সিলেটে নিয়ম মানছেন না থ্রি হুইলারের চালকেরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুলাই ২০২৩, ১১:৪২:১৭ অপরাহ্ন
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম
দুর্ঘটনা এড়াতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং চালকের পাশে যাত্রী বসিয়ে থ্রি-হুইলার (তিন চাকার যান) চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সিলেটে মহাসড়কে উপেক্ষিত হচ্ছে এ নিয়ম। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চালকের পাশে বসিয়ে এবং অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত চলছে এই যান। ফলে প্রায়শ প্রাণহানি হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে যে থ্রি হুইলারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, সেটিতে ছিল অতিরিক্ত যাত্রী। এমনকি এটির কোন রেজিস্ট্রেশনও ছিল না। ফলে চালকসহ এ থ্রি হুইলারের ৬ যাত্রীই মারা যান। এর বাইরে নিহত অন্যজন ছিলেন মাইক্রোবাসের চালক।
গতরাতে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (এআরআই)-এর সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ জানান, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার এবং অযান্ত্রিক যান চলাচল নিষিদ্ধ। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, এ যানগুলো নিজেরা যেমন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, দুর্ঘটনা ঘটায় ; পাশাপাশি অন্য যানবাহনগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে । তারা ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। গাড়িগুলো নাজুক থাকায় দুর্ঘটনার পর এ ধরনের যানবাহনের যাত্রীদের হতাহতের মাত্রা বেড়ে যায়। এ ধরনের যানবাহন যাতে মহাসড়কে উঠতে না পারে-সেটা নিশ্চিত করার তাগিদ তার । পাশাপাশি ইজিবাইকের উৎস বন্ধের ওপর জোর দেন তিনি। মোটর পার্টস যারা আমদানি করছে, যারা ইজিবাইক বানাচ্ছে-যারা ম্যানুফ্যাকচারার্স-সেগুলোতে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সড়কে প্রাণহানি কমবে বলে তার মন্তব্য।
থ্রি-হুইলার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন-এজন্য সড়কে এটি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার ওপর জোর তাগিদ দিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি জানান, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক হলেও এটি অনেক প্রসারিত রাস্তা। তার মতে, সকাল বেলা হয়তো দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসের অতিরিক্ত গতি ছিল-যে কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশের কাছে স্পিডগান রয়েছে। সড়কের দায়িত্বে তারা থাকলে হয়তো স্পিডগানগুলো ব্যবহার করতে পারতেন। এটা ব্যবহার হলে হয়তো লোকজনকে সচেতন করা যেত। দ্রুতগতির কারণে বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, কোম্পানীগঞ্জে হাইওয়ে পুলিশের একটি ফাঁড়ি স্থাপনের প্রস্তাবনা রয়েছে। এটি স্থাপিত হলে হয়তো সড়কে প্রাণহানি কিছুটা হলে রোধ করা যাবে।
সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী মিডিয়া অফিসার ইন্সপেক্টর শ্যামল বণিক জানান, মহাসড়কে নম্বরবিহীন ও অনটেস্ট গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনাকবলিত সিএনজি অটোরিক্সাটিও ছিল নম্বরবিহীন। থ্রি হুইলারের পাশাপাশি মহাসড়কে ইজিবাইক চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসটি মানিকগঞ্জ থেকে এসেছিল। মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতিতে থাকায় চাকা ফেটে যাবার পর এটি সিএনজি অটোরিক্সাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে খাদে নিয়ে যায়। ফলে সিএনজির যাত্রী সকলেই মারা যান।
তিনচাকার যানের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ৪ এপ্রিল উচ্চ আদালত মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান উঠতে পারবে না মর্মে আদেশ দেন। এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দেশের সব প্রধান মহাসড়কে তিন চাকার যান না চালানোর আদেশ দেন উচ্চ আদালত। সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার অটোরিক্সা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় (রোড ক্রাশে) মারা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, দুই ও তিন চাকার মোটরযান ব্যবহারকারীদের জন্য মাথার আঘাত মৃত্যুর প্রধান কারণ। গবেষণা বলছে, মহাসড়কে অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী থ্রি-হুইলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিসংঘের সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেইফটি ২০২১-২০৩০ এ বর্ণিত পাঁচটি স্তম্ভ (নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ মোটরযান, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী এবং দুর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থাপনা) কাজে লাগানো হলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার হ্রাস পাবে ও দীর্ঘমেয়াদী পঙ্গুত্ব থেকে মানুষকে রক্ষা করা যাবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ডাব্লিউএইচও ৫টি আচরণগত ঝুঁকি (গতি কমানো, সিটবেল্ট ব্যবহার, সঠিক হেলমেট ব্যবহার, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি না চালানো এবং শিশুদের জন্য বিশেষ সিটের ব্যবস্থা) মোকাবেলার প্রতিও জোর দিয়েছে।