বিদেশি বৃক্ষের আগ্রাসন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২৩, ২:০৯:৪৭ অপরাহ্ন
অহংকার এমন এক আবরণ যা মানুষের সকল মহত্ব আবৃত করে ফেলে। -জাহাবি
বিদেশি বৃক্ষ ‘খেয়ে ফেলছে’ দেশীয় বৃক্ষ। অবিশ্বাস্য হলেও এমন ঘটনা ঘটছে দেশে। নানাভাবে আমাদের সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিতে ঢুকে পড়েছে বিদেশি প্রজাতির অনেকগুলো বৃক্ষ। বিদেশি এসব গাছ ও গুল্মের ক্রমাগত বর্ধনের ফলে গত এক দশকে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে অন্তত এক হাজার প্রজাতির নিজস্ব গাছ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি প্রজাতির নানান বৃক্ষ বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের অপরিসীম ক্ষতি করছে। তাই পরিবেশ বাঁচাতে বিদেশি ক্ষতিকর বৃক্ষ বর্জন করতে হবে।
সবুজ গাছপালায় আচ্ছাদিত আমাদের গ্রাম বাংলা। এখানে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় অসংখ্য প্রজাতির বৃক্ষ, গুল্ম, লতাপাতা। তবে সময়ের পরিক্রমায় আমাদের বৃক্ষ সম্পদ ধ্বংসের পথে। নানা কারণে দেশের বৃক্ষ সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আয়তনের ২৫ শতাংশ জমিতে গাছপালা বা বন জঙ্গল থাকার কথা থাকলেও এর অর্ধেক জমিতেও নেই বৃক্ষসম্পদ। আবাসন নির্মাণের পাশাপাশি জালানির কাজে ব্যবহারের জন্য অবাধে কর্তন করা হচ্ছে বৃক্ষ সম্পদ। আর এই সুযোগেই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে দ্রুত বর্ধনশীল বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। এগুলো জালানি সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখে ঠিকই, তবে ক্রমাগত মাটি ও পরিবেশের সর্বনাশ করে চলেছে। বিদেশি বৃক্ষগুলো বাংলাদেশের মানুষই যেমন এনেছে, আবার কিছু উদ্ভিদ নিজেই বাংলাদেশে ইকোসিস্টেমে বা বাস্তুসংস্থানের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বিদেশি প্রজাতির রেইনট্রি, সেগুন, আকাশমণি, আকাশি, শিশু, বাবলা, ইউক্যালিপ্টাস জাতীয় গাছের জন্য প্রচুর জায়গার দরকার হয়। এগুলো দেশি গাছের তুলনায় অনেক দ্রুততার সঙ্গে বেশি পরিমাণে পুষ্টি ও পানি শোষণ করে। তাই এসব বৃক্ষের আশেপাশে দেশিয় প্রজাতির বৃক্ষ বাঁচতে পারে না। বৃটিশ আমলে বৈধভাবেই দেশে আসে রেইনট্রি, মেহগনি, চাম্বুল ইত্যাদি। আশির দশকে আসে আকাশমণি, ইউক্যালিপ্টাস, শিশু, ইপিলইপিল, বাবলা ও খয়ের জাতীয় গাছ। আর বিভিন্ন সময় অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করেছে- রিফুজিলতা, স্বর্ণলতা, মটমটিয়া, পিসাইস, পার্থোনিয়াম, কচুরিপানা ইত্যাদি।
গবেষকদের মতে, অতীতে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির বৃক্ষ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে এক হাজারের বেশি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বিদেশি এইসব আগ্রাসি বৃক্ষ। আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশীয় বট, কদম, হিজল, জারুল, তমাল প্রভৃতি বৃক্ষের সমারোহ বাড়াতে বর্জন করতে হবে বিদেশি বৃক্ষগুলোকে। পানিতে শাপলা-পদ্মের অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য বর্জন করতে হবে কচুরিপানাকে। সব মিলিয়ে বিদেশি বৃক্ষের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে সরকারিভাবে ব্যাপক প্রচারণা দরকার।