প্রসঙ্গ : বৃক্ষরোপণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুলাই ২০২৩, ৪:৫৯:০৪ অপরাহ্ন
আসাদুজ্জামান চৌধুরী
গ্রীষ্মের ধূলিধূসর রুক্ষতার মালিন্য মুছে দিতে স্নিগ্ধতার ডালি নিয়ে প্রকৃতিতে এসেছে বর্ষা। এই বর্ষা মৌসুম হলো গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। তাই প্রতি বছর বর্ষাকাল ঘিরে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ও অসংখ্য পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগান। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, রোপণকৃত চারাগুলোর মধ্যে সিংহভাগ গাছ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে না। এর প্রধান কারণ স্থান উপযোগিতার ভিত্তিতে বৃক্ষরোপণ না করা। এ সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা থাকা একান্ত জরুরি।
সঠিক জায়গায় সঠিক প্রজাতির বৃক্ষরোপণ বনায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর তথ্যমতে, হাট-বাজারে রোপণ উপযোগী গাছ হলো বট, অশ্বত্থ, তেঁতুল, মেহগনি, রেইনট্রি, কাঠবাদাম, কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদি। আবার শিল্প অঞ্চলে রোপণ উপযোগী গাছের মধ্যে নিম, নারিকেল, তাল, বকুল, দেবদারু, গাব, রাজকড়ই, পলাশ, থুজা, আরোকেরিয়া বেশ উল্লেখ্যযোগ্য। রাস্তা ও সড়কের ধারে আমরা সাধারণত বিভিন্ন প্রকারের গাছ রোপণ করে থাকি। কিন্তু কোন ধরনের চারা গাছ কোন সড়কের ধারে লাগাতে হবে, সে বিষয়ে আমরা অনেকেই ওয়াকিবহাল নয় বললেই চলে। সাধারণত সড়কের পাশে উঁচু ও গাছের ডালপালা সহজেই ছাঁটাই করা যায়, এমন গাছ রোপণ করা উত্তম। তাই মহাসড়কের ধারে রেইনট্রি মেহগনি, ঝাউ, বকুল, লোহাকাঠ, নিম, চিকরাশি, শিলকড়ই, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি রোপণ উপযোগী বৃক্ষ। আবার শিশু, দেবদারু, চম্পা, তুন, জাম, বাবলা, বকফুল, তাল, খেজুর, সিন্দুরী ইত্যাদি গাছগুলো ফিডার রোডে রোপণ করা উত্তম। সিটি রোডের ক্ষেত্রে নিম, চম্পা, পলাশ, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, ঝাউ গাছগুলো রোপণে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তাছাড়া তাল, খেজুর, খয়ের, বেলা, সিন্দুরী ইত্যাদি বৃক্ষগুলো রেললাইনের ধারে লাগানো উচিত। এছাড়া বাঁশ, জারুল, কদম, নারিকেল, খেজুর, পুন্যাল ও তালগাছ রোপণের উপযুক্ত জায়গা হলো বাঁধের ধার। দেশের যেসব বিল এলাকায় বছরে দুই-তিন মাস পানি জমে থাকে, সেসব স্থানে হিজল, করচ, বিয়াস, বরুণ, কদম, চালতা, অর্জুন, পিটালী, মান্দারগাছের চারা রোপণ করা উচিত। সাধারণত আমাদের গৃহস্থালির আশপাশে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আমড়া, সুপারি, লিচু, জাম্বুরা, জলপাই, ডালিম, তেজপাতা, সফেদা, কলা, পেঁপে, নারিকেল, পাথরকুচি ও বাঁশ ইত্যাদি রোপণ উপযোগী বৃক্ষ। পাশাপাশি পাকা বাড়ির ছাদে টবের মধ্যে গাছের বিভিন্ন চারা, যেমন- কমলালেবু, পেয়ারা, কুল, জাম্বুরা, ডালিম, মেহেদি, লিচু প্রভৃতি রোপণ করা যায়। কবরস্থান ও শ্মশানের জন্য রোপণযোগ্য গাছের মধ্যে পলাশ, বকুল, শিমুল, বট, অশ্বত্থ, বেল, সোনালু, পাতাবাহার, মেহগনি ও থুজা উল্লেখ্যযোগ্য। বলা বাহুল্য, পুকুরপাড়ে মাছ ও পানির সুরক্ষার জন্য পাতাঝরা উদ্ভিদ লাগানো অনুচিত। তাই এ স্থানে নারিকেল, সুপারি, বাঁশ, পেয়ারা, তাল, দেবদারু ও খেজুরগাছ রোপণে প্রধান্য দিতে হবে। উপকূলীয় নতুন চরে বনায়নের জন্য কেওড়া, বাইন, কাকড়া, গরান, গোলপাতার চারা লাগাতে হবে। পাশাপাশি জেগে ওঠা উঁচু চরে আমাদেরকে বাবলা, ঝাউ, সনবলই, করচ, পানিবিয়াসী গাছগুলো রোপণ করা উচিত। আবার নদীবক্ষে জেগে ওঠা নতুন চরে বনায়নের ক্ষেত্রে ঝাউ, লোনা-ঝাউ, পিটালী, করচ ইত্যাদি বৃক্ষগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। সর্বশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও হাসপাতালের প্রাঙ্গণে সবুজায়নের জন্য নারিকেল, কাঠবাদাম, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, মেহগনি, আম, জারুল, দেবদারু, বকুল, গাব ও থুজাসহ ইত্যাদি গাছ রোপণ করা উত্তম।
এভাবে আমরা যদি স্থান ও বৃক্ষের বৈশিষ্ট্য বিচারে বিভিন্ন স্থানে নানান প্রজাতির গাছ রোপণ করি, তাহলে প্রতি বছর আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তি কর্তৃক গৃহীত বনায়ন কর্মসূচির রোপণকৃত গাছ সহজেই দেশকে সবুজায়ন করে তুলবে, যা কেবল দেশের নিসর্গ-প্রকৃতির শোভা বৃদ্ধি নয়, পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
লেখক : শিক্ষার্থী।