সুযোগ তৈরির ক্ষেত্র ও উন্নয়নের সম্ভাবনা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২৩, ২:২৩:৫১ অপরাহ্ন
তপন কান্তি ঘোষ
মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে মনোস্তাত্ত্বিক পার্থক্য হলো উন্নয়ন, বিকাশ বা অবস্থা পরিবর্তনের ইচ্ছা বা আকাংঙ্খা। এই ইচ্ছাই মানুষকে সামনের দিকে নিয়ে যায়। মানুষের উন্নয়ন চিন্তা, উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন, আধুনিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার সামনের দিকে অবস্থান দিতে সক্ষম হয়। এখন, প্রশ্ন হলো, এই উন্নয়ন চিন্তার শুরু কোথা হতে?
উত্তর একটাই; যেখান থেকে ব্যক্তির জীবন শুরু, সমাজ শুরু, রাষ্ট্র শুরু সেখান থেকেই। অর্থাৎ বর্তমান আধুনিক সভ্যতার সেই আদি সংগঠন ‘পরিবার’ থেকে। পরিবারকে উন্নয়নের মূল কেন্দ্রবিন্দু ধরে সমগ্র উন্নয়ন কর্মকান্ডকে আবর্তিত করতে পারলে সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। পারিবারিক পরিবেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুইটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বা চলক থাকে। আলোচনার সুবিধার্থে এই দুটি চলককে আমি ব্যবহারকারী (টংবৎ) ও সুযোগ (ঙঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃু) হিসাবে ধরে নিবো। এই ব্যবহারকারী ও সুযোগের মধ্যে চারটা অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
১. ব্যবহারকারী বাড়ছে এবং সুযোগে স্থির ২. ব্যবহারকারী বাড়ছে এবং সুযোগও বাড়ছে। কিন্তু ব্যবহারকারীর বৃদ্ধির তুলনায় কম বাড়ছে ৩. ব্যবহারকারী স্থির এবং সুযোগ বাড়ছে। ৪. ব্যবহারকারী বাড়ছে এবং সুযোগও বাড়ছে। কিন্তু ব্যবহারকারীর চেয়ে বেশি।
এখানে শুধু অবস্থা বিশ্লেষণ করব এবং প্রথম অবস্থা বিশ্নেষণ করলে দেখা যায় যে, ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকারী সুযোগকে স্থির করে রাখে অথবা স্থির সুযোগের কারণে ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকারীর উন্নয়ন বা বিকাশ বা অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত বা স্থিমিত হয়ে যায়। তাহলে এক্ষেত্রে করণীয় কী? উপায় দুটি; হয় সুযোগের প্রাপ্যতার অনুযায়ী ব্যবহারকারী সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে অথবা সুযোগের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করতে হবে।
পরিবারে সকল চাহিদা পূরণ ও উন্নয়ন থেমে থাকবে যদি ব্যবহারকারীর সংখ্যার অনুপাতে বিদ্যমান সুযোগের পরিমাণ যত কম হবে অর্থাৎ দুটোর পার্থক্য যত বেশি হবে তার উপর নির্ভর করে।
পারিবারিক কাঠামো বা অবস্থা বিবেচনা করবে কোন পরিবারের জন্য কোনটি প্রযোজ্য?
ব্যবহারকারীর সংখ্যা: দ্রুত বাড়ছে? ধীরে বাড়ছে? সমানুপাতে বাড়ছে?
সুযোগ: দ্রুত বাড়ছে? ধীরে বাড়ছে? সমানুপাতে বাড়ছে?
