৪০ বছরে যাত্রা শুরু
পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত দৈনিক সিলেটের ডাক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০২৩, ২:৩৫:৩৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : দেখতে দেখতে আবার ফিরে এলো সেই ১৮ জুলাই। ৩৯ বছর আগে জন্ম নেয়া দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকাটি মানবিক মূল্যবোধে ঋদ্ধ হয়ে আজ ৪০ এ পা রাখলো। তবে শুধু বয়সে নয়, নিরপেক্ষ সংবাদ পাঠকের কাছে তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৩৯ বছর আগে যে যাত্রা শুরু করেছিলো, সেই যাত্রা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এই যাত্রাপথে অনেক বাধা-বিপত্তি, চড়াই-উৎরাই পেরুতে হয়েছে। কিন্তু তবু একদিনের জন্যেও থেমে থাকেনি গণমানুষের এই সংবাদপত্র। নিরবচ্ছিন্ন এগিয়ে যাওয়ার পেছনে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি ও অনুপ্রেরণা ছিলেন আমাদের সম্মানিত পাঠক। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
পত্রিকার সবগুলো বিভাগ নানামুখী সমস্যা সম্ভাবনার দরজা সব সময় খুলে রেখেছে পাঠকের জন্য। এই ঐতিহ্যের শিখা নির্বাপিত হবে না কোনো দিনই-যতদিন পর্যন্ত পাঠকরা আমাদের পাশে থাকবেন।
সিলেটের ডাক একদিকে সিলেট বিভাগের কয়েক কোটি মানুষকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপহার দেয়, অন্যদিকে তথ্যবহুল অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো পাঠকের মনে রসদ জোগায়।
অনেক পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশের। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এমন একটি পত্রিকা ধরে রাখতে হলে অনেক বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হয়। এ গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে প্রতিনিয়ত।
আমাদের এই দীর্ঘপথচলায় একটি বিষয় অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, করোনা মহামারির পর নানা সংকটের কবলে পড়ে অন্যসব জিনিসপত্রের মতো কাগজ শিল্প। অভাবনীয় হারে বৃদ্ধিপায় কাগজের দাম। সেই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে দৈনিক সিলেটের ডাকে। এই বাস্তবতায় গত বছর থেকে পত্রিকাটি আট পৃষ্ঠা থেকে চার পৃষ্ঠায় নেমে আসে। তবে আশা করি আমরা সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো। কারণ পত্রিকাটির জন্মলগ্ন থেকে এখনো অনুপ্রেরণা, শক্তি দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের সম্মানিত পাঠকরা। তাই আজকের এ সুন্দরময় দিনটি পাঠক, গ্রাহক ও শুভাকাক্সক্ষীদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।
স্বাধীনতা পরবর্তী ডিক্লারেশনপ্রাপ্ত সিলেটের প্রথম দৈনিক হিসেবে একটি আঞ্চলিক পত্রিকা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে বিচরণ করে ৩৯ বছর অতিক্রম করা আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। অনেক ত্যাগ তিতীক্ষা প্রতিকূলতার মাঝেও সিলেটের ডাক সুনাম ও জনপ্রিয়তার একক আধিপত্য দখল করে এগিয়ে যাচ্ছে সিলেটবাসীর মুখপত্র হয়ে।
ছাপার পাশাপাশি সিলেটের ডাক অনলাইনে নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন করে মানুষের পাশে রয়েছে। অনলাইন ভার্সনে প্রতিদিনের নানা খবরাখবর এবং আঞ্চলিক, দেশীয় ও বৈশ্বিক সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে।
