সিলেটের কোটি মানুষের মুখপত্র
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০২৩, ৩:১৯:৫২ অপরাহ্ন
ওলীউর রহমান
আজ ১৮ জুলাই দৈনিক সিলেটের ডাকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সিলেট বিভাগের একটি জনপ্রিয়, বহুল পরিচিত, বিশ্বস্ত এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একটি খবরের কাগজ দৈনিক সিলেটের ডাক। ১৯৮৪ সালের ১৮ জুলাই জনপ্রিয় এই পত্রিকাটি পথ চলা শুরু করে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সিলেটের ডাক আজ গেীরবময় চল্লিশ বছরে পা দিয়েছে। মফস্বলের একটি কাগজের জন্য এই দীর্ঘ পথ চলা ও স্বগৌরবে ঠিকে থাকাটা অবশ্যই বিশাল সফলতা। আজ দৈনিক সিলেটের ডাক সিলেটের মাটি ও মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে, সিলেটের কোটি মানুষের সুখদুঃখের একনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে সিলেটের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান জুড়ে নিয়েছে।
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন এবং শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমনে সিলেটের ডাক অত্যন্ত সাহসিকতা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। সিলেট বিভাগের শিক্ষাসংস্কৃতি, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে সিলেটের ডাক। গঠনমূলক কাজের সহযোগিতা, যোগ্যতার মূল্যায়ন, গুণীদের কদর এবং নবীণদের উৎসাহ- এই কাজগুলো হাল জামানায় বড় কঠিন হয়ে দাঁড়ালেও সিলেটের ডাকের পাতা এবং সংস্করণগুলো এইসব মহৎ গুণেই সমৃদ্ধ থাকে সব সময়। সুবিধা বঞ্চিত, অধিকার বঞ্চিত, দুস্থপীড়িত মানুষগুলোর এক অভিভাবক সিলেটের ডাক। এ অঞ্চলের কবি-সাহিত্যিক, লেখক-গবেষক ও সাংবাদিকদের এক মিলনকেন্দ্র ও বিচরণস্থল সিলেটের ডাক। আরো নানা বিষয়ে বিশ্বস্ততার সাথে প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে সিলেটের ডাক। একটি আঞ্চলিক পত্রিকা হলেও জাতীয় আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো গুরুত্বের সাথে স্থান পায় দৈনিক সিলেটের ডাকে। সত্যের লালন এবং মিথ্যার দমন হলো এই পত্রিকাটির মূলনীতি।
সংবাদপত্রকে বলা হয় ইতিহাসের পাতা। ইতিহাস রচনার অন্যতম উপাদান হচ্ছে সংবাদপত্র এবং গণমাধ্যম। আর সংবাদ মাধ্যমের মূল কর্মনীতি হলো সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা, ন্যায়কে ন্যায়, অন্যাকে অন্যায়, সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলা। আজকের দুনিয়ার অধিকাংশ গণমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদপত্র তথা ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া কারো না কারো পক্ষের হয়ে কাজ করে। কোন কোন সংবাদ মাধ্যম কোন রাজনৈতিক মতবাদের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে। কোন কোন সংবাদ মাধ্যমের মূল কাজ এবং উদ্দেশ্য হলো নির্দিষ্ট কোন মতবাদের পক্ষে কাজ করা, বিপক্ষের মতকে আঘাত ও দমন করার চেষ্টা করা, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো, তথ্য সন্ত্রাস ও গুজব ছড়িয়ে কলুষিত করা। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সংবাদপত্র সবার কথা কলার কথা হলেও বর্তমান সময়ে দেখা যায় অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম শক্তির কাছে মাথা নত করে, মিথ্যার লালন করে এবং অন্যায়কে সহযোগিতা করে চলেছে। এটা একটা দেশ এবং জাতির জন্য বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়। যখন সংবাদপত্র মিথ্যার প্রতিনিধিত্ব করে তখন সত্য চাপা পড়ার আশংকা থাকে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক পত্রিকা হলেও সিলেটের ডাকের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট হলো- সিলেটের ডাক কারো তাবেদারী বা লেজুড়বৃত্তি করে না, কারো দালালী করে না এবং ফরমায়েশি সংবাদ এলাউ করে না। ডাকের সম্পাদকীয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবাদ উপস্থাপনা ও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এছাড়া সিলেটের ডাকের সবগুলোই বিভাগই সময়োপযুগী এবং প্রয়োজনীয়। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদের জন্য আরো কিছু জায়গা বরাদ্দ করা দরকার এবং অনুসন্ধানী রিপোর্ট আরো বেশি আসা দরকার বলে মনে করি।
