চাল যেভাবে চিকন হয়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুলাই ২০২৩, ১:৪২:৪২ অপরাহ্ন
চরিত্রকে পুনরুদ্ধারের চেয়ে নির্মল রাখার চেষ্টা করা অনেক সহজ। -টমাস পেইন
মোটা চাল চিকন করে নানা নামকরণ করে ছাড়া হয়েছে বাজারে। সাধারণত মোটা চাল চিকন করে মিনিকেট, নাজিরশাইল, কাজল নামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। অথচ মিনিকেট-নাজিরশাইল নামে ধানের কোন জাত নেই। এভাবে মোটা চালের ভেতরের অংশ বেশি দামে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। মোটা চাল কেটে চিকন করে বেশি দামে বিক্রি করে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন এক শ্রেণির অসাধু মিল মালিক।
বাজারে রয়েছে হরেক নামের চাল। অথচ এসব নামের ধান উৎপাদন হয় না। অর্থাৎ যে নামে ধান চাষ হয় সেই নামে কোন চাল নেই বাজারে। বিভিন্ন নামে উৎপাদিত ধানের চাল বাজারজাত হচ্ছে আসল পরিচয়ের বাইরে অন্য নামে। সরকারের ধান গবেষণা, বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, দেশে উৎপাদিত চালের ৮৫ শতাংশই মোটা, আর ১৫ শতাংশ চিকন। আর দেশের চালকল মালিকরা মোটা চাল চিকন করে মিনিকেট, নাজিরশাইল, কাজল নামে বাজারজাত করছে। এতে মোটা চালের ভেতরের অংশ বেশি দামে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। এছাড়া চালের উপরিভাগে যে পুষ্টি থাকে তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন ওই চালের ভোক্তা। এতে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাছাড়া, সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলছেন, দেশে বছরে চার কোটি টন ধান ক্রাসিং করে ছোট করা হয়। এই চাল চিকন করতে গিয়েই চালের ৪-৫ শতাংশ উধাও হয়ে যায়। সে হিসেবে বছরে ১৬ লাখ টন চাল নষ্ট হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়া বন্ধ হলে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হতো না। সাধারণত চিকন চালের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বেশি থাকায় মিল মালিকরা ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ি চিকন চাল বাজারে সরবরাহ করে থাকে। সাধারণত গ্রাহকরা জিংক চালের জন্য উৎসাহ দেখান না এবং কৃষকরাও এই ধান চাষ করতে আগ্রহী হন না। কারণ জিংকসমৃদ্ধ ধানের চাল একটু মোটা হয়ে থাকে। গ্রাহক চিকন আর চকচকে চাল পছন্দ করে। সাধারণ চালেও পুষ্টি থাকে, তবে চাল চিকন করতে গিয়ে পুষ্টির অংশ ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে বোরো ও আমন মৌসুমে ব্যাপকভাবে চাষ হয় ব্রি ২৮ ও ব্রি ২৯ ধান। কিন্তু চালের বাজারে এই নামে কোনো চাল নেই। বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল নামে চাল পাওয়া যায়, কিন্তু এই নামে ধানের কোনো জাত নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রি-২৮ এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্রি-২৯ ধান কেটে ‘মিনিকেট’ নামে বাজারজাত করা হয়। একইভাবে ব্রি ২৯ ধান অধিক ছাঁটাই ও পলিশ করে চালের নাম দেয়া হয় ‘নাজিরশাইল’।
চাল নিয়ে এই প্রতারণা বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে চালের অপচয়। এব্যাপারে ইতোপূর্বে সরকারি তোড়জোড় লক্ষ করা গেলেও তার বাস্তবায়ন চোখে পড়ছে না। ইতোমধ্যে প্রতারণা রোধে বাজারে থাকা চালের উৎস ধানের জাত নির্ণয়ের উদ্যোগ নেয় সরকার। তাছাড়া চালের বস্তায় কোন জাতের ধানের চাল রয়েছে সেটা বস্তার গায়ে লিখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অথচ এসব নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বাজারে যথারীতি ‘মিনিকেট’-‘নাজির শাইল’ চাল বিক্রি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারকে আরও তৎপর হতে হবে।