শেষ হচ্ছে আগামীকাল
গাছপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর সিলেটের ‘বৃক্ষমেলা’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২৩, ৪:৩৭:৫৪ অপরাহ্ন
নূর আহমদ :
ফুল-ফল আর নানা ধরনের বৃক্ষরাজিতে সুশোভিত চারপাশ। এ যেন এক জায়গায় চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। এমন দৃশ্য সিলেট নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ১৫ দিনব্যাপী আয়োজিত বৃক্ষমেলার। এখন মেলার শেষমুর্হূত। আগামীকাল ২৭ জুলাই শেষ হবে মেলা। শেষমুহূর্তে গাছপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর মেলাপ্রাঙ্গণ। তবে, দোকান মালিকরা বলেছেন বেচা বিক্রি অন্যবছরের তুলনায় কম। মেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই মেলার ১২তম দিন পর্যন্ত ৫৮ লক্ষাধিক টাকার চারা বিক্রি হয়েছে। যার মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বন বিভাগ সিলেট এই বৃক্ষমেলার আয়োজন করে। বৃক্ষ মেলা চলবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত।
সরেজমিনে মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের অর্ধেক জায়গাজুড়ে বসেছে এই মেলা। সিলেট বন বিভাগের তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা গেল, এবারের মেলায় রয়েছে সর্বমোট ৫০টি স্টল। ২৩টি নার্সারিকে ৪০টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। অভ্যর্থনা কেন্দ্রসহ নিরাপত্তা কেন্দ্রও রয়েছে মেলায়।
ভেতরে প্রবেশ করে দুই দিকে চলে গেছে দুটি পথ। বাম দিকে গেলেই রয়েছে মেলায় আগত ভিআইপিদের জন্য অভ্যর্থনা স্থান। এরপর রয়েছে বন বিভাগের প্রদর্শনী স্টল। যেখানে রাতারগুলের দৃশ্য প্রাকৃতিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর যেতে যেতে হারিয়ে যাবেন সবুজের সমারোহে। চোখে পড়বে অপরূপ সুন্দর সব গাছগাছালি। শুধু গাছ নয়, তাতে ফলেছে নানা জাতের ফুল ও ফল। আম, জামরুল, লিচু, বেদানা, কমলা, কামরাঙা, এলাচি, করমচা, লটকন, নাশপাতি, ডেউয়া, আঙুর, কমলালেবু, মরিচসহ বিভিন্ন জাতের গাছ শোভা পাচ্ছে স্টলে। ফলের গাছের পাশে সুবাস ছড়াচ্ছে অভিজাত সব ফুলগাছ। আছে নানা জাতের সৌন্দর্যবর্ধক বৃক্ষ।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বৃক্ষপ্রেমীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ছাদে কিংবা বারান্দায় টবে বা ড্রামে লাগানো যায় এমন চারা দিয়ে সাজানো হয়েছে স্টলগুলো। মেলায় শুধু গাছ নয়, পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকম পণ্য। গাছগাছালি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার জন্য পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের টব ও শো পিস। মাটির টব যেমন আছে, তেমনি আছে কাঠ, প্লাস্টিক ও বাঁশের নানা আকার ও নকশার টব। আরো আছে ঝুলন্ত টব। এছাড়া আছে নানান সবজির গাছ ও চারা। সার, বীজ, কীটনাশকসহ গাছগাছালির যতœ নেওয়ার নানা উপকরণও বাদ পড়েনি।
সিলেট শহরতলীর খাদিমনগর ইউনিয়নের চাতলীবন্দ গ্রামে অবস্থান জালালীয়া নার্সারির। বরাবরের মতো এই নার্সারির মালিক তরুণ উদ্যোক্তা আমির আলী স্টল দিয়েছেন মেলায়। তিনি জানান, স্টলে সাধারণত নির্দিষ্ট সংখ্যক গাছ নিয়ে আসা হয়। ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে গাছ স্টলে তোলা হয়। তিনি জানান, ফলদ, বনজ গাছের পাশাপাশি ক্যাকটাস, অর্কিড, নানা জাতের পাতাবাহার, ফুল ও আলংকরিক চারা পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। অন্যবছর একটি স্টল নিলেও এবার তিনি দুটি স্টল নিয়ে বসেছেন। আমির আলীর ভাষ্য, মেলার শুরুর দিকে ক্রেতা সমাগম বেশি ছিলো। আজ ও কাল অধিক সংখ্যক বৃক্ষপ্রেমীর আগমনে মেলাপ্রাঙ্গণ আবার সরব হয়ে উঠবে বলে তার ধারণা।
