জগন্নাথপুরে যানজট নিরসনে স্বেচ্ছাসেবক একদল তরুণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুলাই ২০২৩, ৩:০১:২৯ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের নলজুর নদের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ডাক বাংলো সেতুর যানজট নিরসন ও দুর্ঘটনা এড়াতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মাঠে কাজ শুরু করেছেন একদল তরুণ। তরুণরা ফেয়ার ফেইস নামের একটি সামাজিক সংগঠনের সদস্য। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেতুর দুই পাড়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে তারা যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখেন। তাদের কাজে প্রশাসন ও এলাকার লোকজন খুশি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টির কারণে উপজেলা সদরের নলজুর নদের গুদামের সামনের ওপর নির্মিত বিকল্প বেইলি সেতু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ডাক বাংলো সেতুটি যান চলাচল ও মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হওয়ায় যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। পাশাপাশি ডাকবাংলো সেতুটিও ঝুঁকির মুখে পড়ে। গত সোমবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি সভা ডেকে ডাকবাংলো সেতু দিয়ে জরুরি সেবার পরিবহন ও মোটরসাইকেল ব্যতিত সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু, এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিপুল সংখ্যক যানবাহান চলাচল করায় সীমাহীন দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক সংগঠন ফেয়ার ফেইসের তরুণরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে ট্রাফিকের পাশাপাশি তাঁরা নিজেরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ফেয়ার ফেইসের প্রতিষ্ঠাতা এম. শামিম আহমদ বলেন, ২০১৯ সালে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে আমাদের এ সংগঠনের জন্ম হয়। সংগঠনে বর্তমানে প্রায় তিন শতাধিক সদস্য রয়েছেন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠা থেকে সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছি। যার ধারাবাহিকতায় জনদুর্ভোগ লাগবে আমরা কাজ করছি।
ডাকবাংলো সেতু এলাকার ব্যবসায়ী সুহানুর রহমান বলেন, যানবাহনের প্রচ- চাপে গত কয়েক দিন ধরে মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে একদল তরুণ শৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠে কাজ করায় শৃঙ্খলা এসেছে। তাদের কাজে আমরা খুশি ।
সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, নলজুর নদের দুই সেতু দিয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে। অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে যান বাহন চালানোর চেষ্টা করছেন। আমরা ওই সেতুতে দুর্ঘটনা এড়াতে ও জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে মানুষ জনকে বুঝিয়ে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা করছি। আবার জরুরি পরিবহনগুলো যাতায়াতেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আমরা ২০ জন আজ মাঠে কাজ করেছি। তিনি বলেন, যতদিন গুদামের সামনের সেতু চালু হবে না, ততদিন আমরা পালা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করব।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডাক বাংলোর সেতুর দুই পাড়ে তরুণরা কাজ করছেন। কেউ বা হ্যান্ড মাইকে জনসাধারণকে সচেতন করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ শৃঙ্খলার মাধ্যমে লোকজনকে চলাচল করতে সহায়তা করছেন। জরুরি প্রয়োজনের গাড়ি পারাপারে দুই পাড়েই তরুণরা ভূমিকা রাখছেন। তিনজন ট্রাফিক পুলিশকেও দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের ট্রাফিক বিভাগের জনবল সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় জনদুর্ভোগ নিরসনে তরুণরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় জনদুর্ভোগ লাগব হয়েছে। তরুণদের কার্যক্রমে আমরা খুশি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ মাসে নলজুর নদীর ওপর গুদামের সামনের সরু সেতুটি ভেঙে ঢাকার হাতির ঝিলের আদলে দৃষ্টি নন্দন আর্চ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে এলজিইডি। যার জন্য বিকল্প বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। গত সোমবার সেতুটি তলিয়ে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অপরদিকে, ২০২১ সালে নলজুর নদ খননকালে সেতুর পিলারের কাছ থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার সময় সেতুর দুটি অংশ দেবে যায়। এক বছর যানচলাচল বন্ধ থাকার পর গত ২৩ মার্চ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জগন্নাথপুর পৌরসভা সেতুর দেবে যাওয়া অংশে ষ্টীলের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি চালু করে। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এ সেতুটি ঝুঁকিতে পড়ায় উপজেলা প্রশাসন আবারও সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।