উল্লেখিত দুটো চলকের সাদৃশ্য সম্পর্ককে বিবেচনা করতে হবে।
যেখানে ব্যবহারকারী দ্রুত বাড়ছে আর সুযোগ স্থির বা ধীরে বাড়ছে, সেখানে পারিবারিক কল্যাণের জন্য, উন্নয়নের জন্য, বিকাশের জন্য বা অগ্রগতির জন্য হয় ব্যবহারকারী নামক চলন্ত যানের গতি কমাতে হবে অথবা ‘সুযোগ’ নামক গজেন্দ্র গামিনীর গতি বৃদ্ধি করতে হবে। অথবা দুটোই একই সময়ে করতে হবে। ব্যবহারকারীর গতি কমানোর উপায় :
১। বিদ্যমান সুযোগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা, ২। উন্নয়ন চিন্তা, ভবিষ্যত অবস্থান নির্ধারণ করা এবং তৎপরতা বৃদ্ধি করা, ৩। শারীরিক ও মানসিক কল্যাণকে সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিণত করা, ৪। বুদ্ধিভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সংযুক্ত হওয়ার জন্য নিজেকে উপযোগী করে গড়ে তোলা।
সুযোগের ক্ষেত্র বৃদ্ধির উপায়:
১. নিজের সুযোগ যেন নিজে তৈরী করতে পারে সেভাবে যেন ব্যবহারকারী তৈরী করা, ২. সুযোগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা, ৩. যোগ্যতাভিত্তিক স্মার্ট সুযোগক্ষেত্র তৈরি করা।
কিন্তু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, দ্বিতীয়টার চেয়ে প্রথমটা অধিকতর সহজ। কিন্তু কেউ হয়তো বলবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সুযোগ বাধ্য হয়ে বৃদ্ধি পাবে। কেউ বলবে, ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ‘সুযোগ’ বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয় অথবা ‘সুযোগ’ ভোগ করা অপ্রতুল হয়। এখন খুজে বের করতে হবে ব্যবহারকারীর কোন অংশ ‘সুযোগ’ বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। অর্থাৎ বিশ্বমানের কোন উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনশীল উৎপাদক বৃদ্ধি ও তৈরী করা এবং তুলনামুলক অনুৎপাদনশীল বা কম উৎপাদনশীল উৎপাদককে সীমিত রেখে তাদের বিশ্বমানের উৎপাদনশীল উৎপাদক হিসাবে সক্ষম করে তোলা। সচেতন ও সতর্কতার সাথে এমন ভাবে করতে হবে যেন ভবিষ্যত উন্নয়ন, বিকাশ, বা অগ্রগতি বিশ্লেষণ করে এমন একটা ফলাফল পাওয়া যায় যেন ‘ সুযোগ’ তৈরী বা বৃদ্ধিতে এর কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।
অথবা এমন কতগুলো ব্যবহারকারী তৈরি করতে হবে-
১. যেখানে সংখ্যার তুলনায় উৎপাদন বেশি, ২. যেখানে নিজে ‘সুযোগ’ ভোগকরার পরও সুযোগ অবশিষ্ট থাকে। ৩. যে নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যের ‘সুযোগ’ তৈরি করতে পারে।
এখন পরিবারের দায়িত্ব হলো : ব্যবহারকারী সনাক্ত করা। সুযোগ নিশ্চিত করা। কাকে দিয়ে কোন সুযোগ উৎপাদন হতে পারে সেভাবে তাকে তৈরি করা এবং নিয়োজিত করা, উন্নয়ন পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়ন করা।
সময়োপযোগী করে উৎপাদনশীলতার বহুমুখী ক্ষেত্র তৈরি করা। পরিবারের লক্ষ্য হবে চক্রাকার উৎপাদনশীলতা তৈরির মাধ্যমে পরিবারের প্রত্যেক ব্যবহারকারীর চক্রাকার কল্যাণ নিশ্চিত করা। এর জন্য সমান এবং অসমান সক্ষমতা সম্পন্ন ব্যবহারকারী, উৎপাদন সক্ষম অথচ অগ্রাহ্য এমন ব্যবহারকারীকে একই সক্ষমতার মানদন্ডের প্লাটফর্মে নিয়ে আসা অর্থাৎ সক্ষমতার সমতা তৈরি করা।
সুযোগ, উপযোগ; ভোগ করা তৈরি করা ও বৃদ্ধি করার সামর্থ বা সক্ষমতাকে যদি শক্তি বলি আর এই শক্তির প্রায়োগিক ফল যদি অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হয় অর্থাৎ উন্নয়ন, বিকাশ, অগ্রগতি বা সমৃদ্ধি হয় তবে যেখানে বা যার কাছে শক্তি বেশি সেখানে বা তার কাছেই সমৃদ্ধি বেশি হবে।
কোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম হলেই যে সুযোগ তৈরি এবং বৃদ্ধির অনুকূল সহায়ক অবস্থা সৃষ্টি হবে বিষয়টি এমন নয়। আবার ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেই যে সুযোগ’ তৈরি হবে বা বৃদ্ধিতে প্রতিকুল প্রতিবন্ধক অবস্থা সৃষ্টি হবে বিষয়টি তা নয়। বিষয়টি নির্ভর করে ব্যবহারকারীর কতটুকু উৎপাদনশীল; তার উপর। অপেক্ষাকৃত কম শ্রম ও মেধা ব্যয় করে যদি অধিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে অধিক সুযোগ তৈরি হয় তার উপর।
