সাপে কাটার ওষুধ নেই?
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৮:৪২ অপরাহ্ন

বিশ্বাস হচ্ছে বরফের মতো, খুব শীঘ্রই তা গলে যেতে পারে। -রবার্ট ফ্রস্ট
সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। মূলত ওষুধের স্বল্পতা ও সচেতনতার অভাবে সাপে কাটা রোগির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, সর্পদংশনে মৃত্যু হচ্ছে দিনে ১৭ জনের। আর বছরে মারা যান ছয় হাজারের বেশি। প্রতি বছর সর্পদংশনের শিকার হন পাঁচ লাখ ৯০ হাজার। সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বেশি বর্ষা মওসুমে। এই অবস্থায় সাপে কাটা রোগির চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ এন্টিভেনাম সরবরাহ নেই বিভিন্ন হাসপাতালে।
বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য গান, গল্প, উপন্যাস রচিত হয়েছে বেদে ও বেদেনিদের নিয়ে। বেদে-বেদেনিদের সাপের ঝাপি মাথায় নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য এখনও চোখে পড়ে। তারা সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এরা পোষ মানিয়েছে হিংস্র প্রাণিকে। সাপ সচরাচর তার প্রভূকে দংশন করে না। তবে কদাচিৎ সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ সাধারণ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সাপের কামড়ে। সাপের কামড়ের ৯৫ শতাংশ ঘটনা ঘটে গ্রামে। নারীর চেয়ে পুরুষের মধ্যে সাপের কামড়ের হার বেশি। অন্যদিকে ৩৫-৪৪ বছর বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি।
তাছাড়া, শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে সাপের আধিক্য এবং সাপে কাটার ঘটনা বেশি ঘটে। বিশেষ করে, গৃহিণীরাই সবচেয়ে বেশি ঘটনার শিকার হন। এরপর আছেন কৃষকেরা। অথচ উপজেলা পর্যায়ে সব হাসপাতালে এসব রোগির ওষুধ অ্যান্টিভেনাম নেই। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টিভেনাম মওজুদ থাকার কথা। সাপ একটি হিংস্র প্রাণি। তবে সাপের বেশির ভাগ প্রজাতি নির্বিষ এবং সাধারণত তারা শিকার করে শিকারকে চার পাশ দিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে। তুলনামূলক অল্প সংখ্যক সাপই বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে শিকারকে হত্যা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে রয়েছে ৮০ প্রজাতির সাপ। এর মধ্যে ৫২ প্রজাতির সাপই বিষাক্ত। বিশেষ করে গোখরা, দুমুখো সাপ ও গেছো সাপসহ কয়েকটি প্রজাতির সাপ ভয়ঙ্কর বিষধর। এগুলোর কামড়ে মানুষের মৃত্যু ঘটে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। তবে বিষধর সাপে কামড়ালে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে উন্নত চিকিৎসা দেয়া গেলে রোগি বেঁচে যায়।
সাপে কামড়ানো রোধ এবং প্রতিকারের কোন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি নেই সরকারের। এদেশে খুব কম সংখ্যক চিকিৎসক সর্পদংশন নিয়ে কাজ করছেন। চিকিৎসার ওষুধও যথেষ্ট নেই। বিশেষ করে উপজেলাসহ গ্রামাঞ্চলে সাপে কাটার চিকিৎসা যাতে সহজলভ্য হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি সর্প দংশনের সমস্যাকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। ওঝাদের চিকিৎসাকে দ-নীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি অ্যান্টিভেনাম সহজলভ্য করার জন্য দেশেই এই ওষুধ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।