বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২৩, ১০:২৯:৩৫ অপরাহ্ন
নীরবতা এক ধরনের অলংকার, যা মহিলাদের জন্য অত্যন্ত শোভনীয়। -হেনরি ডেজন।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস আজ। ভারসাম্যপূর্ণ জনসংখ্যার ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রতি বছর ১১ই জুলাই পালিত হয় দিবসটি। ১৯৮৭ সালের ১১ই জুলাই তারিখে বিশ্ব জনসংখ্যা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি এই দিবসটি ঘোষণা করে। দিবসের লক্ষ হলো পরিবার পরিকল্পনা, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, মাতৃস্বাস্থ্য এবং মানবাধিকারের মতো জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। জনসংখ্যাকে ‘সম্পদ’ বলা হলেও অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পদ নয়, বরং বোঝা। অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ, বেকারত্ব, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা ইত্যাদি সমস্যার প্রধান কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। মূলত একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে জনসংখ্যাকে ভারসাম্যপূর্ণ, সীমিত রাখার আহবান জানানোই দিবসটি পালনের প্রধান লক্ষ। মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিগত ৩৪ বছর ধরে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বজনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতি মিনিটে আড়াইশ’ শিশু জন্মগ্রহণ করে। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। এই ধারণা প্রচলিত দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু অতি সম্প্রতি সেই ধারণা পাল্টে গেছে। একটা মহল বলছেন, পৃথিবীতে বর্তমান যে প্রযুক্তি ও উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধি ঘটছে তাতে সব মানুষের কাজ ও খাদ্যের সমস্যার সমাধানটা কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যা প্রয়োজন তাহলো উৎপাদনের উপকরণের ওপর সব মানুষের অধিকার। তাদের মতে, জনসংখ্যা কখনও সমস্যা নয়। বরং জনসংখ্যায় ধস নামছে। যেভাবে জন্মহার কমছে, তার ফলে এই শতাব্দির শেষ নাগাদ বিশ্বের প্রায় সবদেশেই জনসংখ্যা কমে যাবে। এমনকি অনেক দেশে তখন জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। পাশাপাশি সব দেশেই জনসংখ্যার অনুপাতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। যতো নতুন শিশু জন্ম নেবে, ৮০ বছর বা তদোর্ধ মানুষের সংখ্যাও হবে প্রায় তার সমান। জনসংখ্যায় এই ধস নামার কারণ হচ্ছে মহিলাদের জন্মহার কমে যাওয়া। ১৯৫০ সালে বিশ্বে নারীদের জন্মহার ছিলো চার দশমিক সাত। আর ২০১৭ সালে তা নেমে এসেছে দুই দশমিক চার এ। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের নারীদের সন্তান জন্ম দেয়ার হার এক দশমিক তিন-এ নেমে এসেছে। অপরদিকে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ধীরে ধীরে জনসংখ্যা কমিয়ে আনা উচিত। কারণ, পৃথিবীর যা সম্পদ রয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ দুইশ’ থেকে তিনশ’ লোককে জায়গা দেয়া সম্ভব। এই প্রেক্ষাপটে এটা বলতেই হয় যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির উর্ধ্বগতির লাগাম অনেকটাই টেনে ধরা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ দশমিক সাত শতাংশ বাস করে শুধু এশিয়া মহাদেশে। আর এক লাখ ৪৭ হাজার পাঁচশ ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বাংলাদেশে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোট। ১৯৬৪ সালে যেখানে জনসংখ্যা ছিলো তিন কোটির ওপরে।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হয় স্বাধীনতার পূর্ব থেকে বেসরকারি উদ্যোগে। স্বাধীনতার পরে এই কার্যক্রম সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। তৃণমূল পর্যায়ে শুরু হয় বেশ জোরে শোরেই পরিকল্পিত পরিবারের প্রচারণা। তখন ছিলো নারী প্রতি জন্মহার ছয় দশমিক তিন। সেখান থেকে বর্তমানে নেমে এসেছে এক দশমিক তিন-এ। এটাকে একটা সাফল্য বলেই ধরে নেয়া যায়। এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে জনসংখ্যা ভারসাম্যপূর্ণ পর্যায়ে রাখতে সবমহলই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সোচ্চার থাকবেন বলেই আমরা আশাবাদি।