এখন ‘সুযোগ’ তৈরির মাধ্যমে অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন আর অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে যদি উন্নয়ন, বিকাশ, অগ্রগতি বা সমৃদ্ধি হয়, তবে এরূপ অবস্থাকে এ বছরের বিশ্বজনসংখ্যা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় টহষবধংযরহম ঃযব ঢ়ড়বিৎ ড়ভ মবহফবৎ বয়ঁধষরঃু! টঢ়ষরভঃরহম ঃযব াড়রপবং ড়ভ ড়িসবহ ধহফ মরৎষং ঃড় ঁহষড়পশ ড়ঁৎ ড়িৎষফ’ং রহভরহরঃব ঢ়ড়ংংরনরষরঃরবং. যার বাংলা ভাবার্থ- ‘জেন্ডার সমতাই শক্তি; নারী ও কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণে হোক পৃথিবীর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন’-এর সাথে কিভাবে খাপ খাওয়ানো যায় তা একটু বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব।
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হলে ব্যবহারকারীকে উৎপাদক হিসাবে তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। উৎপাদনশীল হওয়ার সামর্থ্য যার আছে তাকে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিলে উৎপাদনশীলতা ব্যহত হতে পারে বা সুযোগ তৈরি বা বৃদ্ধি স্থিমিত থাকতে পারে। সক্ষম হওয়ার যোগ্যতা আছে এমন কাউকে যদি সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ, সমর্থন বা অনুকূল সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত না করা হয় অথবা সুযোগ তৈরীতে উৎপাদনে সক্ষমতা আছে এমন কাউকে যদি সুযোগ না দেওয়া হয় তবে উন্নয়ন, বিকাশ, অগ্রগতি বা সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নিজস্ব সক্ষমতা নামক চালিকা শক্তির অব্যবহারে উন্নয়ন বা অগ্রগতি কাংঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হবে না।
ব্যবহারকারী যেমন নিজে সুযোগ ব্যবহার করে তেমনি ‘সুযোগ’ তৈরী বা বৃদ্ধি করে ব্যবহারকারীর সক্ষমতা বা শক্তি যদি বৃদ্ধি করা যায় বা সক্ষম ব্যবহারকারী যদি তৈরি করা যায় তবে সুযোগও বৃদ্ধি করা যায়। সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে অর্জন বৃদ্ধি পায়, অর্জন বাড়লে সঞ্চয় বাড়ে, সঞ্চয় বাড়লে সুযোগ বাড়ে, সুযোগ বাড়লে বিনিয়োগ বাড়ে, বিনিয়োগ বাড়লে নতুন সুযোগ ক্ষেত্র বাড়ে, সুযোগ বাড়লে সক্ষমতা বাড়ে এভাবে চক্রাকারে চলতে চলতে সামগ্রিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। সামগ্রিক পরিবর্তন ‘ব্যবহারকারী’ এবং সময়ের একটা ‘আপেক্ষিক’। ব্যবহারকারী ও সময়ের তুলনায় পরিবর্তনের হার যেখানে বেশি সেখানেই কার্যকরী পরিবর্তন বেশি। অর্থাৎ কম ব্যবহারকারী দিয়ে কম সময়ে যেখানে পরিবর্তনের হার বেশি সেখানেই সক্ষমতা বেশি। এখানে দুটি বিষয় উল্লেখযোগ্য; গোষ্ঠী ব্যবহারকারীর অবস্থার গড় পরিবর্তন এবং একক ব্যবহারকারীর অবস্থার পরিবর্তন। গড় ব্যবহারকারীর অবস্থার পরিবর্তন দিয়ে সমগ্র ব্যবহারকারীর অবস্থা প্রতিফলিত হয় না। কিন্তু, একক ব্যবহারকারীর অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে যে গড় পরিবর্তন আসে সেটা পরিমাণে কম হলেও তুলনামুলকভাবে বেশি কার্যকর।
যদি কোন পরিবারে অনুৎপাদনশীল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি বা উৎপাদনের সক্ষমতা বা যোগ্যতা আছে এমন ব্যবহারকারীর ‘সুযোগ’ ব্যবহারের অভাব বেশি তবে সে পরিবারে উৎপাদনশীলতার শক্তি বা অবস্থার পরিবর্তনের সক্ষমতা বা শক্তি কম। এক্ষেত্রে যদি কোন পারিবারিক বৈষম্য থাকে তা দূর করে অনুৎপাদনশীল ব্যবহারকারীকে উৎপাদনশীল ব্যবহারকারীতে পরিণত করে অথবা উৎপাদনে সক্ষম বা যোগ্য ব্যবহারকারীকে ‘সুযোগ’ দিয়ে একটি ‘ভারসাম্য শক্তি’ তৈরি করতে হয়। এই ভারসাম্য শক্তি বা সমতার ফলে সক্ষমতা বা শক্তি বৃদ্ধি পেলে ব্যবহারকারী সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।। আর একক ব্যবহারকারী সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবারের অবস্থার বা কল্যাণ সাধিত হয়। সেক্ষেত্রে জেন্ডার সমতাই ‘শক্তি’ শব্দটি সমার্থক।
