ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুলাই ২০২৩, ৬:০৭:৫৮ অপরাহ্ন
দুলাল শর্মা চৌধুরী
ডেঙ্গুতে বেড়েই চলছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে ঢাকাসহ সারাদেশে ১০ জনের মত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ জনে। ভয় ধরাচ্ছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাও। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি আছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু সম্পর্কে ভালোভাবে না জানার কারণে মানুষ বিপদে পড়ছেন, প্রাণ হারাচ্ছেন।
যেসব লক্ষণ দেখে আপনি বুঝবেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে প্রধানতম লক্ষণ হচ্ছে, জ্বর। জ্বর সাধারণত ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। শরীরে তীব্র ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, পায়ে র্যাশ ওঠা বা লালচে দানা আসা ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ।
এছাড়া রোগীর বমি বমি ভাব, অরুচি, ডায়রিয়া, দাঁতের মাড়ি বা নাক বা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হওয়া, গলা ব্যথা, ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া- এসব ডেঙ্গুর লক্ষণ। ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিশ মশা কামড়ানোর তিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর হয়। তাই দুই-তিন দিনের বেশি জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু রোগীর কিডনি কিংবা লিভার সমস্যা, পেটে ব্যথা, বমি অথবা অন্তঃসত্ত্বা, অথবা জন্মগত যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। অনেক সময় রোগীর জন্য আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রয়োজন হতে পারে।
এর বাইরে জ্বরের সঙ্গে যদি কোনো রোগীর দাঁতের মাড়ি বা নাক বা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়, সারাদিন যে পরিমাণ প্র¯্রাব হতো, তার পরিমাণ যদি কমে যায়, শ্বাসকষ্ট হলে দেরি করা মোটেই উচিত নয়। ভর্তি করাতে হবে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে।
ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম থেকে মানবদেহে পানি শূন্যতা তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পাল্স রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়। শ্বাস প্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে। রোগী অস্থির হয়ে
ওঠেন। তখন সময় নষ্ট না করে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।
ডেঙ্গু হলে ওষুধ হিসেবে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। অনেকে না জেনে শরীরের বিভিন্ন অংশের তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে বিপদ ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। কারণ ব্যথানাশক ওষুধ শরীরে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। বা ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
বরং এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। যেমন- ভাতের মাড়, স্যালাইন, ডাবের পানি, স্যুপ, ফলের রস, লেবুর পানি ইত্যাদি। তরল খাবার ৯০ শতাংশ কমায় ডেঙ্গুর তীব্রতা। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ডাল, ডিম, মুরগির মাংস, ছোট মাছের ঝোল বেশি করে রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। পেঁপে পাতার রস খেলে প্লাটিলেট বাড়ে। যা কোনো কারণে রোগীর প্লাটিলেট ১০ হাজারের নীচে নেমে গেলে চিকিৎসকরা চাইলে রোগীকে প্লাটিলেট বা ফ্রেস রক্ত দিতে পারেন।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান শত্রু জীবাণুবাহী এডিস মশা। বিশেষ করে বৃষ্টিপাতের সময় মশার ডিম পাড়া ও প্রজননের জন্য খুবই উপযুক্ত।
বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে এ জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। ডেঙ্গু জ্বর হয় এডিশ মশার কারণে। আর এডিস মশা সকাল-সন্ধ্যায় কামড়ায়। ভোরে সূর্যোদয়ের আধঘন্টার মধ্যে ও সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধঘন্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে। তাই এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার একমাত্র কারণ এডিস মশা এই কথা আমরা কমবেশি সকলে জানি। তাই মশাকে নিয়ন্ত্রণই হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিকার তথা তার প্রকোপ কমানোর প্রধান উপায়। মশার প্রজনন ক্ষেত্র বা ডিম পাড়ার স্থান যা-ই বলি না কেন, এগুলোকে ধ্বংস করতেই হবে। বড় বড় ভবনের আশপাশে, কোণায় কোণায় ডাস্টবিন, এমনকি ঘরের পাতিল, বদনা, বাথরুম, রান্নাঘর এসব স্থানেও যেন চার-পাঁচ দিনের বেশি পানি জমে না থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
এডিম মশা দিনের বেলা কামড়ায়। তাই দিনের বেলা ঘুমালে মশারি ব্যবহার করুন। বাসা বাড়ি, হাসপাতাল, অফিস-আদালতের আনাচে-কানাচে মশার স্প্রে বা ওষুধ ছিটাতে হবে। যাতে এসব স্থানে কোনোভাবেই মশা আশ্রয় নিতে না পারে। ঘরের দরজা-জানালায় মশা নিরোধক জাল ব্যবহার করুন। ঘর-বাড়ি ও এর চারপাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ফ্যান, টিনের কৌঠা, মাটির পাত্র, বোতল, নারকেলের ছোলা ও এ জাতীয় পানি ধারণ করতে পারে এমন পাত্র ধ্বংস করে ফেলতে হবে। যেন পানি জমতে না পারে।
গোসলখানায় বালতি, ড্রাম, প্লাস্টিক ও সিমেন্টের ট্যাংক কিংবা মাটির গর্তে পাঁচ দিনের বেশি কোনোভাবেই পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। পরিষ্কার ও স্থবির পানিতে ডেঙ্গুর জীবাণু বেশি জন্মায়। অব্যবহৃত গাড়ির টায়ারে যাতে পানি জমতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। ফ্রিজের নীচে, এসির নীচে, ফুলের টবে ও মাটির পাত্রে সামান্য পানি জমে থাকলে তাও নিষ্কাশন করুন।
সবশেষে আমার আপনার সবাইকে এডিস মশা থেকে সাবধান থাকতে হবে। তার জন্য আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখলে ছোট ছোট বিষয়ে সচেতন থাকলে এডিস মশা ও ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। তেমনি পাড়া-প্রতিবেশি মানুষরাও থাকবে সুস্থ।
তাই আসুন আমরা সচেতন হই এবং এডিস মশা থেকে নিজেদের ও অন্যকে রক্ষা করি।
লেখক: কবি