প্রসঙ্গ : শিক্ষক আন্দোলন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১:০৩:১৯ অপরাহ্ন
মো. ইউসুফ আলী
দেশের ইতিহাসে শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ আন্দোলন চলছে। আমি যখন লেখাটি লিখছি সেসময় আন্দোলনের ১০ম দিন চলছে। এতো দীর্ঘ সময় প্রচন্ড গরম, ঝড়-বৃষ্টি, ভয় ভীতি কোন কিছুই আন্দোলনে ছেদ ফেলতে পারছে না। যত বাঁধা আসছে আন্দোলন আরও বেগবান হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীর অবিবেচক সিদ্ধান্ত গরম ঘিয়ে পানি ঢালছে। ১৯ জুলাই ২০২৩ বিকাল সাড়ে তিনটায় শিক্ষক নেতাদের সাথে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ ব্রিফে গ্রীষ্মকালিন ছুটি বাতিলের ঘোষণা দেন! যে সময় ছুটি বাতিলের ঘোষণা দিলেন ততক্ষণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে গেছেন। ছুটি বাতিলের কারণ যা বর্ণনা করলেন, কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়নি। ফলে এখন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাস নেয়াসহ গভীর নজর দেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের অনিয়মিত উপস্থিতি এ কার্যক্রমসহ শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ক্ষুন্ন করছে। কী অবাক করার বিষয় হঠাৎ করে মাননীয় মন্ত্রীর শিক্ষার বিশাল ক্ষতি সামনে চলে এলো। ক্ষতির বিষয়ে তিনি বুঝতে পেরেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পরে, আগে নয়।
আসলে আমাদের শিক্ষা নিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নতুন কিছু নয়, যখন তার মনে যেটা উঁকি মারে হুট হাট করে তাই করে। আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষকদের দাবি দাওয়া, সুযোগ সুবিধা আন্দোলন ছাড়াই পেয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, বেসরকারি শিক্ষকরা যা পেয়েছে সবই আন্দোলনের মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে। এরশাদ সরকারের আমলে জাতীয় স্কেলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে স্কেলের শতভাগ বেতন পেতে অনেক আন্দোলন, অনেক সংগ্রাম, অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে শিক্ষকদের। কেউ করুণা করে কিছুই দেয়নি। উপরন্তু শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বারবার বঞ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী জাতীয়করণে গবেষণার কথা বলেছেন। বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা, তা নিয়েও কী গবেষণা করার প্রয়োজন আছে? ১০০০ টাকা দিয়ে কোথাও বাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে না। তাহলে যে শিক্ষকের বাড়ি দিনাজপুর, চাকুরী করে সিলেট। সেই শিক্ষক ১২০০০ টাকা বেতনে কীভাবে পরিবার নিয়ে সংসার চালাবেন? এ ব্যাপারে পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের দূর্দশা তুলে ধরে প্রতিবেদন করেছে। কিন্তু সরকার কোন আমলেই নেয়নি। শিক্ষকদের অভিযোগ তাদের বেতন থেকে অবসর সুবিধা ও কল্যান ফান্ডের জন্য আগে ৬% কর্তন করা হতো।
বিগত ২০১৫ সাল থেকে বেতন থেকে ১০% কর্তন করা হচ্ছে। অথচ অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকের ৫ বছরেও অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাচ্ছে না। অনেক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় রোগে শোকে মারা যাচ্ছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা তছনছ হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পরিশোধে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা আছে ঠিকই তাই বলে শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া, উৎসব ভাতা দিলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাবে এমনটি তো নয়। সবচেয়ে অমানবিক ব্যাপার অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকের অবসর সুবিধা সময় মতো না পাওয়া। শিক্ষা নীতি নির্ধারনী মহলের অবশ্যই অবগত থাকার কথা বেসরকারি শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পরের দিন থেকে তার কোন বেতনাদি থাকে না। দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনা রেখে বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়ি, উৎসব ভাতা বৃদ্ধি এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দ্রুততম সময়ে অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পরিশোধের ব্যবস্থাকরণের পদক্ষেপ নিয়ে তাদের শ্রেণি কক্ষে ফেরত নেওয়ার উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
লেখক : শিক্ষক।