কোম্পানীগঞ্জে একের পর এক সরকারি স্কুলে চুরি নৈশপ্রহরী নেই ৪১ স্কুলে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২৩, ৫:৩৭:০৪ অপরাহ্ন
আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে একের পর এক সরকারি প্রাইমারি স্কুলে চুরি সংঘটিত হচ্ছে। এসব স্কুল থেকে পানির পাম্প, ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ স্কুলের মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। গত সোমবার রাতে উপজেলার ভোলাগঞ্জ রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সর্বশেষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এদিন ওই স্কুলের দুটি পানির পাম্প চুরি হয় বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণব রঞ্জন মোহন্ত জানান, সোমবার রাতের অন্ধকারে খাঁচা ভেঙে স্কুলের দুইটি পানির পাম্প চোরেরা নিয়ে যায়। ঘটনাটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। স্কুলটিতে দীর্ঘদিন ধরে নৈশপ্রহরীর পদ শূন্য বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আগের চেয়ে এলাকায় চুরি বেড়ে গেছে। এলাকার এক শ্রেণির মানুষ মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তারাই এসব করে বেড়াচ্ছে।
ভোলাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোবেদা বেগম জানান, কয়েক মাসের ব্যবধানে স্কুলে তিনবার চুরি সংঘটিত হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ জুন একটি পানির পাম্প চুরি যায়।
এর আগেও চোর এ স্কুল থেকে একটি পানির পাম্প ও পতাকা-স্ট্যান্ড চুরি করে নিয়ে গেছে। ঘটনাগুলো থানায় জানানো হলেও পুলিশ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তৈমুরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম জানান, গত ২৫ মার্চ স্কুলের একটি পানির পাম্প চুরি হয়। পরে আরেকটা কিনেছি, সেটাও চুরি করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় চুরির মামলা নিতে চায়নি পুলিশ। তাই মামলা হয়নি।
টুকেরবাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলারা বেগম জানান, গত ২৬ জুন স্কুলের কলাপসিবল গেইট চুরি যায়। এর আগেও একবার গেইট চুরি হয়। পরে অনুসন্ধান করে তৈমুরনগর এলাকায় পাওয়া যায়। বছর দুয়েক আগে পানির পাম্প চুরি হয়।
ঢালারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহিমা জানান, সম্প্রতি স্কুলের ফ্যান চুরি হয়েছে। এর আগে পানির পাম্প চুরি হয়েছে। এছাড়া, স্কুলের আঙিনায় প্রতিরাতে মদ-জুয়ার আসর বসে বলে যোগ করেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, স্কুলের আঙিনায় প্রায়ই মদের বোতল পাওয়া যায়। একবার পানির ট্যাংক ভেঙে তাতে প্র¯্রাব করে দেয় কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক।
তবে, এ বিষয়ে ভিন্ন কথা বলেন স্কুলের সভাপতি এডভোকেট ইসরাফিল আলী। তিনি বলেন, স্কুলটির বাউন্ডারি ওয়াল এবং গেইট নেই। এ সুযোগে পোলাপানেরা স্কুলের মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট করে। কিন্তু স্কুলে মদ-জুয়ার কোন আসর বসে বলে আমার জানা নেই।
পাড়ুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে স্কুলের প্রিন্টার চুরি যায়। এর আগে কয়েকটি ফ্যান চুরি হয়েছিল।
বর্নি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতিশ চন্দ্র দাস বলেন, গত ১৮ মে স্কুলে চুরির ঘটনা ঘটে। অফিস কক্ষের তালা ভেঙে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং একটি ল্যাপটপ নিয়ে যায় চোর। পরে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসির হস্তক্ষেপে এগুলো ফেরত পাওয়া যায়। ওসি সাহেব এলাকার সাসপেক্টিভ চোরদের ডেকে শাসালে তারা ফেরত দেয়। চুরি সংঘটিত হওয়ার সময় নৈশপ্রহরী স্কুলে ছিল না বলে জানান তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং জানুয়ারিতে মহিষখেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পানির পাম্প চুরি যায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এছাড়া, বছর দুয়েক আগে জালিয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ চুরি হয় বলে জানান প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ।
এদিকে, নৈশপ্রহরী না থাকায় স্কুলগুলোর নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তন্মধ্যে ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরীর পদ শূন্য রয়েছে। নৈশপ্রহরী না থাকায় স্কুলে ঘটছে চুরির ঘটনা। চুরি হওয়া স্কুলগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র পাড়ুয়া এবং বর্নি স্কুলে নৈশপ্রহরী আছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহিদুল ইসলাম বলেন, কোম্পানীগঞ্জের স্কুলগুলোতে নিয়মিত চুরি সংঘটিত হচ্ছে। ল্যাপটপ, পানির পাম্প, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ স্কুলের মূল্যবান সামগ্রী চোরেরা নিয়ে যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চুরির বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। তিনি আরও বলেন, কোম্পানীগঞ্জের ৪১টি বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী নেই। বর্তমানে সরকারের তরফ থেকে নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি হিল্লোল রায় বলেন, স্কুলে চুরির ঘটনায় কেউ বাদী হতে চায় না। সবাই জিডি করতে চায়। ভোলাগঞ্জ রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য ঘটনাগুলোও নিয়েও আমরা কাজ করব।