ঢাকায় দুই দলের সমাবেশই এক দিন পেছাল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০২৩, ৪:৩৪:০৭ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক ঃ কাঙ্খিত স্থানে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ার পর বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো নিজ নিজ সমাবেশের দিন পিছিয়ে দিয়েছে।
বিএনপি জানিয়েছে, তারা আগামীকাল শুক্রবার নয়া পল্টনে সমাবেশ করবে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষে যুবলীগ জানিয়েছে, তারাও আগামীকাল শুক্রবার সমাবেশ করবে শেরে বাংলানগরে মেলার মাঠে।
এই দুই পক্ষই আজ বৃহস্পতিবার সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে কার্যদিবসে জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ তাদের অনুমতি দিচ্ছিল না।
গতকাল বুধবার রাতে দুই পক্ষই তাদের কর্মসূচি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পিছিয়ে নেওয়ার পর পুলিশের পদক্ষেপ জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “তারা আমাদের এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। আমরা এখনও কিছু জানি না।”
পুলিশ এখনও কাউকে অনুমতি দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবর্তিত দিনে কর্মসূচি পালন করতে চাইলে দুই পক্ষকেই নতুন করে আবেদন করতে হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ‘মহাসমাবেশ’ করার ঘোষণা আগে দিয়েছিল বিএনপি, যারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে এক দফার আন্দোলনে রয়েছে।
এরপর যুবলীগও তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পিছিয়ে বৃহস্পতিবার নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপির ‘অরাজকতা’ সৃষ্টির চেষ্টা ঠেকাতে তারা মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরে যুবলীগের সঙ্গে ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগও কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে জানায়, বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকে তারা দিনভর ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে।
অন্যদিকে, বিএনপি নয়া পল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে এগোতে থাকে। সেখানে না হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বিকল্প স্থান হিসেবে দেখায় তারা।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণায় পুলিশ কাউকেই অনুমতি দিচ্ছিল না। গতকাল বুধবার দুপুরে ডিএমপি কমিশনার ওই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার যেহেতু কর্মদিবস, সে কারণে নয়া পল্টন কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিতে চান না তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন জানান, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকেও অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয় পুলিশ, যদিও তাতে দলটির মত ছিল না। তেমনি যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগও বিকল্প স্থান দেখতে থাকে।
জনভোগান্তি সৃষ্টি করে একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পুলিশকে এ ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাববেন বলে হুঁশিয়ার করেন ডিএমপি কমিশনার।
নয়া পল্টনে শুক্রবার, নতুন সিদ্ধান্ত বিএনপির
লিখিত অনুমতি চেয়েও পুলিশের সায় না পাওয়ায় বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা, যাতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক শেষে রাতে অনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তারা সমাবেশের দিন একদিন পিছিয়েছেন।
তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আজ ২৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে আগামীকাল ২৮ জুলাই শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেলা ২টায় নয়া পল্টনে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিচ্ছে।”
