বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান প্রথম টি-টোয়ান্টি
শেষ ওভারের নাটকীয়তায় বাংলাদেশের শ্বাসরুদ্ধকর জয়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০২৩, ৪:০৬:৩৮ অপরাহ্ন

স্পোর্টস রিপোর্টার : শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন মাত্র ৬ রান। টি টোয়ান্টিতে এক ওভারে ৬ রান সহজ লক্ষ্য। বাংলাদেশের সবাই বিজয়ের ঘ্রান পেতে শুরু করেছেন। তখন আফগান অধিনায়ক বল তুলে দেন বোলার করিম জানাতের হাতে। তার প্রথম বলেই মেহেদী হাসান মিরাজ বাউন্ডারি হাঁকালে অনেকে বিজয় উৎসব করতে শুরু করেন। বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫ বলে ২ রান। ওভারের দ্বিতীয় বল করতে আসেন করিম জানাত, পুল খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন মিরাজ। মিডউইকেটে দিলেন ক্যাচ। এরপরও জয়ের ব্যাপারে নিরুদ্বিগ্ন বাংলাদেশ। ওভারের তৃতীয় বলে শূণ্য রানেই আউট তাকসিন! তখন উৎসবের প্রস্তুতি উদ্বেগে পরিণত হয়। চতুর্থ বলে হ্যাট্রিক! সকল দুশ্চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে নাসুম কে ক্যাচ আউট করে হ্যাট্রিক করেন করিম নাজাত। হাতের তালুর মধ্যে থেকেই ম্যাচটি যেন বেরিয়ে যায়। শেষ দুই বলে লাগে ২ রান। চরম উত্তেজনায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পিনপতন নিরবতা, দমবন্ধ করে সবাই অপেক্ষায় ব্যাট হাতে নেমেছেন শরিফুল ইসলাম। ৫ম বল করতে ছুটে আসছেন করিম। করিমের ছুঁড়ে দেয়া বলে শরিফুল বাউন্ডারি হাকালে উৎসবের ধ্বনিতে প্রাণ ফিরে স্টেডিয়ামে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানকে এক বল হাতে রেখে ২ উইকেটে হারিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ।
আফগানদের ১৫৫ রানের চ্যালেঞ্জ জয়ে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে বেশভালো ভাবেই চেপে ধরে ফারুকি, ওমরজাই, করিম জানাতরা। ১০ ওভার যেতেই ৬৪ রানে পড়ে যায় ৪ উইকেট। ৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আফগান পেসার ফজল হক ফারুকির বলে বোল্ড আউট হোন রনি তালুকদার। ১২ বলে ১৪ রান করে আউট হোন নাজমুল হোসেন শান্ত। বল তার কনুইয়ে লেগে ভেঙে দেয় স্টাম্প। বোলার ওমরজাইয়ের বলে ক্যাচ দিয়ে পেভিলিয়নমুখী হোন লিটন দাস। তিনি ১৯ বলে ২ বাউন্ডারিতে করেন ১৮ রান। ৭.২ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ যখন ৩ উইকেটে ৪১ রান তখন বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টি থামলে আবারো ব্যাটিং এ নামে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রানের চাকা ঘোরানের চেষ্টা করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে মারমুখী হয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব। ফরিদের বলে আউট হওয়ার আগে ১৭ বলে ৩ বাউন্ডারিতে সাকিব করেন ১৯ রান। ৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদেই ছিল বাংলাদেশ। ৪৮ বলে এক সময় দরকার ছিল ৭৮ রান। ম্যাচটি যেন বাংলাদেশের হাত থেকে ছুটে যাচ্ছে। এই অবস্থায় দলের হাল ধরেন তাওহিদ হৃদয় আর শামীম হোসেন পাটোয়ারী। চাপের মুখে ভড়কে না গিয়ে দুর্দান্ত এক জুটি গড়লেন তারা। তাওহিদ হৃদয় আর শামীম হোসেন পাটোয়ারীর মারমুখী ব্যাটিয়ে ম্যাচটা চলে আসে বাংলাদেশের দিকে। ওমরজাইয়ের করা ১৩তম ওভারে ২১ রান আসে। ১৬ রান আসে ফারুকীর করা ১৭তম ওভারে। রশিদ খানের বলে সুইপ করতে গিয়ে আউট হন শামীম। ৪টি চারে ২৫ বলে ৩৩ রান করে আউট হন তিনি। ভাঙে হৃদয়ের সঙ্গে ৪৩ বলে তার ৭৩ রানের জুটি। হৃদয় দলের সর্বোচ্চ ৩২ বলে ৪৭ রান করে আউট হওয়ার পূর্বে দলকে জয়ের সমীকরণ সহজ করে দিয়ে যান।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন তিনি। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি আফগানিস্তনের। দুই উদ্বোধনী ব্যাটারের কেউই করতে পারেননি বড় রান। বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন নাসুম আহমেদ। ১০ বলে ৮ রান করে সুইপ করতে গিয়ে তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দেন হজরতউল্লাহ জাজাই। এরপর ২ চার ও ১ ছক্কায় ১১ বলে ১৬ রান করা আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে আউট করেন তাসকিন আহমেদ। তার বলে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। পরের ব্যাটারদেরও খুব একটা থিতু হতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। তিনি নেমে ৬ বলে ৮ রান করে শরিফুল ইসলামের বলে আউট হোন ইব্রাহীম জাদরান। এ নিয়ে এবারের সফরে চতুর্থবার শরিফুলের শিকার হলেন এই আফগান ব্যাটার। ৯ বলে ৩ রান করা করিম জানাতকে ফেরান সাকিব আল হাসান। এরপরই বেশ ভালো জুটি পায় আফগানিন্তান। নজিবউল্লাহ জাদরানের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটি গড়েন মোহাম্মদ নবি। ২৩ বলে ২৩ রান করা নাজিবউল্লাহ মিরাজের বলে লিটনকে ক্যাচ দিলে ভাঙে এই জুটি। তার বিদায়ের পর আফগানিন্তানের রানের গতি বেড়ে যায়। উইকেটে আসা আজমতউল্লাহ ওমরজাই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন, হাত খোলেন মোহাম্মদ নবিও। টানা তিন ওভারে প্রথম বলে ছক্কা হাঁকায় আফগানরা। ১৯তম ওভারে টানা দুই বলে সাকিবকে ছক্কা মারেন ওমরজাই। ওই ওভারের শেষ বলে অবশ্য তিনি আউট হয়ে যান। তাসকিনের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৮ বলে করেন ৩৩ রান। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া নবি শেষ অবধি অপরাজিত থেকে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ বলে করেছেন ৫৪ রান।