আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুরে উত্তপ্ত কোম্পানীগঞ্জ, পালাপাল্টি মামলা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০২৩, ৪:৫৬:১০ অপরাহ্ন
আলফু চেয়ারম্যান সমর্থকদের প্রতিবাদ সমাবেশ
কোম্পানীগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছিঁড়ে ইউপি আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর এবং প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় পালাপাল্টি দুইটি মামলা হয়েছে।
গত ১০ জুলাই রাতে উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে জানান কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি হিল্লোল রায়। এ ঘটনায় গতকাল রোববার উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলী বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন বলে জানান ওসি।
মামলার আসামিরা হলেন- ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন, রুপা মিয়া, সফর মিয়া, বাবুল মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, কবির হোসেন ও জামাল হোসেন। এর আগে একই ঘটনায় গত শুক্রবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিলেন। এতে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়।
যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন-কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু, উপজেলা বিএনপি নেতা ও পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলম, ছাদেক মিয়া ও রুপ মিয়া।
ওসি জানান, পাল্টাপাল্টি দুটি মামলাতেই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর এবং প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, একটি ভিডিও বার্তায় সরকারকে ‘অবৈধ সরকার’ বলেছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন। এ নিয়ে ফেইসবুকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে উপজেলা পরিষদ মাঠে সমাবেশ হয়েছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদের পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন মোল্লা। প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দীন রেনু।
বক্তব্য দেন ও উপস্থিত ছিলেন ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী জিয়াদ আলী, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, শ্রমিক লীগ নেতা রিয়াজ উদ্দীন, ব্যবসায়ী আকদ্দুছ আলী, পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম চাঁন মিয়া, তেলিখাল ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি আলী হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের মাসুক মিয়া, কাজল, কবির, সুলতান ও ফারুক প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘মুল্লুক হোসেন আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও বর্তমান সরকারকে অবৈধ সরকার বলেন। ভিডিও বার্তায় উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের জড়িয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তিনি প্রকৃত আওয়ামী লীগার নন। তিনি মুখোশের আড়ালে জামায়াত-বিএনপির একজন এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।’
বক্তারা আওয়ামী লীগ থেকে মুল্লুক হোসেনকে বহিষ্কারসহ তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
অপরদিকে, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেনের অভিযোগ- কিছু লোক লিজ বহির্ভূত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করে ঢালারপাড় গ্রামের স্কুল ও কবরস্থান হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় গত সোমবার (১০ জুলাই) রাতে আলফু চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অস্ত্রধারীরা ইউপি আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এসময় অফিসে থাকা জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিঁড়ে ফেলে তারা।
তিনি আরও জানান, এই অফিসে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বসেন এবং দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। কিন্তু ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনায় আমাকেই আসামি করে পাল্টা মামলা করা হয়েছে। মামলায় আমার পরিবারের সদস্যদেরও জড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়া জানান, ঢালারপাড় গ্রামের চৌধুরী পরিবারের সাথে মুল্লুক হোসেনের পরিবারের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ঢালারপাড় গিয়েছিলাম। তাদের বিরোধের কারণে লিজ আনা মহাল থেকে বালু উত্তোলন করা যাচ্ছিল না। মুল্লুক হোসেনের ভাই রূপা মিয়ার কাছে ১৩ লক্ষ টাকা পাবে মাসুক চৌধুরী। আমি টাকাটা চাইলে রূপা মিয়া উত্তেজিত হয়ে যায়। আমি রাগ করে টেবিলে আঘাত করলে গ্লাসটি ভেঙে যায়। এর বেশি কিছু আমার দ্বারা হয়নি। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি তারাই ছিঁড়েছে। আমার বিরুদ্ধে মুল্লুক হোসেনের আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদ জানান, ঘটনার বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। কিছু জানার থাকলে তিনি আওয়ামী লীগের সেক্রেটারির কাছ থেকে জেনে নিতে বলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আপ্তাব আলী কালা মিয়াকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।