সমতা বলতে সকলকে একই বিষয়ে সমান করতে হবে ব্যাপারটা তা নয়। উৎপাদন ক্ষেত্রে যার দ্বারা যে প্রকার উৎপাদন করা সম্ভব হবে তাকে সেই উৎপাদন ক্ষেত্রে সুযোগ দিয়ে বা সেভাবে যোগ্য করে তার সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ যে মুরগী দ্বারা ডিম দেওয়া সম্ভব নয়, সেই মুরগীকে মাংস উৎপাদনকারী হিসাবে তৈরি করা। যে ফলজবৃক্ষের ফল প্রদানের ক্ষমতা নাই তাকে ফল প্রদানের জন্য সুযোগ দিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা না করে কাঠ উৎপাদনে সক্ষম করার সুযোগ দেওয়া।
মুক্ত উচ্চারণ হচ্ছে বাধাহীনভাবে প্রকাশ করা। কারো যুক্তিসঙ্গত প্রয়োজনীয়তা, ন্যায়সঙ্গত চাহিদা ও ন্যায্য অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণের শালীন তাগিদ। নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সুযোগের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণের বলিষ্ঠ দাবী। নিজের যোগ্যতা ও সক্ষমতা প্রকাশের অধিকার, অংশগ্রহণের অধিকার, অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্র সৃষ্টি বা ভূমিকা ও অবদান রাখার অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণের দাবী বা চাহিদা প্রকাশ। নিজের শারীরিক ও মানসিক ন্যায্য মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রয়োজনীয়তা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারা হচ্ছে মুক্ত উচ্চারণ।
সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে অনুৎপাদনশীলতার (অর্থনৈতিক মানদন্ডে) একটি বড় অংশ হিসাবে ধরে নেওয়া হয় নারী ও কন্যাশিশুকে। তার সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে: ১. অনুকূল পরিবেশ না দেওয়া ২. প্রকাশের স্বাধীনতা না দেওয়া ৩. যথাযথভাবে পরিমাপ করতে না পারা ৪. গুরুত্ব বা মূল্য না দেওয়া ৫. পরিবার হতে রাষ্ট্রের সকল স্তরে কৃত্রিম বৈষম্য।
কাজেই জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ; যার বেশিরভাগই অনুৎপাদনশীল অবস্থায় পড়ে আছে অথবা সক্ষমতা থাকতেও কেবল কৃত্রিম বৈষম্যের কারণে যেখানে পশ্চাদমুখীতা ও অগ্রগতির স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে; তাদের সক্ষমতা যদি বৃদ্ধি করা যায়, তাদেরকে যদি যোগ্য করে তোলা যায় অথবা সক্ষমতা বা যোগ্যতা অনুসারে যদি সুযোগ প্রদান করা হয় এবং ভারসাম্যহীন অবস্থার পরিবর্তনের জন্য অতিরিক্ত কিছু সুযোগ যোগ করে যদি সমতা বিধান করা হয় তবে তারা উৎপাদনশীলতায় সরাসরি অবদান বা ভূমিকা রাখতে পারবে যা একটি উন্নয়নশক্তি হিসাবে কাজ করে সামগ্রিক উন্নয়ন বা অগ্রগতির গতি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ত্বারক হিসাবে ভূমিকা রাখতে পারবে।
ফলে সামগ্রিক অবস্থা, যেমন একক আয় থেকে শুরু করে সামষ্টিক আয়,জীবনযাত্রার মান, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, সুযোগ ভোগ করার ক্ষমতা, সম্পদ ও সম্পত্তি অর্জন, ভোগ এবং স্বত্বাধিকারী, সুযোগ সৃষ্টির ক্ষমতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের একটা সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হবে।
এদিক থেকে বিচার করলে সমতা একটি শক্তি যা ভবিষ্যতের অফুরান সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে। যেহেতু ভবিষ্যত সম্ভাবনা অসীম বা অফুরন্ত সমতা নামক শক্তি সাথে নারী ও কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণের বলবর্ধক মিশিয়ে মিলিত যৌথ শক্তি দিয়ে তাদের অনুৎপাদনশীলতার শৃংঙ্খলকে ভেঙে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনশীল ব্যবহারকারী হিসাবে পরিণত করে, সেই অপার সম্ভাবনার দিকে সামগ্রিক উন্নয়নের যানবাহনকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সেদিক দিয়ে বিশ্ব জনসংখ্যাদিবস ২০২৩- এর প্রতিপাদ্য বিষয়টি যথার্থ সুদূরপ্রসারী ও স্মার্ট বলে বিবেচনা করা যায়।
লেখক : সহকারী পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা, সিলেট।