শান্তিগঞ্জে মসজিদে কাঁঠালের নিলাম নিয়ে সংঘর্ষে আহত আরো ১ জনের মৃত্যু এ পর্যন্ত গ্রেফতার ১০
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুলাই ২০২৩, ৩:৩২:২১ অপরাহ্ন
শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় মসজিদে দানকৃত কাঁঠাল নিলামে তোলা ও দাম হাঁকানো নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আরো ১ জন মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তির নাম মুখলেছুর রহমান (৬০)। তিনি হাসনাবাদ গ্রামের মৃত আজির মোহাম্মদের পুত্র। গত সোমবার সকালে আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। সোমবার রাতে আত্মীয়ের বাড়িতে মারা যান তিনি। মুখলেছুর রহমানসহ সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো চারজনে। এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় এবাদুল হককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এবাদুলসহ এ পর্যন্ত আটক হয়েছে ১০ জন।
পুলিশ সূত্র জানায়, দুবাইগামী বিমান থেকে গত সোমবার দিবাগত গভীর রাতে এবাদুলকে নামিয়ে আনা হয়। হত্যার পরপরই সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে উঠেছিলেন তিনি। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে সুনামগঞ্জে নিয়ে যায়।
এর আগে গত সোমবার সংঘর্ষে আরো ৩ জন মারা যান। এসময় উভয়পক্ষের আরও ৪০ জন আহত হন। সোমবার বেলা ১১টায় উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। সোমবার নিহতরা হলেন হাসনাবাদ গ্রামের নুরুল হক, বাবুল মিয়া ও শাহজাহান মিয়া। সংঘর্ষে আহত ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সংঘর্ষের কারণে হাসনাবাদ গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। গ্রেফতারের ভয়ে উভয়পক্ষের অনেকেই আত্মীয় স্বজনের বাসা-বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আহতদের অনেকেই আত্মগোপনে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাসনাবাদ গ্রামে দীন ইসলাম ও মালদার মেম্বারের পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। চলছে মামলা মোকদ্দমা। সম্প্রতি উপেজলা চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ উপজেলার এবং ইউনিয়নের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে দীর্ঘদিনের পুরনো বিরোধ মীমাংসা হয়।
গত শুক্রবার বাদ জুমা হাসনাবাদ গ্রামের মসজিদে এক ব্যক্তি একটি কাঁঠাল দান করেন। গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে এই কাঁঠালটি নিলামে তোলা হয় এবং দাম হাঁকানো হয়। এতে গ্রামের দীন ইসলামের পক্ষের একজন দামের কথা শুনা যাচ্ছে না বলে আওয়াজ তুললে প্রতিপক্ষ মালদার মেম্বারের পক্ষের সুনু মিয়া ও জুনাব আলী গংরা বলে উঠেন মসজিদের ভেতরে অবস্থানকারী সবাই শুনলেও তোমরা কেন শুনতে পাওনি। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত ৩/৪ দিন ধরে দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিষয়টির সমাধান করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাশর্^বর্তী গ্রামের শালিসব্যক্তিরা উভয়পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। গত রোববার রাতে এ নিয়ে হঠাৎ দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়রা গিয়ে দুইপক্ষকে মারামারি না করার অনুরোধ করেন।
এদিকে, রাত পার হতেই সোমবার সকালে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বিষয়টি সমাধান করতে হাসনাবাদ গ্রামে ছুটে যান। দুই পক্ষের মুরুবŸিদের বুঝিয়ে সালিস মীমাংসায় সমাধানের আশ^াস দিয়ে সংঘর্ষে না জড়ানোর অনুরোধ করেন। দুই পক্ষ তখন সংঘর্ষ না করার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু চেয়ারম্যানসহ সালিসকারীরা চলে যাওয়ার পরপরই দীন ইসলামের লোকজনের সঙ্গে প্রতিপক্ষ মালদার মেম্বারের পক্ষের সুনু মিয়া ও জুনাব আলীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এতে দীন ইসলামের পক্ষের বাবুল মিয়া ও নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং মালদার মেম্বারের পক্ষের মো. শাহজাহান মিয়া ও মুখলেছুর রহমান মারা যান।
জয়কলস ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাছিত সুজন জানান, গ্রামের দুই পক্ষের মাঝে ক’দিন ধরে উত্তেজনা চলে আসছিলো। রোববার রাতে এবং সোমবার ভোরে হাসনাবাদ গ্রামে উভয়পক্ষের লোকজনের সাথে আলাদাভাবে বৈঠক করলে উভয়পক্ষের লোকজন আমাকে আশ্বস্ত করেন যে কোন পক্ষই মারামরিতে যাবেন না। এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের মিটিং থেকে বাসায় আসার পর শুনতে পাই উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে এখন পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খালেদ চৌধুরী জানান, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪ জন মারা গেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে উভয় পক্ষের ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। কোন পক্ষ এখনো অভিযোগ দেয়নি। তবে সংঘর্ষে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।