হাওর জুড়ে মাছের আকাল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০২৩, ৩:৪২:২৪ অপরাহ্ন
দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে সংবাদদাতা : মৎস্য পাথর ধান-সুনামগঞ্জের প্রাণ। হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জের প্রতিটি গ্রাম ও হাওরে এখন বিস্তীর্ণ জলরাশি। হাওর ভর্তি পানি আর ঢেউ ঐতিহ্যের অপরূপ সুন্দরের এক লীলাভূমি। হাওরের এই সুনাম দেশ ছাড়িয়ে প্রবাসে বিস্তৃত। নানান জীববৈচিত্রে ভরপুর হাওরের মিঠা পানির প্রাকৃতিক মাছ সর্বত্র সমাদৃত। এক সময় সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওর মাছের রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এখান থেকে বিপুল পরিমান মাছ চলে যেত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সেই চিত্র। বিলীন হতে যাচ্ছে হাওরের দেশীয় মাছের ভা-ার।
সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রামীণ বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, মাছের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পুকুরের চাষকৃত কিছু মাছ বাজারে পাওয়া যায়। তাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আবার দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতারও বাইরে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিরাই মাছ বাজারের বিক্রেতা রবিন্দ্র বর্মন বলেন, হাওরে পানি ভর্তি থাকলে দেশীয় মাছ পাওয়াই যায় না। পুকুরের চাষ করা মাছই বিক্রি করছি। ওই মাছ বিক্রেতা জানান, হাওরে মাছ না থাকায় অন্যান্য উপজেলাসহ উজান এলাকা থেকে পুকুরে চাষ করা মাছ এনে বিক্রি করছেন তারা। অন্য মাছ না পেয়ে চাষের মাছই চড়া দামে কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
উপজেলা মৎস্য অফিস ও স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাওর থেকে ৫০ প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একসময় দেশের মৎস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত হাওর এলাকার নদী খাল- বিল দেশি মাছে পরিপূর্ণ ছিল। এ সব হাওরে প্রায় ২৫০ প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যেত।
বর্তমানে নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস, খাল বিল ভরাট, জলমহালগুলোতে ইজারাদারদের স্বেচ্ছাচারিতা ও জমিতে কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে মৎস্য সম্পদ উজাড় হয়ে গেছে।
তথ্য মতে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মাছের প্রজাতির মধ্যে ধোঁদা, গুড়পুঁই, বাছা, ব্যাইটকা, গজার, শিলং, ২ প্রজাতির টেংরা, ভেদা, শংকর, ফাঁদা, টিপ পুঁটি, পানি রুই এর মতো ১১ প্রজাতির মাছ উল্লেখযোগ্য। বিলুপ্তপ্রায় কিছু প্রজাতির মাছের মধ্যে মেনি মাছ, গুতুম বা পুঁইয়া, ফোলি, ভেদা, বেলে, কাঁচকি, এক প্রজাতির চাঁদা, মলা-ঢেলা, দাঁড়কিনা, বৌমা, ঘাড়ুয়া, ভাঙ্গন, কালিবাউশ, বাঁশপাতা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আগে হাওরপাড়ের সাধারণ মানুষসহ জেলেরা মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। দেশী মাছের প্রজাতি দিনে দিনে কমতে থাকায় প্রকৃত জেলেরাও বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার অন্য পেশায়ও জড়িয়ে পড়েছেন।