দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০২৩, ২:৪১:০৬ অপরাহ্ন
# মাউশি’র পরিচালককে তদন্তের নির্দেশ
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মতিউর রহমান, প্রভাষক সাব্বির আহমদ ও সাবেক প্রদর্শক নাজনীন খান ইভার বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবরে এ অভিযোগ দাখিল করেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. শামসুল ইসলাম। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) সিলেট অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান খানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে মাউশি সিলেট অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান খান সিলেটের ডাককে বলেন, দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে দাখিল করা অভিযোগ তদন্ত করতে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখনো তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা শেষে দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, উপরোক্ত শিক্ষকগণ একে অপরের যোগসাজশে নাজনীন খান ইভাকে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ লাভের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ১৭ মাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করে বেতন-ভাতা উত্তোলনসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুবিধা আদায় করেন। অবশেষে দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের খন্ডকালীন প্রদর্শক হিসেবে যোগদান করে সরকারি প্রভাষক হিসেবে ওই কলেজে নিয়োগ লাভের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
প্রভাষক সাব্বির আহমদ ইন্টারভিউ ছাড়া কোনো ধরনের নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র বিহীন চাকরি লাভ ও সরকারি এমপিও থেকে বেতন উত্তোলন করছেন। ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অনুমোদন ছাড়াই বহির্বিশ্ব ভ্রমণ করে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। ওই শিক্ষকের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত অনুমোদনবিহীন অনুপস্থিতির কথা অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে মাউশির পরিচালককে টেলিফোনে অবহিত করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে উল্লেখিত দুই শিক্ষকের পরামর্শে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান কলেজের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কলেজে সংরক্ষিত তার ব্যক্তিগত ফাইলপত্র ও তার সময়কার অনেক কাগজপত্র, ফাইলপত্র ও বিল-ভাউচার গায়েব করে তার আর্থিক ক্ষতি করছেন বলে উল্লেখ করেন অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম। এছাড়াও অভিযোগে আরও নানা অনিয়মের কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী অধ্যাপক মো. মতিউর রহমান বলেন, এ রকম কোনো অভিযোগের কাগজপত্র এখনো হাতে আসেনি। আগের প্রিন্সিপালই কলেজের সকল কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। আমি কারো জন্যে সুপারিশ করিনি। আমার জানা মতে, সাব্বির আহমদের কোনো সমস্যা নেই। তার ওকে হয়ে গেছে। তবে, ইভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না অন্য কোথাও চাকরি করেছে তা ইভা ভালো বলতে পারবে। অর্থ আত্মসাৎসহ অন্য অভিযোগগুলোর কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি তার।
সাব্বির আহমদ বলেন, এগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হচ্ছে। আমার চাকরির প্রসেসিংয়ে কোনো ধরনের ভুল নেই। ১৯৯৩ সালে চাকরিতে যোগদান করে ১৯৯৫ সালে আমার এমপিও হয়। ছুটি নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, শুনেছি মাউশির পরিচালক অভিযোগের তদন্ত করছেন।
নাজনীন খান ইভা বলেন, ২০১৪ সালে আমি কলেজে যোগদান করি। ২০১৭ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করলেও আমি কলেজের চাকরি থেকে পদত্যাগ করিনি। ২০১৮ সালে বিদ্যালয়ের চাকরি থেকে পদত্যাগ করে আবারও কলেজে যোগদান করি। ওই বছর কলেজ থেকে ৫ মাসের বেতনও দেয়া হয়। কলেজ সরকারি হওয়ার পরে ২০১৯ সালের এপ্রিলে ঢাকায় ফাইলপত্র পাঠানোর সময় নাকি আমার দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিষয়টি ইউএনওর নিকট ধরা পড়ে। অথচ আমাকে এ বিষয়ে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে চাকরি সরকারিকরণের জন্যে আমি নিজেই মন্ত্রণালয়ে আবেদন করি। তার দাবি, সাবেক প্রিন্সিপাল শুধুমাত্র হয়রানি করতেই অভিযোগটি করেছেন।