পাহাড়-পর্বত সুরক্ষা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০২৩, ৪:৩৯:১৪ অপরাহ্ন
ক্ষমতাপ্রাপ্ত রাজপুরুষের অত্যাচার ও বিচারাসনে বসিয়া বিচারকের অবিচারের মতো মন্দ কর্ম আর নেই। -হযরত আলি রা.
পাহাড়-পর্বত সুরক্ষা হয়নি। ইতোপূর্বে এ-ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলো সরকার। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। বছর পাঁচেক আগে পাহাড় রক্ষা ও পাহাড় ধস প্রতিরোধের লক্ষে পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রীসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বলা হয়- পাহাড়ের পাদদেশে কোন জনবসতি গড়ে তোলা যাবে না। বিদ্যমান বসতি জরুরি ভিত্তিতে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। ভবিষ্যতে কোন পাহাড়ে যাতে বসতি গড়ে উঠতে না পারে, সে জন্য পাহাড়ের পাদদেশে নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণ করা হবে। পাহাড়ের পানি নিচে নামার জন্য ড্রেন নির্মাণেরও পরিকল্পনা ছিলো।
বিষয়টি আলোচনায় আসে বর্ষা মওসুম এলেই। আর বর্ষা চলে গেলে এ নিয়ে আর কেউ কিছু বলে না। পাহাড়ি এলাকায় বর্ষা মওসুমের বিপর্যয় হচ্ছে পাহাড় ধস। প্রায় প্রতি বছরই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে এবং মাটিচাপা পড়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। প্রতিটি ঘটনার পরই টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। কিছু দিন এ নিয়ে বলাবলি হয়; পরবর্তীতে সবাই যে যার মতো। বলা হয়, অতিবৃষ্টির কারণে ঘটে পাহাড় ধস। কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে টিকে থাকা পাহাড়-পর্বতগুলো অতিবৃষ্টির কারণে কখনও ধসে পড়েনি। যদিও অতিবৃষ্টি অতীতেও হয়েছে। বলা যায়, বর্তমানের চেয়ে অনেকগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে অতীতে পাহাড়ি এলাকায়। তাই সাম্প্রতিক পাহাড় ধস কেবল অতিবৃষ্টির জন্য নয়, আরও অনেক কারণে আছে। যেমন- পাহাড় কাটা হচ্ছে অবাধে। আবার পাহাড়-টিলার নিচে নির্মিত হচ্ছে ঘর-বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা। মাটি কেটে ঘর-বাড়ি নির্মাণ এবং মাটি কেটে বিক্রি করায় দুর্বল হয়ে পড়ে পাহাড়ের ভিত। সেই সঙ্গে পাহাড়-টিলায় আচ্ছাদিত বৃক্ষরাজি কেটে নেয়া হচ্ছে। ন্যাড়া পাহাড়-টিলায় অতিবৃষ্টি হলে সহজেই ধসে পড়ে মাটি।
পাহাড়-পর্বতকে আখ্যায়িত করা হয়েছে ভূমির ‘খুঁটি’ হিসেবে। কারণ ভূমির ভারসাম্য রক্ষা করে পাহাড়-পর্বত। আমাদের দেশে পাহাড়-পর্বত-টিলা কাটা আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইন মানছে না কেউ। দিন দুপুরে পাহাড়-টিলার মাটি কেটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা।এই সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে তা সংশোধন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রেখে নতুন আইন করতে হবে। তাছাড়া, পাহাড়ে পর্যটনের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু এর জন্য সুনির্দিষ্ট কোন সুরক্ষা নীতিমালা বা প্রাথমিক কোন পাহাড়ি-পর্যটন শিক্ষা নেই। স্রেফ মুনাফার জন্য এসব পাহাড়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। যা পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্র, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড় সুরক্ষায় পাহাড়বান্ধব পর্যটন বিকাশ জরুরি। যার জন্য দরকার জাতীয় পাহাড় সুরক্ষা নীতি।