মেলায় এসেছিলেন নগরীর শাহজালার উপশহরের গৃহিণী রোকাসানা বেগম। বাড়ির ছাদে বাগান আছে তাঁর। বাগানের জন্যই তিনি কিনলেন আম্রপালি, পালমার, হিমসাগরসহ কয়েক জাতের আমগাছ। এছাড়া কিছু ওষধি গাছও কিনেছেন। তিনি জানান, ছাদ বেশি বড় না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও কিনতে পারছেন না।
দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বিকেলে বৃক্ষমেলায় ঘুরতে এসেছেন কলেজ শিক্ষক হেলাল আহমদ। তিনি জানালেন, মেলা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরজন্য গাছ পছন্দ করে রাখছেন। কাল বাসায় নিয়ে যাবেন। ছাদে বাগান করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। তার সন্তানরা ফুলের প্রতি দুর্বল বেশি। তাই ছাদে ফুলের গাছই বেশি কিনবেন।
মেলায় ডান দিকে প্রবেশ করলেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পেরিয়ে সিলেট নার্সারির স্টল। এই নার্সারির কর্মচারী জানালেন, তাদের নার্সারিতে রেড লাভেরি আমের গাছ রয়েছে। যেটি সবচেয়ে বেশি দামি। যার দাম হাকা হচ্ছে ১ লাখ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য প্রজাতির গাছ রয়েছে তাদের স্টলে।
অর্কিড নার্সারির মুজিবুর রহমান জানালেন, ফলদ, বনজ, ফুল ও ঔষধি গাছের চারা রয়েছে তাদের স্টলে। এ ছাড়া নানা ধরনের অর্কিড, বনসাই ও ঘর-বারান্দার শোভাবর্ধনকারী চারাও আছে প্রচুর।
সুগন্ধা নার্সারির দেলোয়ার জানান, তাদের নার্সারির অন্যতম আকর্ষণ ক্যান্সার রোগের ঔষধি ননী ফলের গাছের চারা। ননী ফল ধরেছে এমন পর্যাপ্ত গাছ রয়েছে তাদের। কালো ডালিম, লাল তিনসহ দুষ্প্রাপ্য গাছও রয়েছে এ নার্সারিতে।
সিলেট এগ্রো হাউজের এম এ আব্দুল্লাহ জানান, তাদের স্টলেও দামি দামি গাছের চারা বিক্রি হয়ে গেছে। এখন সৌন্দর্য বর্ধন এর গাছ বেশি বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় স্টলদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- গোলাপগঞ্জের তুরুকভাগ এর আফজাল নার্সারি, পীরের বাজারের সবুজবন নার্সারি, দক্ষিণ সুরমার জালালপুরের আনন্দ নার্সারি, খাদিম সুরমা গেইটের সুহান নার্সারি, জৈন্তাপুরের ঘাটেরচটির তানজিনা নার্সারি, দাসপাড়ার সিলেট এগ্রো হাউজ, খাদিম নগর ইউনিয়নের চাতলীবন্দ জালালীয়া নার্সারি, দাড়িয়াপাড়ার সিলেট নার্সারি, সিলেট এগ্রো ফার্ম, জৈন্তাপুরের চিকনাগুলের সুগন্ধা নার্সারি, মেজরটিলার ইসলামপুরের অর্কিড নার্সারি, মিরের চক এর শামীম নার্সারি, এয়ারপোর্ট রোর্ডের মালঞ্চ নার্সারি, খিদিরপুরের নূরে মদীনা নার্সারি, গোলাপগঞ্জের জিসান এন্ড জিহান নার্সারি, দাড়িয়াপাড়ার এগ্রোসিল নার্সারি, ছাতকের সাজানো বাগান নার্সারি, ভাই ভাই নার্সারি, জননী নার্সারি, শ্যামল উদ্যান, সুফলা নার্সারি, নাঈমা নার্সারির স্টল রয়েছে মেলায়। এছাড়াও রয়েছে আচার ও ফুচকার স্টল।
সিলেট নার্সারি মালিক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি দাড়িয়া পাড়ার এগ্রোসিল নার্সারির মালিক মোঃ আলমগীর আহমদ জানান, মেলার শুরুর দিকে ক্রেতা ও দর্শনার্থী সমাগম ঘটছে। কিন্তু ব্যবসা খুব একটা ভালো হয়নি। তিনি জানান, তার নার্সারিতে অন্যান্য গাছগাছালির সাথে থাই শরিফা গাছ রয়েছে। এছাড়া কাটা ছাড়া লেবু, ভিয়েতনামি মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা রয়েছে।
মেলার তদারকির জন্য বন বিভাগের একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে। গতকাল দুপুরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের প্রতিদিন চারা বিক্রির তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। ফরেস্ট গার্ড বদরুল ইসলামের সহায়তায় তালিকা দেখে জানা যায়, ২৪ জুলাই সোমবার পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৮ হাজার ২শ ২৬ টাকার চারা বিক্রি হয়েছে। ফলদ, বনজ, ওষধী ও শোভাবর্ধন মিলিয়ে সর্বমোট ৮৬ হাজার ৫৩টি চারা বিক্রি হয়। আরো ৩ দিনে প্রায় কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামীকাল ২৭ জুলাই পর্যন্ত মেলা চলবে।