প্রতারকের খপ্পরে বিয়ানীবাজারের ভাতাভোগীরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুলাই ২০২৩, ৫:১২:১৭ অপরাহ্ন
বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে সংবাদদাতা : বিয়ানীবাজার উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে প্রতারণার মাধ্যমে বিধবা-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মোবাইলে নগদ অফিসের কর্মকর্তা কিংবা সমাজসেবা অফিসার পরিচয় দিয়ে জনৈক ব্যক্তি ফোন দিয়ে বিধবা-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে কৌশলে নিয়ে নিচ্ছে একাউন্টের তথ্য। পরে মিনিটের মধ্যে উধাও মোবাইলের সব টাকা। বিয়ানীবাজারে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ জন ভাতাভোগী প্রতারিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসে এমন অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসছেন।
প্রতারণার শিকার প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী নাজিম উদ্দিন বলেন, কয়েক দিন আগে আমাকে একজন ফোন দিয়ে বলে যে, তিনি জেলা সমাজসেবা অফিস থেকে কল করেছেন। আমার একাউন্ট আপডেট করা প্রয়োজন-সে জন্য কিছু তথ্য দিয়ে তাকে সহযোগিতা করতে। এ বলে আমার ফোনে একটি ম্যাসেজ পাঠায় এবং ম্যাসেজে আসা কোডটি বলতে বলে। আমি বলে দেই এবং আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন কেটে দেয়। এখন সবার ভাতার টাকা আসছে খবর শুনে আমার একাউন্ট চেক করে দেখি একাউন্টের টাকা উক্তোলন হয়ে গেছে। আমি নগদ এজেন্টের কাছে গিয়ে ক্যাশ আউট নম্বরের তথ্য জানতে চাইলে তারা কোন তথ্য নেই বলে ফিরিয়ে দেয়।
বয়স্ক ভাতাভোগী আজির উদ্দিন বলেন, একজন নগদ অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলে আপনার নগদ একাউন্টটি বন্ধ হয়ে যাবে। আপনার মোবাইলে একটি মেসেজ দেব-ওইটা আপনি আমাকে দিয়ে দিন, আমি এখান থেকে আপনার একাউন্ট রেডি করে দেব। কোড দেবার সঙ্গে সঙ্গে কিছুক্ষণ পর নগদ অ্যাকাউন্টে ঢুকে দেখি সব টাকা ক্যাশ আউট করা
হয়েছে।
প্রতিবন্ধি ভাতাভোগী মস্তাব আলী, আব্দুস শহীদ অভিযোগ করে বলেন, আমরা কোনো ফোন বা খুদে বার্তা পাইনি। তারপরও আমাদের সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব হলো।
সাংবাদিক রাজু ওয়াহিদ বলেন, ‘আমার ছেলে তাহসিন ওয়াহিদের প্রতিবন্ধী ভাতা আমার মোবাইল নম্বরে আসে। গত বুধবার বিকেলে ০৯৬৩৮৮৭৬৯৯৯-এই মোবাইল নম্বর থেকে আমার কাছে ফোন দেয়। সে নিজেকে সিলেট সমাজসেবা অফিসের ম্যানেজার রফিকুল বলে পরিচয় দেয়। সে জানায়, এখন থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা ৩ হাজার টাকা করে দেয়া হবে এবং সবার কোড পরিবর্তন করা হবে-এজন্য আমার নগদ পিনকোড দিতে হবে। আমি জবাব দেই যে, ‘বিয়ানীবাজার সমাজসেবা অফিস থেকে জানানো হয়েছে, পিন নম্বর কাউকে না দেয়ার জন্য। আমি থানায় ফোন করে অভিযোগ দেব।’ এরপর সে আমাকে বলে-“কার কাছে ফোন দেবেন, দেন। আমি লাইনে আছি।” এভাবে কয়েকবার বলার পরও আমি পিন না দেয়ায় সে আমার ভাতা বন্ধ করে দেবে এমন হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দেয়। পরে আমি বিয়ানীবাজার সমাজসেবা অফিসারের সাথে কথা বলে বিষয়টি জানাই।’
বিয়ানীবাজার উপজেলা সমাজসেবা অফিসার অনুজ চক্রবর্তী বলেন, জিটুপির মাধ্যমে ভাতাভোগীরা যেমন সুফল পাচ্ছেন; ঠিক তেমনি হ্যাকার ও প্রতারকের চক্রের দৌরাত্ম্যে আমাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। জিটুপিতে পে রোল দেয়ার পর আমাদের আর কোন ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। কেউ প্রতারণার শিকার হলে গঋঝ (নগদ/ বিকাশ) কর্তৃক আইনি প্রতিকারের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসলিম বলেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের মোবাইল ফোনে একটি প্রতারক চক্র ফোন দিয়ে নগদ অথবা বিকাশ পিন নম্বর চাচ্ছে-যা কোনভাবেই দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন তিনি।