উল্টে যাওয়া কচ্ছপের গল্প
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুলাই ২০২৩, ৪:২৮:২৫ অপরাহ্ন
সানজিদা সামরিন
সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। ঘটনাটা অবশ্য অতটা পুরনোও নয়। অনেকের মুখে এখনও সে গল্প শোনা যায়।
এক কচ্ছপ ছিল, কখনও কোনো কাজেই তার তাড়া ছিল না। সবকিছুতেই সে ভাবতো- ‘এত তাড়াহুড়োর কী আছে!’
সেবারও ঘটনাটা ঠিক তক্ষুণিই ঘটল। কপালের দোষে ঝড়ের কবলে পড়ল কচ্ছপ। ভাগ্যকে বকতে বকতে এবার উত্তরের ঠান্ডা হাওয়াকেও বকে দিল সে। ঝড়ো ঠান্ডা হাওয়া এমনভাবে বইতে শুরু করল যে কচ্ছপটা গেল উল্টে। সে কী যে এক কা- তা আর বলতে…।
তবে উল্টে যাওয়ার পরও কচ্ছপ ভাবল- ‘আমার তো বিশেষ কোনো কাজ নেই, কোথাও যাওয়ার তাড়াও নেই। তাই অস্থির হবো কেন? অস্থির হয়ে কাজ নেই।’ সে উল্টেই রইলো।
কচ্ছপের খোলসের ওজন পাঁচশ কেজি বা তার চেয়েও বেশি, ফলে বুঝতেই পারছো পাশ দিয়ে যেসব পশুপাখি যাচ্ছিল, তারা চেষ্টা করেও কচ্ছপকে সোজা করে দিতে পারল না। তবে প্রত্যেকেই তাকে সান্ত¡না দিলো।
এদিকে উল্টে থাকতে থাকতে কচ্ছপ একসময় ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে সে উল্টো সব স্বপ্ন দেখতে লাগল। পৃথিবী থেকে সে স্বপ্নে বৃষ্টি পড়ছিল স্বর্গে। নদীর ঢেউ বয়ে চলছিল উল্টোদিকে। এমনকি জাহাজও ভাসছিল উল্টো স্রোতে।
শুধু কি পশুপাখিই এ ভাষায় কথা বলে আনন্দ পেত? আশপাশ দিয়ে যে বাচ্চাকাচ্চাগুলো ঘুরে বেড়াত, তারাও এই ভাষায় মজা পেল।
এ তো গেল স্বপ্নের কথা, সত্যি সত্যিতো সে উল্টে আছে, ফলে যা দেখছে সবই উল্টো। এমনকি শুনতেও পাচ্ছে উল্টোপাল্টা কথা।
সকালবেলা ঘুম ভেঙে যে গান কচ্ছপ গাইতো, এখন সে গান গাওয়ার পর নিজের কানেই তা বাজছে উল্টো কথায়। সব তার কাছে নতুনের মতো লাগছে। এমন সময় এক ব্যাঙ এসে বললো- কী খবর?
কচ্ছপ উল্টো করে শুনল- কী রবখ?
কচ্ছপও বললো- ‘লোভা। রমাতো কী রবখ?’ মানে হলো ‘ভালো, তোমার কী খবর।’
এসব কথাবার্তা প্রথম প্রথম ‘কাটখ’ মানে ‘খটকা’ লাগলেও পরে কিন্তু বনের পশুপাখিরা এমন উল্টোপাল্টা কথাবার্তাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেল। তখন গন্ডারকে ‘রন্ডাগ’ বললেও সে জবাব দিত। কুমিরকে ‘রমিকু’ বলে ডাকলেও কুমির হাত নেড়ে স্বাগত জানাত।
শুধু কি পশুপাখিই এ ভাষায় কথা বলে আনন্দ পেত? আশপাশ দিয়ে যে বাচ্চাকাচ্চাগুলো ঘুরে বেড়াত, তারাও এই ভাষায় মজা পেল। তারাও চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘রেরহু রেরহু!’ আগে কিন্তু তারা সবসময় বলত, ‘হুররে, হুররে!’
তবে কচ্ছপটা আরও কিছুদিন উল্টে থাকলে কী থেকে কী হতো, কে জানে! একদিন এক দখিনা বাতাস এসে উল্টে থাকা কচ্ছপকে দিলো সোজা করে। এ কথা তো সত্যি, কচ্ছপটা উল্টো থেকে সোজা হয়ে গেল। কিন্তু তাতে কী! কচ্ছপটা সোজা হয়ে যাওয়ার পরও কেউ কেউ এখনও সেই উল্টোপাল্টা ভাষায় কথা বলে।
তবে সেই ভাষায় কথা না বলতে বলতে একসময় যে এরকম কিম্ভুত ভাষার সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা কচ্ছপসহ ভুলে গেল অনেকেই।