সিলেটে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০২৩, ২:৩৫:৩৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে পুলিশ কনস্টেবল স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে একাধিকবার নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার দুই সন্তানের জননী ইতোমধ্যে আদালতে মামলাও দায়ের করেছেন। পুলিশ সদস্যের অত্যাচারে কন্যার এমন অবস্থায় ওই নারীর অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য পিতা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্বামীর অত্যাচার নির্যাতনের পরেও ওই নারী সংসার রক্ষায় দুই সন্তানকে নিয়ে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
তবে, অভিযুক্ত কনস্টেবল মীর মনির হোসেন স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেটের ডাককে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সে আদালতে মামলা দায়ের করেছিল। আপসে আমি কারাগার থেকে মুক্তি পাই। পরে সাসপেন্ডও প্রত্যাহার করা হয়। এরপর আমি তাকে তালাক দিয়েছি। এখন বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে আরেকটি মামলা করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, কমলগঞ্জের ঘটনাটি সাজানো ছিল।’
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার হারিছনগরের মৃত মীর মোয়াজ্জেম হোসেনের পুত্র পুলিশ কনস্টেবল/১৫৬৬ মীর মনির হোসেনের সাথে পারিবারিকভাবে ২০১৯ সালের ১৭ জুন বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের বারইখালির (বর্তমানে বটেশ্বর, সিলেট সদর) অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য রফিকুল ইসলামের কন্যা তাওহীদা ইসলাম সাথীর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় পরিবারের পক্ষ থেকে বরপক্ষকে অনেক উপঢৌকন দেয়া হয়। বিয়ের পর কিছুদিন ভালোভাবে সংসার চললেও একসময় যৌতুকের জন্যে সাথীর উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন মনির। শুরু হয় পারিবারিক কলহ। এর মধ্যে এ দম্পতির দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট স্বামীর বিরুদ্ধে সিলেট আদালতে মামলা দায়ের করেন সাথী। ওই সময়ে সিলেটের পুলিশ সুপারের নিকট একটি অভিযোগও দেয়া হয়। তখন মনির ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় কর্মরত ছিলেন। মামলার প্রেক্ষিতে মনিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয় এবং এ ঘটনায় গ্রেফতার হবার পর ১৫ দিন জেলহাজতে ছিলেন। এক পর্যায়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। পুলিশী তদন্তে মনিরের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতনের সত্যতা মেলে। গোলাপগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পরিত্রাণ তালুকদার তখন ঘটনাটি তদন্ত করেন। শান্তিপূর্ণ আচরণের শর্তে- মনিরের স্বজনরা বাদীর সাথে আপসরফা করেন। এর ব্যত্যয় হলে বাদী তার ভাসুর সেনাসদস্য মীর মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন মর্মেও অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়। আপসনামার প্রেক্ষিতে মীর মনির জেল থেকে মুক্তি পান। মুক্তি পাবার পর কিছুদিন এ দম্পতির মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়। এর মধ্যে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার হবার পর বদলে যান মনির। নতুন করে ৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি করে বসেন বলে অভিযোগ সাথীর। বিষয়টি নিয়ে মনিরের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে সাথী দেখা করে প্রতিকার চান। এ প্রেক্ষিতে সিনিয়র এক কর্মকর্তা মনিরকে ডেকে পাঠালে তিনি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন বলে জানান।
এরপর সাথী তার স্বামী মীর মনির ও ভাসুর মীর মোশাররফের বিরুদ্ধে ফের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন আদালত। কিন্তু ‘রহস্যজনক’ কারণে পুলিশ মনির কিংবা মোশাররফ কাউকে গ্রেফতার করেনি।
মনিরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত মঙ্গলবার সিলেটের ডিআইজির নিকট লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মহিলা।