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও নয়া পল্টনে সমাবেশ করতে দিতে পুলিশের আপত্তির প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “ইতিপূর্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও কর্মদিবসে নয়া পল্টনে অসংখ্য সমাবেশ-মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের দৃষ্টান্ত রয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপির সমাবেশের দিন পেছানোর সিদ্ধান্ত জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার আর কোনো বাধা সৃষ্টি করা হবে না- এমন প্রত্যাশা রেখে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে সরকার কিংবা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বাধা সৃষ্টি করবে না।”
সেই সঙ্গে সরকারকে হুঁশিয়ার করে ফখরুল বলেন, “আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত যে কোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার যে কোনো অপচেষ্টা দেশবাসী প্রকৃত পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি হিসাবেই দেখবে এবং এমন অপচেষ্টা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টিকারী হিসাবে গণ্য হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্ল¬াহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, পিপলস পার্টি, এলডিপি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া), বাংলাদেশ গণঅধিকার (নূর) , এবি পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) নিজ নিজ সমাবেশ একদিন পিছিয়েছে।
বাণিজ্য মেলা মাঠে, জানাল যুবলীগঃ
বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে অনুমতি না পেয়ে বৃহস্পতিবার সমাবেশের জন্য ঢাকা মহানগর নাট্য মঞ্চ কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ বিকল্প স্থান হিসেবে ভাবনায় ছিল আওয়ামী লীগের যুব সংগঠনগুলোর নেতাদের।
তবে বিএনপি সমাবেশের দিন পিছিয়ে দেওয়ার পর যোগাযোগ করা হলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল বলেন, “বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে শান্তি সমাবেশ করতে আমাদের মৌখিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম।
“এখন আমরা শুক্রবার বিকাল ৩টায় সমাবেশ করব, আর সেটার জন্য পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠ ভেন্যু ঠিক করেছি।”
এই যৌথ সংবাদ সম্মেলন থেকে বৃহস্পতিবার ‘শান্তি সমাবেশের’ ঘোষণা দিয়েছিল যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
যুবলীগের ঢাকা বিভাগীয় ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল গত সোমবার। বিএনপি সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর তা পিছিয়ে বৃহস্পতিবার নেওয়া হয়েছিল। পরে অন্য দুটি সংগঠন যুক্ত হয়ে কর্মসূচির নাম হয় ‘শান্তি সমাবেশ’।
বিএনপির সমাবেশের দিন কর্মসূচি রেখে আওয়ামী লীগ সংঘাত বাঁধানোর পাঁয়তারা করছে বলে ফখরুল অভিযোগ করেছিলেন।
অন্যদিকে, যুবলীগ নেতা নিখিল বলেছিলেন, “মূলত রাজধানীতে যাতে কোনো ধরনের অরাজকতা না হয়, সেজন্যই আমরা তারিখ পরিবর্তন করেছি।”
উৎকণ্ঠার আপাত অবসান ঃ
সপ্তাহখানেক আগে ঢাকায় দুই প্রধান দলের পাল্টপাল্টি কর্মসূচিতে যানজটে নাকাল হতে হয়েছিল রাজধানীবাসীকে। আবারও একদিনে তাদের কর্মসূচি দেওয়ায় যানজটের পাশাপাশি সংঘাতের শঙ্কাও জেগেছিল।
মালয়েশিয়ায় যেতে ভিসার কাজে কক্সবাজার থেকে আসা মো. সোহেল বলেন, “এখন ঢাকায় থাকতে খুবই ভয় লাগছে। একই দিনে দুই দলের জনসভার ঘোষণায় আমার পরিবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছে। আমাকে বারবার ফোন করে চলে যেতে বলছে।”
ঢাকার বসবাসরত বেসরকারি চাকরিজীবী আওলাদ হোসেনকে পুরান ঢাকা থেকে প্রতিদিন কর্মস্থল গুলশানে যাতায়াত করতে হয়। তিনি বলেন, “বাসা থেকে বের হয়ে প্রতিদিন একাধিকবার বাস বদলে যেতে হয় গুলশানে। আমাদের তো প্রাইভেট অফিস, না গেলেই ঝামেলা তৈরি হয়। দুই দলের মিছিল-মিটিং এর কথা শুনলেই তো ভয় লাগে, না জানি কী হয়? অফিসের সবাই বলাবলি করছিল, কীভাবে বৃহস্পতিবার অফিসে যাব।”
ঢাকায় নিজের মোটরসাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ার সেবা দেওয়া সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “মিটিং হলে যানজট তৈরি হয় সব খানে। আগেও এরকম দিনে রাইড দিতে না পারায় ইনকাম ৫০০ টাকাও হয়নি। এখন মিটিং মানেই আমাদের ইনকাম না হওয়া।”
এই অবস্থায় দুই দল সমাবেশ ছুটির দিতে নেওয়াকে ‘প্রশংসনীয়’ বলে মন্তব্য করেন পর্যবেক্ষক ও আব্দুল আলীম।