হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুলাই ২০২৩, ৪:৩৪:২৮ অপরাহ্ন
হুমকিতে জীববৈচিত্র্যমহৎ আশা মহৎ লোকের সৃষ্টি করে। -টমাস ফুলার
প্রাণি ও উদ্ভিদের দশ লাখ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে। এর মধ্যে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে কয়েক দশকের মধ্যেই। এই তথ্য জাতিসংঘের। আকাশ, পাতাল কিংবা সমুদ্র- বিশ্বপ্রকৃতির সর্বক্ষেত্রে মানবপ্রজাতির বিধ্বংসি কর্মযজ্ঞের পরিণতি স্বরূপ এই প্রাণি ও উদ্ভিদের ওপর খড়গ নেমে আসছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- প্রাণি ও উদ্ভিদের ৮০ লাখ প্রজাতির মধ্যে দশ লাখই রয়েছে বিলুপ্তির হুমকিতে। বিজ্ঞানিরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে খোদ মানব প্রজাতির অস্তিত্বই হুমকিতে পড়ে যাবে। বিশ্ব প্রকৃতির ওপর মানব কর্মকা-ের প্রভাব নিয়ে এটাই সবচেয়ে বড় গবেষণা। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, বিশ্ব প্রকৃতির ওপর খবরদারি বন্ধ না করলে মানবজাতিকেও বড় খেসারত দিতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে বিষয়টি মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের কর্মকান্ডের জন্য হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বপ্রকৃতিকে খেসারত দিতে হচ্ছে। কিন্তু গত ৫০ বছরে এর মাত্রা বহুগুণে বেড়ে গেছে। বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে। ১৯৭০ সালের চেয়ে বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা দ্বিগুণ। বিশ্ব অর্থনীতির আকার বেড়েছে চারগুণ। অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে দশগুণ। দ্রুত বর্ধনশীল এই মানবজাতির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও জ্বালানীর চাহিদা মেটাতে বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় দশ কোটি হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংস হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়। এছাড়া জলাভূমির পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। সারা বিশ্বে ১৭০০ সালে যে পরিমাণ জলাভূমি ছিলো, এর ১৩ শতাংশ অবশিষ্ট ছিলো ২০০০ সালে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নগরায়ন। ১৯৯২ সালের চেয়ে বর্তমানে নগরায়নের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। আর বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে কী পরিমাণ, তার পরিসংখ্যান খুবই দূরূহ। সব মিলিয়ে প্রাণি ও উদ্ভিদের দশ লাখ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। আর এখন যে গতিতে বিভিন্ন প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে, তা এক কোটি বছর আগের চেয়ে কয়েক লাখ গুণ বেশি। সবচেয়ে ভয়ংকর দুঃসংবাদটি হচ্ছে, সারা বিশ্বে ‘ন্যাচারাল ইকো সিস্টেম’ এরই মধ্যে ৪৭ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, বিশ্বের সকল দেশেই। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, পাহাড়-টিলা, জলাভূমি। নদী-নালাও ভরাট হচ্ছে। সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে। যার ফলে অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি, খরা, উষ্ণ প্রবাহ ইত্যাদি দেখা দিয়েছে। বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনেও পড়েছে এর বিরূপ প্রভাব। এর কারণে মানুষের মধ্যে নানা রোগ ব্যাধিরও জন্ম হয়েছে। আগামিতে মানবজাতির জন্য আরও ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলে বিজ্ঞানীদের আশংকা রয়েছে। সুতরাং- এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে এখনই।