বনমোরগের বুদ্ধি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০২৩, ৪:৪৫:০৩ অপরাহ্ন
আশরাফ আলী চারু
ঝড়ের পূর্বাভাস দেখে বনমোরগ সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলো। তেমনি ভয় পেল স্বপ্নডানার চিলও। ভেবে চিন্তে কোন কূল কিনারা না পেয়ে চিল তার ডানা ছড়িয়ে বাঁচার কৌশল রপ্ত করতে লাগলো। বন মোরগ ভাবলো- চিলের বড় ডানা মেলে ঝড়ের কবল হতে বাঁচার সমূহ সম্ভাবনা থাকলেও আমাদের বেলায় সেটা বেমানান। তাই পরিবারের সবাইকে ডেকে বললো, আজ রাতে ভীষণ ঝড় হতে পারে। ঝড়ের কারনে গাছের ডালপালা ভেঙে পড়তে পারে। তাই আজ রাতে গাছে থাকা আমাদের জন্য সমীচীন হবে বলে মনে হচ্ছে না। চলো আমরা পাহাড়ের কোনো গর্তে রাত্রিযাপন করি।
সূর্য তখনও ডুবেনি। বন মোরগের কথা মত পরিবারের সবাই নেমে পড়ল গাছ হতে। তারা পাহাড়ের এক গর্তে গেল আশ্রয় নিতে। তারা জানতো না গর্তে থাকত অজগর। তারা যেইমাত্র গর্তে ঢুকল ওমনি তেড়ে এলো অজগর। বললো- আজ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি ! কতটা দিন গাছের ডালের দিকে তাকিয়ে থাকি একটা মোরগ খাব বলে, আজ দেখি পরিবারসহ আমার বাসায় ! আজ তোদের মজা করে খাব আমি, এই বলে হে হে হে করে হাসতে লাগলো অজগর। এমন অবস্থা দেখে বন মোরগ বুদ্ধি খাটিয়ে বললো- অজগর মামা, বাইরে তাকিয়ে দেখও আকাশ কতটা অন্ধকার। আর অন্ধকার হবেই না কেন ? বের হয়ে দেখও চিল তার বড় বড় দুই ডানা মেলে সূর্যটা ঢেকে রেখেছে। কেন এমন করেছে জানও? তার ইচ্ছে তোমাকে আলোর মুখ দেখতে দেবে না।
বনমোরগের কথা শুনে অজগর মাথা বের করে তাকিয়ে দেখলো বন মোরগ মিথ্যে বলেনি। সত্যিসত্যিই তো চিলটা তার পাখা মেলে আছে! বন মোরগকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো-তোর কথাইতো ঠিক!
-শুধু ওটুকুই না অজগর মামা, তুমি না-কি ভীতুর ডিম গর্ত হতে বের হওয়ার সাহসও পাওনা?
-কী? এতবড় কথা! আমাকে দেখে বনের রাজাও ভয় পায় আর সামান্য একটা চিল কি না? আমি তাকে দেখে ছাড়ব এই বলে সে ফুসফুস করতে করতে বের হয়ে পড়লো গর্ত হতে। ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে চিলকে উদ্দেশ্য করে বললো- আমি তোকে দেখে ছাড়বো। এই বলে দ্রুত এগিয়ে যেতে লাগলো- চিল যে গাছে বসে আছে সে গাছের দিকে। চিল আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। তবে এটুকু বুঝতে পারলো অজগর রাগ করে তার দিকে তেড়ে আসছে। সে বিনয়ের সাথে অজগরকে বললো- মামা, আমার উপর রেগেছো কেন?
-রাগবো না কেন? তোর এতবড় সাহস পাখা মেলে সূর্য আড়াল করে রেখে আমার গর্তের মুখে আলো পৌঁছাতে বাঁধা দিস। আবার বড়বড় কথা বলিস আমি না-কি ভীতুর ডিম? আমাকে দেখে যেখানে স্বয়ং পশুরাজ ভয় পায় আর তুই কিনা সামান্য চিল! আমি আজ তোকে ছাড়ব ভেবেছিস?
চিল এতক্ষণে বুঝতে পারলো এটা বন মোরগের চাল। সে অজগরকে আসল বিষয় বুঝাতে চেষ্টা করলো। সে বুঝাতে চায়লো বন মোরগ তাকে ভুল বুঝিয়েছে। মিথ্যা বলেছে।
কিন্ত অজগর কি শুনে সে কথা; সে নিজের চোখে দেখেছে চিল তার পাখা মেলে বসে আছে সূর্যটা আড়াল করে। সে আরও রেগে গেলো চিলের কথায়।
ইতিমধ্যে ঝড় বইতে শুরু করলো। সাথে প্রচ- বৃষ্টি। ঝড়ো ঝড় আর প্রবল এই বর্ষণের সময় চিল তার পাখা মেলে ভারসাম্য ধরে রাখলো । ওদিকে বন মোরগ তার পরিবার নিয়ে গর্তে ঢুকে রক্ষা পেল। কিন্ত কপট অজগর নিজেকে বাঁচাতে পারলোনা। সে ভেসে গেল বর্ষণের প্রবল স্রোতধারায়।