বদলে যাচ্ছে এডিস মশার আচরণ
সিলেটে ক্রমশ বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০২৩, ৩:২৭:০৯ অপরাহ্ন
চার জেলায় ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৮, সবমিলিয়ে আক্রান্ত ১০৩
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেটেও ক্রমশ বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা । গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটের ৩ জন ও হবিগঞ্জের ৪ জন এবং ১ জন মৌলভীবাজারের বাসিন্দা। এ নিয়ে সিলেট বিভাগে ১০৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার ৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গতকাল বুধবার সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সিলেট বিভাগে আক্রান্ত ১০৩ জনের মধ্যে সিলেটে ৭৫ জন, সুনামগঞ্জে ১২ জন, হবিগঞ্জে আটজন, মৌলভীবাজারে আটজন। আক্রান্তদের মধ্যে বর্তমানে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৬ জন। অন্যদিকে আগে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহক এডিস মশা শুধু দিনে কামড়াত, এখন রাতে কামড়ানোর চিত্রও দেখা যাচ্ছে। এ মশা আগে ডিম পাড়ত স্বচ্ছ পানিতে, এখন ডিম পাড়ছে ময়লা পানিতেও। এতটাই বদলে গেছে এডিস মশার আচরণ আর তাতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন শঙ্কা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুয়ায়ী, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু রোগে এখনও কেউ মারা যায়নি। তবে এ বছর জানুয়ারি থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১০৩ জন। এরমধ্যে সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় সিলেটে ডেঙ্গু ঝুঁকি ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
স্বাস্থ্যবিভাগের অভিযানে নগরীর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে নির্মাণাধীন ক্যান্সার ভবনে প্রচুর পরিমাণে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া পাঠানটুলা এলাকা, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড, ১০ নম্বর ওয়ার্ড ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি স্থানে এডিসের লার্ভার সন্ধান পেয়েছে বলে জানিয়েছে সিসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। তবে সেসব লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে। এরপরও সিলেটজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানামুখী চাপে আচরণ বদলাতে বাধ্য হয়েছে এডিস মশা। কীটনাশকনির্ভর মশা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আচরণ বদলাতে বাধ্য হয়েছে এ মশা। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। তখন থেকেই প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে অল্পবিস্তর ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হতে থাকে। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করে। তখন থেকে একটি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে ডেঙ্গু। চলতি বছরও সারা দেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহক এডিস মশা অল্প অল্প করে তার আচরণ বদলাচ্ছে। তাতেই নতুন নতুন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা।
সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কার্যালয়ের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. শরীফুল হাসান জানান, বিভাগের আক্রান্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিভাগে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি গোয়াইনঘাট উপজেলার। আক্রান্তদের কয়েকজন বাদে অধিকাংশেরই ট্র্যাভেল হিস্ট্রি নেই। তিনি জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সবার আগে এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে। চলতি জুলাই মাসের ১২ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ জন। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগী আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। প্রতিদিনই নগরের কোনা কোনো এলাকায় মশকনিধন অভিযান অব্যাহত আছে। এডিস মশা নিধনে আমাদের ভলান্টিয়ার ডোর টু ডোর কাজ করছে। তিনি বলেন, সিলেটে ডেঙ্গুরোগী বৃদ্ধি পাওয়া ও নগরীর বিভিন্ন স্থানে এডিসের লার্ভা পাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঠিক কী কী কারণে এডিস মশা তার আচরণ বদলেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মশা বিষয়ে জাপানের কানাজোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নানামুখী চাপে এডিস মশা তার আচরণ বদলাতে বাধ্য হয়েছে। মূলত মশাটি বাঁচার তাগিদেই তার কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে কীটনাশক বড় ভূমিকা পালন করেছে। সম্পর্ক আছে অপরিকল্পিত নগরায়ণেরও। সিটি কর্পোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকের ওপর বেশি নির্ভর করছে। আমরা বহু আগে থেকেই বলে আসছি, শুধু কীটনাশক ছিটিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এজন্য পুরো বছর পরিকল্পিত কাজ করতে হবে। সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ ছাড়া এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প পথ নেই।’