নানা সংকটে, দুর্বিপাকে সিলেটের ডাক পরিবারকে সম্পূর্ণ মানসিক স্বস্তিতে রাখেন সিলেটের ডাক-এর সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি দানবীর ড. রাগীব আলী। এই কঠিন সময়ে সার্বক্ষণিক সাহস, শক্তি ও প্রেরণা যুগিয়ে চলেছেন তিনি। ঝুঁকি বহন করে সত্যিকার অর্থেই মানবতার পক্ষে তাঁর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে সময়ের দাবি মেটানো। সেই দিক থেকে পত্রিকাটি তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সময়ের দাবি মিটিয়ে এসেছে। সিলেটের ডাক-এর সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি, দানবীর ড. রাগীব আলী একক পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পত্রিকাটি পরিচালনা করছেন। সিলেটের ডাক-এর জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বড় শক্তি এর তারুণ্য। এখানে যারা কাজ করেন সকলেই মেধাবী, প্রযুক্তিমনস্ক, চিন্তায় প্রাগ্রসর, আধুনিক, পরিশ্রমী আর নিরলস।
এরকম একটি টিম গড়ে গেছেন সিলেটের ডাক -এর সাবেক সম্পাদক মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। বিচক্ষণ এই মহীয়সী নারীর নেতৃত্বেই সিলেটের ডাক তার স্বর্ণযুগে পা রাখে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমরা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীসহ পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন সকল প্রয়াতকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
সিলেটের ডাক দেশ, জাতি ও সমাজের কাছে দায়বদ্ধ। এ দায়বদ্ধতাকে কখনও এড়িয়ে যাইনি আমরা। এজন্য আমাদেরকে হয়তো অনেকের বিরাগভাজনও হতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে ব্যক্তির চেয়ে বৃহত্তর স্বার্থটাই বড়। এজন্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণে আমরা ছিলাম আন্তরিক এবং নির্ভীক। আমাদের এই নীতি অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা যে কোনো মহৎ কাজকে যেমন উৎসাহিত করছি, তেমনি মন্দ অপকর্মের বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠ সোচ্চার।
আমরা একথা ভেবে আপ্লুত বোধ করি যে, সিলেট বিভাগের গন্ডি ছাড়িয়ে সারাদেশে সিলেটের ডাক-এর একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
সিলেটের ডাক-এর প্রতি সাধারণ মানুষের এই যে ভালোবাসা, তার উৎস কী? আমরা কখনো হয়তো খুঁজতে যাইনি। কিন্তু আমরা জানি, আজ থেকে ৩৯ বছর আগের দিনটি থেকেই সিলেটের ডাক-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একেবারে পরিষ্কার ছিল। স্বাধীন, নিরপেক্ষ, সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা করবে সিলেটের ডাক। কোনো দলের মুখপত্র হবে না, জনগণের পক্ষে কোনো সত্য উচ্চারণে শঙ্কিত হবে না। পেশাদারী দক্ষতা ও উৎকর্ষ অর্জনে সব সময় সচেষ্ট থাকবে। পরিবর্তনের সহযোগী হবে। গণতন্ত্র আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মূল্যবোধকে ধারণ করবে, মানবাধিকারের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখবে। সেই সব লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে সিলেটের ডাক।
আমরা চেয়েছি পারিবারিক কাগজ হতে। আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে উঠতে। আমরা তাই এমন কিছু প্রকাশ করি না, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক মূল্যবোধে আঘাত হানে। আঞ্চলিক পত্রিকা হলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা যেন এই কাগজের মাধ্যমে মেটানো যায়।
জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থানটি ধরে রেখে আজ ৪০তম বছরের প্রথম দিনে পা রাখছে সিলেটের ডাক। সম্মানিত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, লেখক-লেখিকা, বিজ্ঞাপনদাতা, বিপণনকারীসহ সকল মহলের প্রতি কৃতজ্ঞতার কোনো অন্ত নেই। আপনাদের সবার সহযোগিতা আর অংশগ্রহণ নিয়েই দৈনিক সিলেটের ডাক আজ সিলেটবাসীর প্রাণের ডাক হয়ে উঠুক। এই প্রত্যাশা বরাবরের মতোই রইলো।