শিশুর কাঁধে ভারি বোঝা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০২৩, ১:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন
মিথ্যাবাদির শাস্তি এই নয় যে, তাকে কেউ বিশ্বাস করে না, সে নিজেই কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। -জর্জ বার্নার্ড শ
এই বোঝা যেন বইতে পারছে না আর শিশুরা। অনেক সময় মনে হয় তারা যেন পিঁপড়ের মতো নিজেদের শরীরের ওজনের চেয়েও ভারি স্কুলব্যাগ কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। স্কুলব্যাগের ভারে ন্যূব্জপৃষ্ঠ হয়ে শিশুদের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য আজকাল প্রায় সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়। অথচ শিশুদের স্কুলে বইয়ের বোঝা কমানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কোন গরজ নেই।
শহর-গ্রাম সর্বত্রই ভারি স্কুলব্যাগ নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার দৃশ্য চোখে পড়ে। বই, খাতা, কলম, পানির বোতল, খাবারসহ প্রতিটি শিশুকে বিশাল ব্যাগ বহন করতে হয়। অনেক সময় মা বাবাসহ অভিভাবককে সন্তানের ভারি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে যেতে হয়। বিশেষ করে, কিন্ডার গার্টেনসহ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে শিশুদের বইয়ের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত। এর কারণ হচ্ছে, সরকার অনুমোদিত বইয়ের বাইরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেওয়া বই কিনতে বাধ্য হয় শিশুরা। অনেক সময় শিশুদের ১৩-১৪টি বিষয় চাপিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অতিরিক্ত বইয়ের অনেকগুলোই ক্লাসে পড়ানো হয় না। অথচ বইগুলোর ভার বহন করতে হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের। আর এতে তারা শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঁচ বছরের একটি ছেলেশিশুর ওজন ১৮ দশমিক ৭ কেজি, আর মেয়ের ১৭ দশমিক ৭ কেজি। ছয় বছরের একটি ছেলেশিশুর ওজন ২০ দশমিক ৬৯ কেজি আর মেয়ের ১৯ দশমিক ৯৫ কেজি। শিশুরা তার ওজনের দশ শতাংশের বেশি ভারি ব্যাগ বহন করলে তার দেহে স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।এতে শিশুদের পিঠ ও পায়ে ব্যথাসহ তারা হয়ে যেতে পারে বামন বা খর্বাকৃতির। প্রতিনিয়ত ভারি বইয়ের বোঝা কাঁধে বহন করার কারণে শিশুরা আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওপোরোসিসের মতো জটিল রোগেও আক্রান্ত হতে পারে। অনুমোদিত বইয়ের বাইরে প্রচুর বই থাকায় শিশুদের পড়ার চাপ থাকে বেশি।সেইসঙ্গে রয়েছে কোচিং। এ কারণে তাদের ছড়া-কবিতা-গল্পের বই পড়া কিংবা খেলাধূলা ও বিনোদনের সুযোগ নেই। তাই ঘটছে না মানসিক বিকাশ।
বইয়ের বোঝা থেকে শিশুদের বাঁচাতে প্রথমেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কিন্ডারগার্টেন আর ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোকে। শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য উন্নত বিশ্বে শিশুদের ওপর থেকে বইয়ের চাপ কমানো হয়েছে। পার্শ্ববর্তি দেশসহ অনেক দেশে শ্রেণিকক্ষে বইবিহীন শিক্ষা প্রকল্প শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে বই কমানো বা পড়াশোনার চাপ কমানোর ব্যাপারে আদালতও রায় দিয়েছেন। কিন্তু তার কার্যকরিতা নেই।