প্রায় পঁচিশ বছর থেকে সিলেটের ডাকের সাথে আমার সম্পর্ক। অর্থাৎ কর্মজীবনে আসার আগে থেকেই সিলেটের ডাক পাঠ করছি, ফলো করছি। বিভিন্ন লেখকদের লেখাগুলো মনযোগ দিয়ে পড়ি এবং সীমিত জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে অন্যান্য লেখক-গবেষকদের সাথে সেই ১৯৯৮ সাল থেকে মাঝে মধ্যে সিলেটের ডাকের উপসম্পাদকীয় পাতায় হাজির হওয়ার চেষ্টা করি। ডাকের সাথে এই দীর্ঘ পরিচয়ের সূত্র ধরে উপরোক্ত কথাগুলো লিখলাম। এখন অবস্থা হলো যে, কোন দিন কোন কারণবশত ডাক পড়তে না পারলে খুবই খারাপ লাগে, মনে হয় যেন কোন কিছু অজানা থেকে গেল। সকালবেলা ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই ডাকের সাথে সাক্ষাৎ হওয়াটাই পছন্দ করি। আমরা চাই ডাকের এই বৈশিষ্ট্যগুলো অটুট থাকুক, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে ডাক আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক। আরো এগিয়ে যাক সিলেটের ডাক আপন গৌরবে সামনের দিকে।
আমার লেখালেখির পেছনে সিলেটের ডাকের অনেক অবদান রয়েছে। যখনই কোন লেখা নিয়ে ডাকের অফিসে গিয়েছি, নির্বাহী সম্পাদক জনাব আবদুল হামিদ মানিক সাহেবের কাছ থেকে অনেক দিক নির্দেশনামূলক উপদেশ ও উৎসাহ পেয়েছি। আর বড়দের কাছ থেকে উৎসাহ পাওয়া হচ্ছে একজন লেখকের অন্যতম পুঁজি। শুধু আমি নয় লেখালেখিতে যারাই এগিয়ে আসেন সিলেটের ডাক তাদেরকে আমন্ত্রণ জানায়, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে সিলেটের ডাক বহু লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কবিও কলামিস্ট তৈরী করেছে, সন্দেহ নাই। তাছাড়া সিলেট অঞ্চলের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে সিলেটের ডাকের অবদান অনস্বীকার্য।
৪০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে একটি পরামর্শ দেব। সিলেটে শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাসমান পথ শিশুগুলোর পুনর্বাসনের জন্য স্থায়ীভাবে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এ গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারে দৈনিক সিলেটের ডাক। সমাজের এই ঝুকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার জন্য সিলেটের ডাককে যুগান্তকারী উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে এই পথশিশুগুলো লেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হতে পারে। পরিশেষে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সিলেটের ডাকের জন্মলগ্ন থেকে যারা যেভাবে এর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, বিশেষ করে স্মরণ করছি মরহুম আব্দুল হান্নান সাহেবকে, যার বিদগ্ধ হাতের ছোঁয়ায় এক সময় ডাক প্রাণশক্তি লাভ করেছিল। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সিলেটের ডাকের সাবেক সম্পাদক, মহিয়সী নারী মরহুমা রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে। যিনি তার মেধা ও শ্রম দিয়ে সিলেটের ডাককে একটি সম্মানজনক অবস্থানে রেখে গেছেন। আজ মনে পড়ে মরহুম সরকার শাহাব উদ্দিন আহমেদ এবং তার ক্ষুরধার লেখনীর কথা। মহান রাব্বুল আলামীন যেন তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করেন। এই সাথে ডাক পরিবার, ডাকের সকল সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং পাঠকদের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ এবং ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সিলেটের ডাকের আরো সফলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক।