বৈরি জলবায়ুর কবলে কৃষি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২৩, ২:৩১:২৭ অপরাহ্ন
অন্যায়কারি তার দুষ্কর্মের রশিতেই বাঁধা পড়বে এবং একদিন না একদিন তাকে কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হবে। -হযরত সোলায়মান রা.
বৈরি জলবায়ুর কবলে পড়েছে কৃষি। চলতি মওসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় ফসল উৎপাদন বিঘিœত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। পানির অভাব পূরনে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। তাই বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। নিয়মিত বৃষ্টিপাতের অভাবে এ বছর জমিতে কীটপতঙ্গের আক্রমণের পরিমাণও বেড়েছে। ‘এল নিনো’র প্রভাবে এবার বৃষ্টিপাতের মাত্রা কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জলবায়ুর পরিবর্তন বা বৈরি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ইতোমধ্যেই পরিলক্ষিত হতে শুরু করেছে। পরিবেশে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। বিপর্যয় দেখা দিয়েছে কৃষিতে। জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার দেশে মে-জুনে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আর জুন ও জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে কৃষকেরা জমিতে পানি দিতে বিদ্যুৎচালিত সেচ ব্যবহার করছেন। ফলে উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে। জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে আউশ চাষ করতে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। গত মে মাসের শুরুতে তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে আউশ ধান এবং কাঁচা মরিচসহ গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাট চাষেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া, এবার এল নিনোর প্রভাবে জলবায়ুর অস্বাভাবিকতা বেড়ে গেছে। বিজ্ঞানিদের মতে, মধ্য ও পূর্ব গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার উষ্ণতার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি জলবায়ু প্যাটার্ন হচ্ছে এল নিনো। পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরেরে উপকূল বরাবর কোন কোন বছর এক প্রকার দক্ষিণমুখি উষ্ণ সমুদ্র স্রোতের প্রবাহ লক্ষ করা যায়, তাকে এল নিনো বলা হয়ে থাকে। প্রতি ২ থেকে ১০ বছর অন্তর এবং গড়ে প্রায় চার বছর অন্তর এল নিনোর আবির্ভাব হয়ে থাকে। এর প্রভাব প্রত্যেকবার সাধারণত ৯ থেকে ১২ মাস স্থায়ি হয়ে থাকে।
এটা ঠিক যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এখানে লাখ লাখ মানুষ নানা সময়ে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, দাবদাহ ও খরার মতো মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে কীভাবে কৃষি উৎপাদনসহ সার্বিক জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা যায়, সেটাই সবচেয়ে জরুরি। সর্বোপরি, জলবায়ু সহিষ্ণু ধানসহ অন্যান্য খাদ্যশস্য উদ্ভাবনের দিকেও জোর দিতে হবে।