু অতিসম্প্রতি উষ্ণায়নের ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশসহ হিমালয় অঞ্চলের আট দেশের জন্য দুঃসংবাদ দিচ্ছেন বিজ্ঞানিগণ। এই অঞ্চলের ১৬৫ কোটি মানুষের পানির উৎস হিমালয়ের হিমবাহ। এতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবসহ বরফ গলা নদীতে দেখা দেবে প্লাবন। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে হিমবাহগুলো তাদের আয়তনের এক-তৃতীয়াংশ হারাবে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে দরিদ্রতম দেশগুলো।
আসল কথা হলো, মানুষের কিছু অবিবেচনা প্রসূত কাজকর্মের জন্য বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। অর্থাৎ মানুষের কারণেই গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে এই গ্যাসের দ্বারা শোষিত তাপের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বায়ুম-লীয় তাপমাত্রার পরিমান বেড়ে গিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটছে।আর বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে উষ্ণতা ও সমুদ্রতলের উচ্চতার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিশ্ব আবহাওয়ার গতি প্রকৃতির আগাম পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। বাড়ছে জলবায়ুগত দূর্যোগ- যেমন খরা, বন্যা ও ঝড়ের মাত্রাা। এই অবস্থায় যথাযথ সতর্কতার বিকল্প নেই।