গৃহশ্রমিক নির্যাতন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুলাই ২০২৩, ২:৪৬:৫৪ অপরাহ্ন
আমি যদি নিজ চরিত্র সম্বন্ধে যতœবান হই তা হলে আমার খ্যাতি আপনা থেকেই আসবে। -ডি. এল. মুডিযার
বেড়ে চলেছে গৃহশ্রমিক নির্যাতন।বিচারহীনতার কারণে বাড়ছে এই অপরাধ। গবেষণায় দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশে ৩৩ জন গৃহকর্মি হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া, আগের ১০ বছরে ৫৮৫ জন গৃহকর্মি হতাহত হয়েছেন। এদের ৬৭ ভাগ মানসিক, ৬১ ভাগ মৌখিক এবং ২১ ভাগ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ গৃহকর্মে নিযুক্ত শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন, হত্যা, ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
দেশে গৃহশ্রমিকের প্রকৃত সংখ্যার কোন তথ্য নেই। ২০১০ সালের লেবার ফোর্স সার্ভে অনুযায়ি দেশে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১৪ লাখ। অথচ বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, এই সংখ্যা ২০ লাখের বেশি হতে পারে। অপরদিকে শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ অনুযায়ি, বাংলাদেশে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ, এদের শতকরা ৮০ ভাগই নারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, গৃহশ্রমিকরা অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক সব দিক দিয়েই দুর্বল অবস্থানে থাকে। ফলে তাদের নির্যাতনে জড়িতদের সাজা হয় না বললেই চলে। তাই বেড়ে চলেছে নির্যাতন। একটি গবেষণায় দেখা যায়, বর্তমানে ৮৪ শতাংশ গৃহশ্রমিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাছাড়া, বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্য হচ্ছে, সমাজে বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতি বিরাজমান থাকায় সাধারণ মানুষ বা দুর্বল মানুষের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়াটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মামলা হলেও অর্থের দাপট, পেশির দাপট এবং রাজনৈতিক দাপটের কারণে তার কোন বিচার হয় না। সাক্ষী সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় দুর্বল মানুষের পক্ষে দ্বিধাহীনচিত্তে সাক্ষ্য দিতে কেউ এগিয়ে আসে না।
গৃহশ্রমিক নির্যাতন প্রতিরোধে গৃহশ্রমিক কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করে সরকার। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রণীত এই নীতিমালায় গৃহকর্মীদের নিরাপত্তাসহ নানা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। যেমন- গৃহকর্মিকে চাকরি থেকে অপসারণ করতে হলে এক মাস আগে তা জানাতে হবে, গৃহকর্মি অপরাধ করলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে, তবে নিয়োগকারি নিজে তাকে শারীরিক বা মানসিক শাস্তি দিতে পারবেন না। আর গৃহকর্মির বয়স ন্যূনতম ১৪ বছর হতে হবে। আইনটি কার্যকর করা জরুরি। সেইসঙ্গে গৃহকর্মিদের শ্রম আইন, ২০০৬-এ অন্তর্ভুক্তি করতেও তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞগণ।